প্রশ্নঃ প্রত্যক্ষবাদ বলতে কী বোঝ? অগাস্ট কোঁৎ প্রদত্ত ‘ত্রি-স্তর’ বিধি তত্ত্বটি আলোচনা করো।
§ প্রত্যক্ষবাদঃ
অগাস্ট কোঁৎ সমাজের বিবর্তন প্রকৃয়ার
ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে তিনটি স্তরের কথা বলেছেন; এর মধ্যে সর্বশেষ পর্যায় হলো “প্রত্যক্ষবাদ”
বা
“দৃষ্টবাদ”। সমাজ ব্যবস্থাপনায়
মানবচিন্তার ক্ষেত্রে বিবর্তনের ফলে সমাজবিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি ও নিয়মকানুন দ্বারা
পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয়, এ স্তরকে অগাস্ট কোঁৎ দৃষ্টবাদী স্তর বলেছেন।এই পর্যায়ে
তিনি মানুষের চিন্তাধারায় যুক্তির প্রাধান্য লক্ষ্য করেছেন।তাঁর মতে, প্রত্যক্ষবাদী
মানব সভ্যতার মূল ভিত্তি হল শিল্পসভ্যতা এবং এই শিল্পনির্ভর সমাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে
দৃষ্টিবাদী চিন্তাধারা।
§ ত্রয়স্তর সূত্রঃ
কোতের ত্রয়স্তর সূত্র প্রধানত
মানব জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত। সমাজের বিকাশ বলতে তিনি জ্ঞান-বুদ্ধির বিকাশকেই বুঝিয়েছেন।
জ্ঞানের স্তরের পরিবর্তনের সাথে সাথে সমাজ কাঠামোর পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। কোঁত সমাজকে
দেখেছেন ক্রমবিকাশ ও প্রগতির প্রক্রিয়া হিসেবে। তাঁর মতে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি তিনটি
স্তরের মাধ্যমে বিকশিত হয়ে যৌক্তিক ও বিজ্ঞানমনস্ক রূপ লাভ করেছে। বুদ্ধিবৃত্তি বিকাশের
তিনটি স্তর হচ্ছেঃ
১। ধর্ম সম্বন্ধীয় স্তর
, ২। অধিবিদ্যা সম্বন্ধীয় স্তর এবং ৩। দৃষ্টবাদী স্তর ।
১। ধর্ম সম্বন্ধীয় স্তরঃ
মানুষের জ্ঞানের প্রাথমিক
পর্যায় হচ্ছে ধর্ম সম্বন্ধীয় স্তর। এ স্তরে মানুষ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো
ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। প্রকৃতিতে ঘটে যাওয়া ঘটনার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন
করতে পারেনি। মানুষ মনে করেছে প্রকৃতিতে সবকিছুই অতিপ্রাকৃত শক্তির ইশারায় চালিত ও
নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এ স্তরে মানুষের মন ধর্মীয় ভাবাবেগে আচ্ছন্ন থাকে। এ স্তরকে আবার
তিনটি ধাপে বিভক্ত করা হয়। যথা-
(ক) প্রকৃতি পুজা: এ পর্যায়ে
অতিপ্রাকৃত ধ্যানধারণার বিকাশ ঘটে যা ভক্তি ও অন্ধ বিশ্বাস থেকে সৃষ্টি হয়। । বহুদেববাদ
এ পর্যায়ে বিশ্বাস করা হয় যে, মহাবিশ্ব বহু দেবদেবতা দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত
হয়। (গ) একেশ্বরবাদ এ পর্যায়ে বিশ্বাস করা হয় মহাবিশ্ব এক ঈশ্বর দ্বারা পরিচালিত
ও নিয়ন্ত্রিত।
২। অধিবিদ্যা সম্বন্ধীয় স্তরঃ
অধিবিদ্যা সম্বন্ধীয় স্তরটি
চিন্তা ও সমাজ বিবর্তনের মধ্যবর্তী পর্যায়। এ স্তরটির অবস্থান ধর্মতত্ত্ব সম্বন্ধীয়
স্তর থেকে দৃষ্টবাদী স্তরে উত্তরণের অর্ন্তবর্তী সময়ে লক্ষ করা যায়। এ স্তরে মানুষের
চিন্তাজগতে পরিবর্তন হতে শুরু করে। একেশ্বরবাদের পরবর্তী পর্যায়টিতে অধিবিদ্যা সম্বন্ধীয়
স্তরের আবির্ভাব ঘটে। মানুষ বিশ্বাস করে যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড দেবতা দ্বারা পরিচালিত
হয় না বরং একটি বিশেষ শক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়। অধিবিদ্যা সম্বন্ধীয় স্তরে প্রকৃতি
প্রদত্ত অধিকার, প্রাকৃতিক আইন ইত্যকার নানাবিধ বিষয়ে ধারণা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ সময়ে
মানুষের মনে জিজ্ঞাসা এসেছে, উৎসাহ বেড়েছে, সমস্যা প্রতিকারের চিন্তা এসেছে, যুক্তি
এসেছে। মানুষ তার অস্তিত্বে কর্মের ফল ও ভূমিকা সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন হতে থাকে।
৩। দৃষ্টবাদী স্তরঃ
দৃষ্টবাদী স্তরে মানুষের
যুক্তি ও পর্যবেক্ষণ সম্মিলিতভাবে জ্ঞানের উৎস হিসেবে কাজ করে। এ স্তরে মানুষ পর্যবেক্ষণ
ও অভিজ্ঞতাকে আশ্রয় করে প্রকৃত বিষয় ও ঘটনার সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপনের
মধ্য দিয়েই জ্ঞানের খুঁজে পায়। তার মতে এ স্তরে পুঁজিপতি ও শিল্পপতিগণ সামাজিক ও
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিবে। তাঁর ধারণা ব্যক্তির প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ
সামাজিক বিবর্তনের উল্লেখিত স্তরগুলো লক্ষ্য করে এগিয়ে চলে। অগাস্ট কোঁত এই জ্ঞানের
ধারা তত্ত্বের মাধ্যমে সমাজের বিবর্তনকে উপলব্ধি করেছেন। সামাজিক বিবর্তন বলতে তিনি
সমাজের উন্নতি ও প্রগতিকে বুঝিয়েছেন। তাঁর মতে সামাজিক উন্নতি তিনটি ক্রমিক ধাপের
মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। যথা- বুদ্ধিগত উন্নতি , ভাবগত উন্নতি এবং কর্মগত উন্নতি
। অগাস্ট কোঁত এর মতে ভাবগত ও কর্মগত উন্নতি বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতির উপর নির্ভরশীল।
এয়স্তর সম্পর্কিত আলোচনায় জ্ঞান বিকাশের সাথে সাথে সবার মনে স্বতন্ত্র বোধ জাগ্রত
হয়েছে যা দ্বারা সভ্যতার বিকাশ ঘটে।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।