প্রশ্নঃ শব্দার্থ পরিবর্তনের কারণগুলি আলোচনা করো।
§ শব্দার্থ পরিবর্তনের কারনঃ
ভাষাকে তুলনা করা হয় নদীর
সঙ্গে। এই ভাষারও দুটি রূপ। একটি ভাষার বাইরের প্রকাশের দিক, অন্যটি ভিতরের অর্থ। ভাষাতত্ত্বের
যে শাখায় ভাষার এই অর্থের দিকগুলি নিয়ে অবগত করা হয় তাকে বলে শব্দার্থতত্ত্ব। শব্দের
অর্থ বাদ দিয়ে কোনো ভাষাই পূর্ণতা পায় না। তবে এই শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে, এর
নানা কারণ আছে—
§ ভৌগোলিক কারণ:
ভূগোলের পরিবর্তনে শব্দের অর্থের পরিবর্তন হয়। একই শব্দ ভিন্ন ভিন্ন ভৌগোলিক পরিবেশে
ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে আনে। যেমন একটি শব্দ 'অভিমান'। বাংলার স্নিগ্ধ পরিবেশে এই
শব্দের অর্থ—'স্নেহ মিশ্রিত অনুযোগ'। কিন্তু পশ্চিম ভারতের শুষ্ক অঞ্চলে শব্দটির অর্থ
পালটে যায়। সেখানে এর অর্থ হয় ‘অহংকার’।
§ ঐতিহাসিক কারণ:
শুধু ভূগোলগত ব্যবধানেই শব্দের অর্থ পরিবর্তন হয় না, একটা শব্দ দীর্ঘদিনের ক্রমপরিবর্তনেও
অর্থ পালটে যায়। যেমন ধরা যাক 'বিবাহ' শব্দ। প্রাচীনকালে যে অর্থে ব্যবহৃত হত আজ তা
হয় না। প্রাচীনকালে ‘বিবাহ” শব্দের অর্থ ছিল বিশেষ রূপে বহন করা। আধুনিক জীবনে বহন
করার কোনো প্রশ্নই নেই, 'বিবাহ' মানে 'পরিণয় সূত্র’।
§ উপকরণগত কারণ:
বিভিন্ন উপকরণে বিভিন্ন জিনিস নির্মিত হয়। উপকরণের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক জিনিসের
নাম একই থাকে, কোথাও পালটে যায়। যেমন পূর্বে ‘কালি' বলতে কালো তরল উপাদানকে বোঝাত।
পরবর্তীতে ‘সবুজ’, ‘লাল’ উপাদানে গঠিত তরলকেও কালি বলা হয়। আবার পূর্বে ‘প্যাপিয়াস’
গাছের মজ্জা থেকে কাগজ তৈরি হত বলে কাগজকে বলা হত 'পেপার'। পরবর্তীতে বিভিন্ন উপকরণ
থেকে তৈরি কাগজকেও 'পেপার ই বলা হয়ে থাকে।
§ সাদৃশ্য:
সাদৃশ্যের প্রভাবেও শব্দের অর্থ পরিবর্তন ঘটে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হল বিষয়টি কীভাবে
ঘটে। একটি ধ্বনির সঙ্গে অন্য ধ্বনির সাদৃশ্যে পরিবর্তন ঘটতে পারে, আবার একটি বস্তুর
সঙ্গে অন্য বস্তুর সাদৃশ্যে পরিবর্তন ঘটে থাকে। যেমন—যে শস্য থেকে তিল তৈরি হত তা কালো
বলে, তার সাদৃশ্যে শরীরের ছোটো কালো দাগকেও বলা হয় 'তিল'।
§ সুভাষণ রীতি:
সুভাষণের ফলেও শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে। আমাদের ধারণা অশুভ বিষয়বাস্তুর নাম উচ্চারণ
করতে নেই, ফলে সংসারের অমঙ্গল ঘটে। এই অমঙ্গলকে এড়িয়ে যেতে শব্দটিকে শোধন করে নেওয়াকে
বলে সুভাষণ। আসলে শব্দটিকে ‘সু’ করে নেওয়া, অর্থাৎ সুন্দর করে নেওয়া। যেমন—‘মৃত্যু'
শব্দটি ব্যবহার না করে আমরা বলি 'গঙ্গা লাভ করা'।
§ আলংকারিক কারণ:
আলংকারিক কারণেও শব্দের অর্থ পরিবর্তন ঘটে। অনেক সময় শব্দের মূল রূপটিকে না ব্যবহার
করে আলংকারিক অর্থে শব্দটিকে ব্যবহার করে শব্দের মূল রূপটিই হারিয়ে যায়। যেমন ব্যবসায়ে
ব্যর্থ হওয়া অর্থে গণেশ ওলটানো।
§ শৈথিল্য ও আরামপ্রিয়তা:
অনেক সময় শৈথিল্য বা আরামপ্রিয়তার জন্য আমরা শব্দের সম্পূর্ণ অংশ উচ্চারণ না করে
অর্ধেক অংশ উচ্চারণ করি। ফলে অনেক সময় শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে থাকে। যেমন—'একটু
চা টা খেয়ে যান। –এখানে “টা' এর অর্থ জলখাবার।
জ্ঞ্যানজ্যোতি
কোচিং সেন্টার
তোমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
6295916282,7076398606
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।