প্রশ্নঃ জৈন ধর্ম বলতে কী বোঝ? জৈন ধর্মের মূল তত্ত্বগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।
প্রশ্ন মানঃ১২
জৈন ধৰ্ম
খ্রিষ্টপূর্ব
ষষ্ঠ শতাব্দীতে ভারতের পরিস্থিতি এমন ছিল যা জৈন ধর্মের বিকাশে সাহায্য করেছে। ঐ সময়
বহুদেববাদ, যোগ্যবাদ, বেদবাদ, ব্রাহ্মণ্যবাদের আধিপত্য ছিল। বেদকে ঈশ্বরীয় ও পূর্ণ
বলে মনে করা হত, অনেক দেব-দেবীর পূজা করা হত। যজ্ঞে পশু বলি দেওয়া হত। ব্রাহ্মণ ও
পুরোহিতদের খুব প্রাধাণ্য ছিল। সমাজে মেয়েদের মর্যাদা ছিল নিম্নমানের। জাতপাতের বন্ধন
ও কঠোর ছিল। এই পরিস্থিতিতে ভারতে জৈন ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশ ঘটে।
এখানে
বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে জৈন ধর্মের প্রবর্তক মহাবীর ছিলেন না, তার আগে ২৪ জন তীর্থঙ্কর
ছিলেন। প্রথম তীর্থঙ্কর ছিলেন ঋষভ দেব। এবং ২৩ নম্বর তীর্থঙ্কর ছিলেন পাশ্বনাথ। মহাবীর জৈনধর্মের প্রবর্তক ছিলেন না ঠিকই কিন্তু
তিনি জৈন ধর্মকে সংগঠিত করেন, এই ধর্মের পরিবর্তন এবং সংস্কার করেন। একে শক্তি প্রদান
করেন। মহাবীরের জন্ম হয় খ্রিষ্ট পূর্ব 599তে। মহাবীর খ্রিষ্ট পূর্ব ৫২৭ এ পাটনা জেলার
পাবা নামক স্থানে দেহত্যাগ করেন। তিনি জৈন ধর্মকে লোকপ্রিয় করেন। এই কারণে লোকে তাঁকে
জৈন ধর্মের প্রবর্তক বলে মনে করেন।
জৈন ধর্মের প্রধান তত্ত্ব
জৈন
ধর্মের প্রধান তত্ত্বগুলি হল—
1)নিবৃত্তি মার্গ—
মহাবীর মনে করতেন মানুষ সংসারের জন্য অসুখী। গৃহস্থ হিসাবেও
সে সুখ শান্তি পায় না, তার লোভ বৃদ্ধি পেতে থাকে। মানুষের জীবন ক্ষণ-ভঙ্কুর, তাই প্রথমেই
তাকে ত্যাগ করা উচিত। মানুষের বাস্তব সুখ সংসার ত্যাগের মধ্যে। তাই সংসার ত্যাগ করে
ভিক্ষু হয়ে পরিভ্রমণ করা উচিত। এইভাবে সে মোক্ষ লাভ করতে পারে ।
2)ত্রিরত্ন –
জৈন ধর্মে মোক্ষ লাভের তিনটি উপায়ে কথা বলা হয়েছে। একেই
ত্রিরত্ন বলা হয়। এর সহায়তাতেই পূর্ব জন্মের কর্ম ফলনষ্ট হয়ে যায়। এবং মানুষ এ
জন্মের কর্মফলের হাত থেকেও মুক্তি পেতে পারে। এই ত্রিরত্ন হল-
১)
সম্যক জ্ঞান ২) সম্যক দর্শন এবং ৩) সম্যক চরিত্র সংশয় ও দোষ মুক্ত জ্ঞানই সম্যক জ্ঞান।
3)পঞ্চমহাব্রত—
নৈতিক জীবনযাপনের জন জৈন ধর্মে পাঁচটি ব্রতের উপর জোর দেওয়া
হয়েছে। আত্মাকে পাপের হাত থেকে রক্ষার জন পাঁচটি ব্রত পালন করা প্রয়োজন। এই পাঁচটি
ব্রত হল : i)অহিংসা, ii) সত্যবলা, iii) চুরি না করা, iv) অপার গ্রহ, v) ব্রহ্মচর্য
ব্রত। উপরিউক্ত পাঁচটি ব্রত পালন করলেই জৈন ধর্ম অনুসারে মোক্ষ লাভ হয়
4)পঞ্চঅনুব্রত—
উপরিউক্ত মহাব্রতের বিধান মুখ্যত ভিক্ষুদের জন্য করা হয়েছে।
সাধারণ গৃহস্থ সংসার ত্যাগ করে ভিক্ষুক হতে পারে না। সুতরাং তাদের জন্য পঞ্চ অনুব্রতের
কথা বলা হয়েছে। পঞ্চ অনুব্রত হল পঞ্চ মহাব্রতই, কিন্তু এর পালনে গৃহস্থীদের কিছু শিথিলতা
দেওয়া হয়েছে। এই অনুব্রত হল ১) সত্য ২) চুরি না করা ৩) অহিংসা ৪) অপরিগ্রহ, ৫) ব্রহ্মচর্য
যেহেতু এই অনুব্রত গৃহস্থদের জন্য তাই এতে কঠোরতা থাকে না।
5)অনেকাত্মবেদ—
জৈন ধর্ম মনে করে জীব যেমন ভিন্ন ভিন্ন ধরণের হয় তেমনি
আত্মা ও ভিন্ন ভিন্ন ধরণের হয়। সংসারে প্রত্যেক বস্তুর মধ্যেই আত্মা আছে, কোনো বস্তুই
নির্জীব নয়।
6)নির্বাণ—
জীবের ভৌতিক অংশের নামই হল নির্বাণ। ভৌতিক অংশকে নষ্ট করার
জন্য প্রয়োজন কর্মফল থেকে মুক্তি। এর জন্য ত্রিরত্ন পালন করা আবশ্যক। নির্বাণ করে
জীব অনন্ত শক্তি লাভ করে।
7)কর্ম ও পুর্নজন্ম—
জৈন ধর্মে ঈশ্বরকে সৃষ্টি কর্তা রূপে মানা হয়নি। তাকে
সৃষ্টিকর্তা হিসাবে মানলে বিশ্বের খারাপ কাজের কর্তা হিসাবেও মানতে হবে। জৈন ধর্ম মনে
করে যে মানুষ নিজের কর্মের জন্য স্বয়ং দায়ী। মানুষের সুখ-দুঃখের কারণ তার নিজের কর্ম
এবং কৃতকর্মের ফল তাকে ভোগ করতে হয়।
8)অহিংসা—
জৈন ধর্মে অহিংসাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ধর্ম
অনুসারে কারুর প্রতি কোনো অসংগত আচরণ করাকে হিংসা মনে করা হয়
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমার উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের
প্রতিশ্রুতি
6295916282;
7076398606
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।