প্রশ্নঃ বাংলা গদ্যে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে অন্যতম পণ্ডিত মৃত্যুঞ্জয়
বিদ্যালঙ্কার। তাঁর গ্রন্থগুলি হল— 'বত্রিশ সিংহাসন' (১৮০২), 'হিতোপদেশ' (১৮০৮), 'রাজাবলি'
(১৮০৮), 'বেদান্তচন্দ্রিকা' ও 'প্রবোধচন্দ্রিকা'। রাজা বিক্রমাদিত্যকে সামনে রেখে মৃত্যুঞ্জয়
বত্রিশটি গল্প শুনিয়েছেন 'বত্রিশ সিংহাসন' গ্রন্থে। এটি সংস্কৃত রীতিতে সাধুগদ্যে
লেখা। তবে ভাষার মধ্যে একটি দীপ্তি লক্ষ করা যায়—“হে মহারাজ শুন রাজলক্ষ্মী কখন কাহাতেও
স্থির হইয়া থাকেন না। রক্তমাংস মূল-মূত্র নানাবিধ ব্যাধিময় ও শরীরও স্থির নয়....
।” গদ্যের সরসতা সহজেই লক্ষ করা যায়। অতীত ও সেকালের ইতিহাসকে সামনে রেখে লেখক গড়ে
তুলেছিলেন 'রাজাবলি' গ্রন্থ। সজনীকান্ত দাস এ গ্রন্থ সম্পর্কে লিখে ছেন—“বাংলা ভাষার
ভারতবর্ষের সর্বপ্রথম ধারাবাহিক ইতিহাস তাহাতে সন্দেহ নাই।”
ব্যাকরণ, অলংকার, ইতিহাস নিয়ে 'প্রবোধচন্দ্রিকা'
গ্রন্থ গড়ে উঠেছে। এ গ্রন্থ প্রকাশের পরেই মার্শম্যান প্রশংসা করেছিলেন। রচনারীতি
ও ভাষাবোধে লেখকের পরিণত মনের চিত্র ফুটে উঠতে দেখি। তবে ভাষারীতিতে সাধু চলিতের মিশ্রণ
লক্ষ করা যায়। কথ্যরীতির একটি দৃষ্টান্ত দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে—“মোরা চাস্ করিব
ফসল পাবো রাজার রাজস্ব দিয়া যা থাকে তাহাতেই বছরশুদ্ধ অল্প করিয়া খাবো ছেলেপিলাগুলো
পুষিব।”
এমন সরস গদ্য সে আমলে সত্যি বিস্ময়কর ছিল। বিদ্যাসাগরের পূর্বে মৃত্যুঞ্চয়েই প্রথম
যথার্থ গদ্যশিল্পী সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
রামমোহনের 'বেদান্তগ্রন্থ'
ও 'বেদান্তসার' গ্রন্থে উত্তর দিতে মৃত্যুঞ্জয় লিখেছিলেন 'বেদান্তচন্দ্রিকা'। তিনি
এ গ্রন্থকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা—কর্মকাণ্ড,
উপাসনাকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড। প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুঞ্জয় এ গ্রন্থে বেদান্তশাস্ত্রের মূল
তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলেন বলা ভালো তা তিনি দক্ষতার সঙ্গেই পেরেছিলেন।
বাংলা গদ্যের প্রথম
পর্বের এক দক্ষ নাবিক মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার। বাদ-প্রতিবাদ, যুক্তিতর্ক যে গদ্যের
বাহন তেমনি গদ্যের যে নিজস্ব তাল আছে তা তিনি দেখেছিলেন। অনেকেই মৃত্যুঞ্জয়ের সমালোচনা
করে লিখবেন—'এই
এই'র ছিল না। কিন্তু সময়ের কথাও তো আমাদের ভাবতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই বলা যায় বাংলা
গদ্যের প্রথম পর্বে মৃত্যু্যুয়ের অবদান বিশেষ স্মরণীয়।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।