প্রশ্নঃ হিন্দু ধর্ম কী? ভারতীয় সমাজের উপর হিন্দু ধর্মের প্রভাব আলোচনা করো।
প্রশ্ন মানঃ১২
§ হিন্দু ধর্মঃ
হিন্দু ধর্মে ব্যক্তির কর্তব্যের
বিশদ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পৃথক পৃথক পরিস্থিতিতে দেশ, কাল এবং পাত্র অনুসারে ব্যক্তিদের
কর্তব্য পৃথক পৃথক রকমের। ব্যক্তিদের মধ্যে রুচি, মানসিক যোগ্যতা এবং কার্যক্ষমতার
দিক থেকে পার্থক্য দেখতে পাওয়া যায়। ফলে ধর্মের নানান রূপের বিকাশ ঘটে। পৃথক পৃথক গঠন প্রণালি এবং আচরণ পদ্ধতিও
বিকশিত হতে থাকে। হিন্দু ধর্মের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল প্রত্যেকে নিজের ধর্ম বিশ্বাস
অনুযায়ী আলোচনা করে। ধ্যান করা, বিধি নিয়ম পালন করা এবং আত্মকল্যাণের স্বাধীনতা প্রদান
করা, এই কারণেই হিন্দু ধর্ম আজ পযর্ন্ত নিজের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে।
§ ভারতীয় সমাজের উপর হিন্দুধর্মের প্রভাবঃ
হিন্দু ধর্ম বহু বিশ্বাস বিধি,
সংস্কার এবং কর্তব্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। এই ধর্মে ঈশ্বরকে সত্য এবং শেষ বলে মনে করা
হয়েছে। সব ধর্মের সর্ব স্বীকৃত মূল কথা হল পরমাত্মা যা প্রত্যেক প্রাণীর হৃদয়ে বাস
করে। ডঃ রাধাকৃষ্ণণ বলেছেন—“ধর্ম
উন্নতি করতে করতে ঈশ্বরে পরিণত হবার আশা রাখে। এটি আমাদের আত্মার গভীরতায় সাথে জীবন
কাটানোর সহায়তা প্রদান করে।
ধ্যান, উপাসনা এর সাধন স্বরূপ,
যার দ্বারা মন ও জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি স্বচ্ছ হয়। ধ্যানের লক্ষ্য সর্বোচ্চ ঈশ্বরত্ব,
যা সঠিক অর্থে বর্ণনাতীত। এটি সব রূপের উপরে, কেউ তাকে দেখতে পায় না, তার সঙ্গে কোনো
সুনির্দিষ্ট বস্তুর তুলনা করা যায় না। মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে যা কিছু যুক্ত, সত্য
এবং প্রেমময় তার মধ্যে ঈশ্বর ভাবনা কাজ করে চলেছে। ঈশ্বর সারা বিশ্বের কোনো সম্প্রদায়ের
একার নয়। যদিও হিন্দু ধর্মে বহু বিশ্বাস ও বিবিধ পূজা পদ্ধতি পাওয়া যায় তথাপি এর
মুখ্য বৈশিষ্ট্য হল এটি একটি উপযোগী এবং ব্যবহারিক ধর্ম। এই ধর্মে বিভিন্ন জিজ্ঞাসার
সফলতা পূর্বক উত্তর দেওয়া হয়। ধর্মের সমাজতাত্ত্বিক গুরুত্ব আলোচনা করতে গেলে মনে
রাখতে হবে যে ধর্ম শব্দের প্রয়োগ মৌলিক হিন্দু ধর্মের জন্য করা হয়েছে।
হিন্দু ধর্ম সার্বিকভাবে ভারতীয়
সমাজে বিরাজমান। এটি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রত্যেক হিন্দুর জীবনকে ধর্মীয় বিশ্বাস,
বিধি, নিয়ম, আরাধনা পদ্ধতি এবং কর্তব্য পালনে দৃঢ় আস্থা ইত্যাদি রূপে প্রভাবিত করে—
§ প্রথমতঃ
§ সামাজিক
জীবনে ধর্ম ব্যক্তিত্বের নির্মাণে সর্বদা সহযোগিতা করেছে। সন্তানের সামাজিকীকরণে পরিবারের
বিশেষ গুরুত্ব আছে এবং পরিবার সর্বদাই ধর্মীয় গ্রন্থ, ধার্মিক কথায় সঙ্গে সন্তানদের
পরিচিতি ঘটায়, সদস্যদের মধ্যে পরস্পর কর্তব্য ভাবনা ও পারিবারিক প্রেম এবং ত্যাগ পূর্ণ
পরিবেশ, সন্তানদের সামাজিক নৈতিক মূল্যের প্রতি আস্থা, সৎ গুণের বিকাশ, এবং চরিত্র
নির্মানে সাহায্য করে চলেছে। ধর্মীয় বিশ্বাস ব্যক্তির অচেতন মনের ওপর গভীর প্রভাব
ফেলে এবং তার পশু প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ধর্ম ব্যক্তির সামনে কিছু আদর্শ প্রস্তুত
করে, আদর্শের দিকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা দেয়। ভূল পথে গেলে রক্ষা করে এবং খারাপ কাজ
থেকে দূরে রাখে। সামাগ্রিকভাবে ধর্ম ব্যক্তিত্ব নির্মাণে সাহায্য প্রদান করে।
§ দ্বিতীয়তঃ
§ ধর্ম
সামাজিক নিয়ন্ত্রণেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ব্যক্তির সামনে ধর্ম-অধর্মের কল্পনা
থাকে, পাপ-পুণ্যের ধারণার সঙ্গে তার পরিচিতি ঘটে এবং স্বর্গ-নরক-সম্পর্কে একটা ধারনা
থাকে। কোনো কাজ করার আগের ব্যক্তির অন্তরাত্মা তাকে চিন্তা করতে প্রেরিত করে এবং ভূল
কাজ করতে বাধা দেয়। ব্যক্তি আইনের অবহেলা করতে পারে কিন্তু ধর্মীয়-কর্তব্যের অবহেলা
করে না। ধর্মীয় আদেশের বিপরীত কার্য করতে ব্যক্তি ভয় পায় ।
§ তৃতীয়তঃ
§ ধর্ম
ব্যক্তিকে কর্তব্যপালন করতে সর্বদা প্রেরিত করে পৃথক পৃথক পরিস্থিতিতে স্বধর্ম পালন
করা ব্যক্তির নৈতিক কর্তব্য। ধর্ম ব্যক্তিকে স্বয়ং মাতা-পিতা, সন্তান, পরিবার, বংশ,
জাতি ও সমাজের প্রতি কর্তব্য পালনের সাথে সাথে সামাজিক অনুশান পালন ও কর্তব্য বোধও
শেখায়। তাকে নিরন্তর নর থেকে নারায়ণে পরিণত করতে চেষ্টা করে। পাপ-পূণ্য, স্বর্গ-নরক,
কর্ম এবং পুনজন্ম এর ধারণা ব্যক্তিকে নিজের অবস্থায় সন্তুষ্ট থাকতে এবং নিজ ভূমিকা
ঠিকমত পালন করতে উৎসাহিত করে। হিন্দুধর্ম ব্যক্তির মধ্যে গোষ্ঠীগত গুণের বিকাশ ঘটায়
এবং সামাজিক ব্যবস্থাকে সূদৃঢ় করতে সাহায্য করে।
§ চতুর্থতঃ
§ হিন্দু
ধর্ম ব্যক্তিকে অনেক মানসিক দ্বন্দ্বের হাত থেকে রক্ষা করে। ব্যক্তিকে কর্ম করতে আদেশ
দেয়। গীতাতে নিষ্কাম কর্মের কথা বলা হয়েছে এবং ব্যক্তিকে নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য
সর্বদা উজ্জীবিত করা হয়েছে। 'কর্মন্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন'–এর মন্ত্র ব্যক্তিকে
সব কর্মকে নিজ দায়িত্ব মনে করে পালন করতে নির্দেশ দেয়। পরিণামে ভারতীয় সমাজের লোকেরা
বহুদিন পর্যন্ত মানসিক দ্বন্ধের হাত থেকে পরিত্রাণ পায় ।
§ পঞ্চমতঃ
ভারতীয় সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হিন্দু
ধর্ম বিশেষ সাহায্য করে। ইতিহাস বলে যে অনেক সংস্কৃতি কালের গ্রাসে চলে গেছে, কিন্তু
ভারতীয় সংস্কৃতি আজও তার অস্তিত্ব বজায় রেখে চলেছে, এর প্রধান কারণ হল হিন্দু ধর্মের
বাস্তব স্বরূপ। হিন্দু ধর্ম ব্যক্তি পুরুষার্থ গঠনে সাহায্য করে। তাদের মধ্যে নিঃস্বার্থ
সেবারভাব জাগ্রত করে। ব্যক্তিকে জনকল্যাণের জন্য প্রেরিত করে।
সংক্ষেপে একথা বলা যায় যে, ধর্ম
ব্যক্তির জীবনের সন্ধান দিয়েছে, তার জীবন পদ্ধতিকে প্রভাবিত করেছে, তার ব্যক্তিত্ত্বের
বিকাশে সাহায্য করেছে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সংগঠিত করেছে।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমার উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের
প্রতিশ্রুতি
6295916282;
7076398606
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।