ধর্ম বলতে কী বোঝ? ধর্মের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করো।

Nil's Niva
0

 

প্রশ্নঃ ধর্ম বলতে কী বোঝ? ধর্মের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করো।    

                                                                                             প্রশ্ন মানঃ১২

§  ধর্মের অর্থঃ

                                 ধর্মের অর্থকে Religion শব্দের অনুবাদ হিসাবে বোঝা যায় না। ধর্ম একটি অত্যন্ত ব্যাপক ধারণা। ধর্ম ঐ মৌলিক শক্তি যা বাস্তব এবং আত্মাতিক ব্যবস্থার আধার স্বরূপ এবং যা ঐ ব্যবস্থাকে বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারও কারও মতে ধর্ম একটি সামাজিক গোষ্ঠীর সংযোগাত্মক বিশ্বাস যা কোনো অলৌকিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত ।

                                Religion শব্দের অর্থ হল অলৌকিক এবং অতিপ্রাকৃতিক শক্তির প্রতি বিশ্বাস। হিন্দু ধর্ম হল এমন একটি জ্ঞান যা পৃথক পৃথক পরিস্থিতিতে ব্যক্তিমানুষের বিভিন্ন কর্তব্য সম্পর্কে বলে, তাদের কর্তব্যপথে চলতে প্রেরণা যোগায় এবং মানবিক গুণগুলির বিকাশ ঘটায়। বেদ, উপণিষদ, গীতা পুরাণ এবং মানুষের অন্তঃকরণ হিন্দু ধর্মের মূল উৎস। এই গ্রন্থগুলি ঋষিদেরই চেষ্টার ফলশ্রুতি, তাদের চিন্তা এবং মননের জ্বলন্ত উদাহরণ। এই ধর্মগ্রন্থের মাধ্যমে ভারতীয় সামাজিক ব্যবস্থার স্বরূপ নির্ধারিত হয়। এই গ্রন্থগুলিতে ধর্মের বিস্তৃত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অনেক অর্থে ধর্মকে প্রয়োগ করা হয়েছে। ড: ইন্দ্রদেব লিখেছেনধর্মের অন্তর্গত নৈতিক নিয়ম আইন, রীতিনীতি, বৈজ্ঞানিক নিয়ম, ইত্যাদি বহু ধারণা রয়েছে। ভাগবৎ, মহাভারত ইত্যাদি গ্রন্থে ধর্মকে দেবতারূপে কল্পনা করা হয়েছে।

§  ধর্মের বিষয়বস্তুঃ

                                 মোক্ষ-র অর্থেও ধর্মের প্রয়োগ হয়েছে। বেদে মোক্ষ-র অমূর্ত তথ্য হিসাবে বর্ণনা পাওয়া যায়। ধর্মের প্রয়োগ নৈতিক কর্তব্য হিসাবেও গণ্য করা হয়েছে। মনু স্মৃতিতে ধর্মের ১০টি লক্ষণ উল্লিখিত হয়েছে। লক্ষণগুলি হল— ধৈর্য্য, ক্ষমা, ক্ষমতা, চুরি না করা, পবিত্রতা, ইন্দ্রিয় নিগ্রহ, বুদ্ধি, বিদ্যা সত্য, ক্রোধের উপর নিয়ন্ত্রণ। পুণ্য এবং নৈতিক ব্যবস্থা হিসাবেও ধর্মের প্রয়োগ করা হয়েছে। ব্যক্তির পুণ্য কর্মই মৃত্যুর পরে তার সঙ্গে থাকে। ধর্মই ব্যক্তির মধ্যে ভাল-খারাপ বিবেক জাগ্রত করে। তাকে জানিয়ে দেয় ভাল কর্মের ফল উত্তম এবং খারাপ কর্মের ফল নিম্নগামী হয়। ব্যক্তিকে সকল প্রকার কর্মফল ভোগ করতে হয়।

                                  ধর্মকে নিষ্কাম ভক্তি হিসাবেও প্রয়োগ করা হয়। গীতাতে নিষ্কাম কর্মের কথা বলা হয়েছে। তাকে বোঝানো হয়েছে যে কর্মফলের আশা না করে কর্ম করে যেতে হবে। সর্বদা নিজের কর্তব্য পথে এগিয়ে যেতে হবে। পরম সত্য অথবা ঈশ্বর হিসাবে ধর্মকে মানা হয়েছে। ধর্মের প্রয়োগ, রীতিনীতি, পরম্পরা সামাজিক নিয়মকানুন রূপেও মান্য করা হয়েছে।

                                 স্বামী বিবেকানন্দ ধর্মের অর্থ স্পষ্ট রাখতে গিয়ে লিখেছেন যে ধর্ম হল এমন বিষয় যা মানুষকে পরলোকে আনন্দ সন্ধানের জন প্রেরণা দেয়। ধর্ম কর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত ধর্ম মানুষকে রাতদিন এই আনন্দ লাভ করার জন্য কর্মপ্রেরণা যোগায়।

                                 ডঃ রাধাকৃষ্ণণের মতে যে সত্যসমূহকে আমরা দৈনন্দিন জীবনে এবং সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পালন করি, তা ধর্ম দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। এই সত্য হল জীবনে মূর্ত এবং আমাদের প্রকৃতিতে নতুন রূপ দেবার শক্তি। আবার অনেকের মতে ধর্ম জীবনের একটি পদ্ধতি ও আচরণ যা ব্যক্তিকে সমাজের সদস্য রূপে নিয়মিত কার্য করায় এবং যা ব্যক্তির ক্রমিক বিকাশ ঘটায় এবং তাকে মানব অস্তিত্বের উদ্দেশ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

                               ধর্মের উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে ভারতীয় ধর্ম গ্রন্থে ধর্মের প্রয়োগ সংকীর্ণ অর্থে করা হয়নি এবং ব্যাপক অর্থে প্রয়োগ করা হয়েছে। ধর্ম মানুষের কর্তব্য নির্ধারিত করে তাকে সত্যের পথে এগিয়ে দেয়। তার মধ্যে ঐ উচিৎ-অনুচিৎ বোধেরও সৃষ্টি করে। ধর্মের সমাজতাত্ত্বিক আলোচনায় ধর্মের অন্তর্গত সেই সব কর্তব্যকে রাখা হয়েছে যা ব্যক্তির জীবনে সকল সাফল্যের জন্য প্রয়োজন। দেশ, কালও পাত্র অনুসারে শাস্ত্রবিদগণ ব্যক্তির পৃথক পৃথক কতবের কথা বলেছেন। ব্যক্তির কাছ থেকে আশা করা হয় যে সে নিজের আশ্রম ও বর্ণকে স্মরণে রেখে নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী কর্তব্য পালন করবে। হিন্দু ধর্মের সাধারণ ভাবে দার্শনিক অর্থের উপর এবং বিশেষভাবে আচরণ পক্ষের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বাস্তবে ধর্ম জীবনকে পূর্ণতা দানকারী বিধি।

                                ধর্মের এই আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায় যে এটি ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনের ভিত্তি। ধর্মের তাৎপর্য বাঁচার সঙ্গে, বজায় রাখার সঙ্গে এবং যার দ্বারা সবকিছু ঠিক মতো সুবিন্যস্ত থাকে তাহাই ধর্ম। হিন্দু ধর্ম ব্যক্তির সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সাহায্য করে, তাদের মধ্যে মানবিক গুণ জাগ্রত করে। তাকে পরিবার সমাজ রাষ্ট্র এবং বিশ্বের প্রতি কর্তব্যের সঙ্গে সচেতন করে। পাশাপাশি তার সকল অভিযোজনেও সাহায্য করে। ব্যক্তিকে সৎপথে অর্থ উপার্জন ও জীবন উপভোগ করে পরম মোক্ষ প্রাপ্তির দিকে চালিত করে। হিন্দু ধর্মে ত্যাগ ও ভোগের আদর্শের সমন্বয় পাওয়া যায়। এখানে সাংসারিক সুখের উপভোগ এবং বাস্তব জীবনের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে ইহলোক ও পরলোককে উত্তম বানানোয় জন্য ব্যক্তিকে অগ্রসর করা হয়েছে। হিন্দু ধর্মে কর্তব্যের ধারণায় উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমার উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

6295916282; 7076398606

জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore