Q. Write an essay on the sources which are responsible far the reconstruction of early medieval India.
আদিমধ্য যুগের ইতিহাসের
উপাদানগুলিকে চারভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায় : (ক) সাহিত্য, (খ) লেখ, (গ) মুদ্রা-স্থাপত্য
ও ভাস্কর্য ও (ঘ) বিদেশি পর্যটক। এযুগের ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো উপাদান হল সাহিত্য।
এযুগে অনেকগুলি ঐতিহাসিক গ্রন্থ লেখা হয়েছে। প্রথমে উল্লেখ করতে হয় হর্ষবর্ধনের সভাকবি
বাণভট্টের লেখা হর্ষচরিত। বাণভট্ট গদ্যে ও পদ্যে এই গ্রন্থটি লেখেন। ইতিহাসের উপাদান
হিসেবে এই গ্রন্থখানি খুব নির্ভরযোগ্য নয় কারণ বাণভট্ট তাঁর পৃষ্ঠপোষকের প্রতি পক্ষপাতিত্ব
দেখিয়েছেন। বাণভট্ট হর্ষের কৃতিত্বকে বেশি করে দেখিয়েছেন, প্রতিদ্বন্দ্বীদের কালিমালিপ্ত
করেছেন। তিনি বাংলার রাজা শশাঙ্ককে ‘গৌড়াধম’, ‘গৌড় ভুজঙ্গ' বলে উল্লেখ করেছেন। বাণভট্ট
ঐতিহাসিকের নিরপেক্ষতা বজার রাখতে পারেননি। বিলহন শেষদিককার চালুক্য বংশীয় রাজা ষষ্ঠ
বিক্রমাদিত্যের জীবনী লিখেছেন। গ্রন্থখানির নাম হল বিক্রমাঙ্কদেবচরিত। বাক্পতি লিখেছেন
গৌড়বহো কাব্য। প্রাকৃত ভাষায় লেখা গৌড়বহ হল কনৌজ রাজ যশোবর্মনের বঙ্গবিজয়ের এক
কল্পনা মিশ্রিত ঐতিহাসিক কাব্য। সন্ধ্যাকর নন্দী লিখেছেন রামচরিত। এই গ্রন্থখানি হল
পালরাজা রামপালের ইতিহাস।
জৈনগুরু জয়সিংহ লেখেন
কুমারপালচরিত, পালি ভাষায় রচিত এই গ্রন্থে দ্বাদশ শতকের চালুক্য বংশীয় শাসক কুমারপালের
ইতিহাস পাওয়া যায়। প্রাদেশিক ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ রচনা হল কলহণের রাজতরঙ্গিণী। আদিমধ্য
যুগের ভারতে কাব্যে রচিত এই গ্রন্থখানি হল বিজ্ঞানসম্মতভাবে লেখা ইতিহাস। কলহণ বহু
উৎস থেকে উপাদান সংগ্রহ করে তাঁর ইতিহাস লেখেন। তিনি ইতিহাস রচনার যে পদ্ধতির উল্লেখ
করেছেন তা এককথায় বিস্ময়কর। কলহণ ঐতিহাসিক হিসেবে যুগকে অতিক্রম করেছেন। আধুনিক কালের
বিশ্লেষণমূলক ইতিহাস রচনা পদ্ধতির ধারণা কলহণ আয়ত্ত করেছিলেন। ঐতিহাসিকের নিরপেক্ষতা
সম্পর্কে কলহণ লিখেছেন যে ঐতিহাসিক প্রীতি ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হয়ে সত্যকে শুধু প্রকাশ
করবেন। তিনি শুধু ইতিহাস পড়ে ইতিহাস লেখেননি, রাজাদের অনুশাসন, লেখ, লিখিত ইতিহাস
সব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুশীলন করে তবেই তিনি ইতিহাস লেখায় হাত দেন। তথ্যের অভাবে তিনি
কাশ্মীরের আদিপর্বের ইতিহাস লিখতে পারেননি, সপ্তম শতক থেকে তিনি কাশ্মীরের নির্ভরযোগ্য
ইতিহাস উপহার দিয়েছেন। নিরপেক্ষভাবে তিনি ঘটনা ও চরিত্রের মূল্যায়ন করেছেন, নির্মোহভাবে
তিনি কাশ্মীরের দুঃখ-দুর্দশা এবং উত্থান-পতনের ইতিহাস লিখে রেখেছেন। পরবর্তীকালে অন্যান্য
ঐতিহাসিকরা তাঁকে অনুসরণ করেছেন। কাশ্মীরের মতো গুজরাটের লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায়।
সোমেশ্বর লিখেছেন রসমালা ও কীর্তিকৌমুদী, মেরুতুঙ্গ লেখেন প্রবন্ধ চিন্তামণি, বালচন্দ্র
লিখেছিলেন বসন্তবিলাস। এসব গ্রন্থে জনশ্রুতি ও ইতিহাস মিশে গেছে।
আদিমধ্য যুগের ইতিহাসের
একটি বড়ো উপাদান হল পুরাণ। পুরাণের সংখ্যা হল আঠারো কিন্তু সব পুরাণে ঐতিহাসিক উপাদান
নেই। রামশরণ শর্মা পুরাণকে ব্যবহার করে তাঁর সামন্ততন্ত্রের তত্ত্ব খাড়া করেছেন। ভাগবৎ
পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ থেকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বহু তথ্য আহরণ করা হয়েছে। রাজনৈতিক
ইতিহাস নির্মাণে পুরাণ বিশেষ কাজে লাগে না, তবে আর্থ-সামাজিক ইতিহাস রচনায় পুরাণকে
অগ্রাহ্য করা হয় না। চিনদেশীয় পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ্ সপ্তম শতকের মধ্যভাগে ভারতে
এসেছিলেন, ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি দেশে ফিরে যান। তিনি বৌদ্ধ সম্রাট হর্ষবর্ধনের আতিথেয়তা
লাভ করেন, বিস্তৃত অঞ্চল পরিভ্রমণ করেন। বৌদ্ধধর্ম, তীর্থস্থান, দর্শন নিয়ে আলোচনা
করলেও তাঁর গ্রন্থে সম্রাট হর্ষবর্ধন এবং সমসাময়িক অন্যান্য রাজাদের কথা আছে।
অষ্টম শতক থেকে আরব লেখকরা
ভারতের কথা লিখেছেন। আরব বণিক, ভূগোলবিদ এবং পর্যটকরা ভারত সম্পর্কে লিখেছেন। এঁদের
মধ্যে তিনজনের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। একাদশ শতকের গোড়াতে আলবেরুনি সুলতান মামুদের
সঙ্গে ভারতে এসেছিলেন। তাঁর আসল নাম হল আবু রায়হান। এই আরব পণ্ডিত ভারতবর্ষের সংস্কৃতির
অনুধ্যানে নিযুক্ত ছিলেন, তিনি সংস্কৃত শিখে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করেন।
তহকিক-ই-হিন্দ গ্রন্থে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেন। আলবেরুনি ধর্মীয় সংকীর্ণতাকে
জয় করে মুক্ত মন নিয়ে হিন্দুধর্ম ও দর্শনকে বোঝার চেষ্টা করেন। হিন্দুদের সামাজিক
অবস্থার কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। তাঁর মধ্যে বিজয়ী জাতির আত্মম্ভরিতা ছিল না। আলবেরুনি
সেযুগের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ লিখেছেন, তবে এই গ্রন্থ একেবারে ত্রুটিমুক্ত ছিল না। এই গ্রন্থের
দুটি ত্রুটির কথা ঐতিহাসিকরা উল্লেখ করেছেন।
আদিমধ্য যুগের ইতিহাসের একটি
বড়ো উপাদান হল অসংখ্য লেখ। ভারতের বিভিন্ন স্থানে এইসব লেখ পাওয়া গেছে। প্রতিহার
রাজ ভোজের গোয়ালিয়র লেখ, পালরাজাদের খালিমপুর ও মুঙ্গের লেখ, উমাপতি ধর রচিত বিজয়সেনের
দেওপাড়া লেখ এযুগের ইতিহাসের অবয়ব নির্মাণে সাহায্য করে থাকে। চোল রাজারা অনেক লেখ
রেখে গেছেন। এইসব লেখ থেকে তাদের গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার (ঊর) পরিচয় পাওয়া
যায়। লেখ দুরকমের—সরকারি
ও বেসরকারি। সরকারি লেখগুলির বেশিরভাগ ভূমিদান সম্পর্কিত। লেখের প্রথম অংশ হল প্রশস্তি,
এই অংশে দাতা রাজার অতিরঞ্জিত প্রশস্তি থাকে, তবে এই অংশে রাজার নাম, বংশ, রাজ্যের
আয়তন ইত্যাদি তথ্যও পাওয়া যায়। ভূমিদান অংশে ভূমির পরিমাপ, মূল্য এবং ভূমিব্যবস্থার
কথাও জানা যায়। সরকারি লেখের সংখ্যা বেসরকারি লেখের তুলনায় অনেক কম। বেসরকারি স্তরে
হাজার হাজার লেখ রচিত হয়েছে। ব্যক্তি বা বংশের গুণকীর্তন করে এইসব লেখ রচিত হয়। এসব
লেখ থেকে প্রত্যক্ষভাবে রাজনৈতিক ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহ করা যায় না। এগুলির বেশকিছু
ব্রহ্মদেয় (ব্রাহ্মণকে দান) এবং দেবদান (মন্দিরকে দান) সম্পর্কিত। ধর্মবিশ্বাস, মূর্তি
ও মন্দিরের কথাও থাকে। শিল্প ও ধর্মের ইতিহাসে এসব লেখের গুরুত্ব কেউ অস্বীকার করতে
পারেন না।
গুপ্ত সম্রাটদের পর ভারতীয়
রাজাদের খুব অল্পসংখ্যক মুদ্রা পাওয়া গেছে। ঐতিহাসিকরা এজন্য ধরে নিয়েছেন যে আদিমধ্য
যুগে মুদ্রার ব্যবহার কমেছিল। পাল, প্রতিহার, চালুক্য ও রাষ্ট্রকূটদের প্রবর্তিত মুদ্রার
নজির খুবই কম। কোনো কোনো অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু মুদ্রা পাওয়া গেছে। এসব মুদ্রা
সাহিত্যিক ও পৌরাণিক উপাদানের সত্যতা নির্ধারণে সহায়তা করে। মুদ্রা ছাড়া অন্যান্য
উৎস হল প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানসমূহ – পোড়ামাটির জিনিসপত্র, মাটির পাত্র, মূর্তি, প্রাসাদের
ধ্বংসাবশেষ, মন্দির ইত্যাদি। এসব উপাদান থেকে আদিমধ্য যুগের ইতিহাস রচনা করা সম্ভব
হয়েছে।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।