Q. Write a note on the art & architecture of early medieval India.
ভারতে মন্দির, প্রাসাদ, দুর্গ, স্মৃতিসৌধ ইত্যাদি নির্মাণে একটি বিশিষ্ট শৈলী অনুসরণ করা হয়েছে। ভারতের শিল্পশাস্ত্রে তিনটি রীতির কথা আছে—নাগর, দ্রাবিড় ও বেসর। হিমালয় থেকে বিন্ধ্য এই অঞ্চলে প্রচলিত ছিল নাগর রীতি, কন্যাকুমারীতে ছিল দ্রাবিড় রীতি এবং বিন্ধ্য থেকে কৃষ্ণা নদীর মধ্যবর্তী স্থলে ছিল কৃষ্ণা থেকে বেসর রীতি। এই অঞ্চলে রীতিটি চালুক্য রীতি নামেও পরিচিতি লাভ করে। নাগর রীতির সবচেয়ে বড়ো বৈশিষ্ট্য হল ক্রুশের মতো চতুষ্কোণ বিশিষ্ট পরিকল্পনা এবং শিখর ।
উত্তরপ্রদেশের দেওগড়ের দশাবতার মন্দির এবং ভিতরগাঁও মন্দিরে এই শিল্পশৈলীর নিদর্শন পাওয়া যায়। অষ্টম শতক নাগাদ এই নাগর শৈলী তার পূর্ণ পরিণত রূপ লাভ করেছিল। এই রীতির সূচনা হয়েছিল গুপ্তযুগের শেষদিকে। দক্ষিণ ভারতের শিল্পরীতি হল পিরামিডাকৃতি গঠন এবং সূক্ষ্ম চূড়া। মন্দিরের মধ্যে অবশ্যই থাকবে গর্ভগৃহ, প্রদক্ষিণ চত্বর, বিমান ও স্তুপী। এই দুই রীতির মিশ্ররূপ হল বেসর। ভারতের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে ছিল নাগর শৈলী। উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে বিজাপুর, পশ্চিমে পাঞ্জাব থেকে পূর্বে বাংলা পর্যন্ত এই রীতিতে স্থাপত্য শিল্প গড়ে উঠেছিল। মন্দিরময় ওড়িশা হল মন্দির স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন । এখানে নাগর রীতির বিশুদ্ধ রূপের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। এখানে মন্দিরের চারটি অংশ পিষ্ট, বাড়, গণ্ডি ও মস্তক, গর্ভগৃহ ও জগমোহন এইভাবে বিভক্ত। অনেক মন্দির রথের আকৃতি বিশিষ্ট। ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দির হল ওড়িশা রীতির পরিণত রূপ। লিঙ্গরাজ মন্দিরের আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল এর সুউচ্চ দেউল।
সুবিখ্যাত পুরীর জগন্নাথ মন্দির আয়তনে বিশাল এবং লিঙ্গরাজের শিল্পরীতিতে নির্মিত।
ওড়িশা রীতির চারটি বৈশিষ্ট্য এতে পাওয়া যায়। কোনারকের সূর্য মন্দির একটি সাত ঘোড়ায়
টানা রথের মডেলে তৈরি করা হয়েছে। মন্দির গাত্রে অসংখ্য ভাস্কর্য দিয়ে অলংকৃত করা
হয়েছে, জীবজন্তু, গাছপালা, ইত্যাদির সঙ্গে নরনারীর প্রেমও বাদ যায়নি। সবকিছু স্বাভাবিকভাবে
স্থান পেয়েছে, কোথাও কিছু আরোপিত নয়, সবকিছু স্বাভাবিক। নাগর রীতির সম্প্রসারণ ঘটেছিল
মধ্য ভারতে, সিরপুরের লক্ষ্মণ মন্দির, গোয়ালিয়রের মন্দির এবং মহাদেব মন্দিরে এই রীতির
নিদর্শন আছে। গর্ভগৃহ, মণ্ডপ ও অন্তরাল এই তিন অংশ নিয়ে মন্দির স্থাপত্য গড়ে উঠেছে।
নর্মদা, শোন ও মহানদীর উৎপত্তিস্থলে অমরকণ্টকে অনেকগুলি সুন্দর সুন্দর মন্দির আছে।
অমরকণ্টক মন্দিরের সমগোত্রীয় হল সোহাগপুরের বিরাটেশ্বর শিব মন্দির।
দশম
শতকে নির্মিত হয়েছে চান্দেল্ল রাজাদের সুবিখ্যাত খাজুরাহো মন্দিরগুলি। এখানে অন্তত
তিরিশটি মন্দির আছে, এগুলি হল শৈব, জৈন ও বৈষ্ণব মন্দির। মহাদেব, রাম ও পার্শ্বনাথের
নামে মন্দিরগুলি নির্মিত হয়েছে। পার্শ্বনাথের পাশে আছে অতিসুন্দর আদিনাথ মন্দির। খাজুরাহোর
মন্দির স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হল মহাদেব মন্দির। এর নির্মাণকৌশল, ধারণা, সূক্ষ্মকাজ
বিস্ময়ের উদ্রেক করে । যোধপুরের কাছে ওসিয়াতে অনেকগুলি সুন্দর মন্দির নির্মিত হয়,
শৈলী ছিল নাগর। ড. ক্রামরিশ এই মন্দিরগুলির গঠনসৌন্দর্যের প্রশংসা করেছেন । রাজস্থানে
অনেকগুলি জৈন মন্দির আছে, এগুলির মধ্যে নেমিনাথ সবচেয়ে বিখ্যাত। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের
মধ্যে মন্দিরটি স্থাপিত। রাজস্থানের মন্দির শৈলীর সঙ্গে গুজরাটের শৈলীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ
ছিল। কাথিয়াবাড়ের গোপ মন্দিরগুলিতে গান্ধার শিল্পের প্রভাব পড়েছিল বলে সাঙ্কালিয়া
মনে করেন। এখানকার মন্দিরে চতুষ্কোণ রীতি ত্যাগ করে আয়তক্ষেত্রের পরিকল্পনা গৃহীত
হয়েছে । গুজরাটের সোলাঙ্কি রাজারা মোধেরাতে সূর্য মন্দির নির্মাণ করেন, এই মন্দিরের
বিশালতা ও গাম্ভীর্য দর্শককে আকৃষ্ট করে। দক্ষিণে কৃষ্ণা-তুঙ্গভদ্রা উপত্যকা পর্যন্ত
নাগর শৈলীর প্রসার ঘটেছিল। আইহোল, পত্তদকল,
মহামুক্তেশ্বর ও আলমপুরে নাগর রীতির মন্দির স্থাপত্য পাওয়া গেছে। নাগর ও দ্রাবিড়
রীতির মিশ্রণে চালুক্য শৈলী তৈরি হয়েছে। সিন্ধু-গঙ্গা অঞ্চলে পাথর কেটে মন্দির নির্মিত
হয়। কাংড়ার বৈজনাথে এই পাথরের মন্দিরের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। উত্তর, পূর্ববঙ্গ, বিহার
অঞ্চলে নাগর রীতিতে মন্দির নির্মিত হয়। বর্ধমানের সৎদেওলিয়াতে নাগর রীতির ইট দিয়ে
গড়া মন্দির আছে, বাঁকুড়ার সিদ্ধেশ্বর হল এই রীতির আর একটি নিদর্শন।
পল্লব
রাজারা শিল্প ও সাহিত্যের উৎসাহী সমর্থক ছিলেন। প্রথম নরসিংহবর্মন মামল্লপুরমে ' রথের
আকৃতি বিশিষ্ট আটটি মন্দির নির্মাণ করেন, রীতি হল দ্রাবিড়। কাঞ্চীর কৈলাসনাথ মন্দির
পল্লব স্থাপত্যের আর এক উজ্জ্বল নিদর্শন। কাঞ্চীর বৈষ্ণব মন্দিরও সম্ভবত পল্লব রাজারা
নির্মাণ করেন। চোল রাজাদের আমলে দ্রাবিড় রীতি পরিণত সুষমামণ্ডিত রূপ লাভ করেছিল। বিজয়ালয়ের
চোলেশ্বর মন্দির, তাঞ্জোরের রাজরাজেশ্বর এবং রাজেন্দ্র চোলের গঙ্গাইকোণ্ডচোলপুরম মন্দির
চোল স্থাপত্যের সব অপূর্ব নিদর্শন। নীলকণ্ঠ শাস্ত্রী এই মন্দিরটিকে বলেছেন ‘দুঃসাহসী
প্রযুক্তি কৌশলের নিদর্শন'। চালুক্য শাসিত গুজরাট অঞ্চলে ছিল বেসর রীতির চলন। নাগর
ও দ্রাবিড় রীতির পাশাপাশি ছিল বেসর রীতি, বিমান ও মণ্ডপ হল এই রীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য।
আইহোল ও পত্তদকলে এই রীতির নিদর্শন ছড়িয়ে আছে, লাকুণ্ডির জৈন মন্দির এই রীতিতে নির্মিত
হয়েছে। দ্বাদশ শতকে এই চালুক্য শৈলী পরিণত হয়েছে। হৈসল রাজারা এই শৈলীতে মন্দির নির্মাণ
করেছেন। কাশ্মীরের রাজারা অনেক স্তূপ ও চৈত্য নির্মাণ করেছেন। ললিতাদিত্যের মন্দিরগুলিতে
বৈদেশিক প্রভাব পড়েছে। রাজশাহির পাহাড়পুরে একটি বিশাল মন্দিরের নিদর্শন পাওয়া গেছে।
ভারতের মন্দির স্থাপত্য যেমন বিচিত্র তেমনি অসাধারণ সুষমামণ্ডিত।
ভাস্কর্যের
ক্ষেত্রে অষ্টম ও নবম শতকে আঞ্চলিক স্বাতন্ত্র্যের প্রতিষ্ঠা ঘটেছিল, ধ্রুপদী ধারাও
পাশাপাশি প্রবহমান ছিল। ভারতের ভাস্কর্য নিদর্শনগুলি অবশ্যই ত্রিমাত্রিক, চিত্রকলা
হল দ্বিমাত্রিক। কোনো কোনো শিল্পে ভাস্কর্য ও চিত্রকলা মিশে গেছে, অজন্তা ও ইলোরার
গুহাগুলির ক্ষেত্রে এর নিদর্শন আছে। ভাস্কর্যের ওপর ধর্মের প্রভাব খুব বেশি, প্রথমদিকে
ভাস্কর্য হল দেবদেবীর মূর্তি, এর মধ্যে মিশেছে ধর্মীয় আবেগ ও সৃজনশীলতা। বিষ্ণু, সূর্য,
উমা-মহেশ্বর, বুদ্ধমূর্তি নির্মিত হয়েছে, মন্দিরে বহু মূর্তি স্থাপিত হয়েছে। ভাস্কর্যের
উন্নতি সর্বত্র একই সময়ে হয়নি। কোনো কোনো স্থানে ভাস্কর্যের চেয়ে চিত্রকলা ও কারিগরি
শিল্প প্রাধান্য পেয়েছে। জীবনের প্রয়োজনে শিল্পসুষমামণ্ডিত পণ্য তৈরি হয়েছে। পোড়ামাটির
মূর্তি, চিত্র নির্মাণ করে শিল্পী-কারিগর জীবিকানির্বাহ করেছে। দেবদেবীর পাশাপাশি জীবজন্তু,
গাছপালা, নরনারীর মূর্তিও তৈরি হয়েছে। ভারতবর্ষে চিরকাল অলংকার শিল্পের চলন ছিল, কারিগর
ও শিল্পীরা চাহিদা অনুযায়ী এগুলি নির্মাণ করেছে। সোনা, রুপো, পাথর, ব্রোঞ্জ ও পিতলের
সব সুন্দর মূর্তি ও অলংকার নির্মিত হয়েছে। মন্দিরগাত্রে, পর্বত গুহায়, প্রাসাদে নানাধরনের
মূর্তি, বাদ্যযন্ত্র, জীবনের নানাদিক প্রতিফলিত হয়েছে। শিল্প কখনো জীবনবিমুখ নয়,
পার্থিব জীবনের নানাদিকের প্রতিফলন ঘটেছে ভাস্কর্যে।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।