প্রশ্নঃ ভারতীয় সমাজে খ্রিস্ট ধর্মের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করো।
প্রশ্ন
মানঃ১২
§ খ্রিষ্টধর্মঃ
খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন ঈশা বা যিশু খ্রিস্ট।
এই ধর্ম ইহুদী এবং বৌদ্ধবাদের মিশ্রিত ও রূপান্তরিত রূপ বলে মনে করা হয়। এই ধর্মের
মূল গ্রন্থ বাইবেলে আছে যা দুটি ভাগে বিভক্ত—
ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিউ টেস্টামেন্টে। প্রাচীন গ্রীক দর্শন এবং চিন্তাধারায় ব্যাপক
প্রভাব খ্রিস্টধর্মের ওপর দেখতে পাওয়া যায় কারণ এর অনেক তথ্য খ্রিস্ট ধর্মও স্বীকার
করে। প্রারম্ভিক খ্রিস্ট ধর্মে ত্যাগ, সন্ন্যাস এবং সাধনাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে,
যা বুদ্ধবাদের প্রভাবকে স্পষ্ট করে। দীক্ষা দেওয়ার প্রথাও বৌদ্ধ ধর্মের দান। খ্রিস্টধর্মের
সঙ্গে ইসলাম ধর্মেরও নিকট সম্পর্ক রয়েছে। কারণ এই দুটির মধ্যে সমতা দেখতে পাওয়া যায়।
খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের
সংখ্যা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। ভারতে এর স্থান তৃতীয়। ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২.৩২%
এই ধর্মাবলম্বী। ইউরোপ, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় এর সংখ্যা সর্বাধিক। এই ধর্ম দুটি
ভাগে বিখ্যাত ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট।
§ খ্রিষ্টান ধর্মের প্রভাবঃ
১)নিম্ন জাতির উদ্ধারঃ
খ্রিস্ট ধর্মের প্রভাবে ভারতে নিম্ন জাতিগুলির
বিকাশের ইতিহাস শুরু হয়। জনচেতনা জাগ্রত হয়, ফলে লোকেরা এটাই স্বীকার করতে শুরু করে
যে, জাতি ব্যবস্থা কিন্তু স্বার্থান্বেষীও সামাজিক ব্যবস্থা। খ্রিস্টান মিশনারিগণ নিম্ন
জাতিগুলির সংস্কারের জন্য অনেক কিছু করেন। তাদের জন্য স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদি তৈরি
করা হয়। ভারতীয় সমাজ সংস্কারগণের মনোযোগও ঐ দিকে যায়। ফলে নিম্ন জাতিগুলির বিকাশের
অনেক সুযোগ প্রাপ্ত হয়।
২)কুরীতি এবং অন্ধবিশ্বাসের ওপর নিয়ন্ত্রণঃ
খ্রিস্ট ধর্মের প্রচারক গণ ভারতে ব্যাপ্ত সামাজিক
কুরীতি ও অন্ধবিশ্বাসের প্রতি লোকেদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেন। এর ফলে জনসাধারণের মধ্যে
জনচেতনা বৃদ্ধি পায় এবং সমাজ সংস্কারকগণ কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন
শুরু করেন।
৩)মহিলাদের অবস্থার উন্নতিঃ
খ্রিস্ট ধর্মের প্রভাবের ফলে মেয়েরা শিক্ষিত হওয়ার এবং তাদের অধিকারের প্রতি সচেতন
হওয়ার প্রেরণা লাভ করে, কারণ খ্রিস্ট ধর্ম স্ত্রী ও পুরুষকে সমান ভাবে দেখে। আর্য
সমাজ, ব্রহ্ম সমাজ ইত্যাদি সংগঠনগুলি মেয়েদের অবস্থার উন্নতির জন্য খ্রিস্ট ধর্মের
দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নানা প্রয়াস চালান।
৪)ধর্মীয় ক্ষেত্রেঃ
ভারতীয় সমাজের ওপর খ্রিস্ট ধর্মের প্রভাব বেশ গভীর ভাবেই পড়ে । ফলে এখানকার লোকের
পক্ষ, রীতিনীতিকে গুরুত্ব দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তারা ভাগ্যবাদ, ভূত-প্রেত এবং জাতিবাদের
ধারণা থেকে মুক্ত হয়ে যায়। হিন্দু ধর্মের লোকেরাও নিম্ন জাতির লোকদের সম্পর্কে ভাবতে
শুরু করে।
৫)রাজনৈতিক ক্ষেত্রেঃ
খ্রিস্ট ধর্মের প্রচারের ফলে হিন্দুগণ এবং খ্রিস্ট ধর্মে শামিল হওয়া লোকেরা একে অপরের
প্রতি ঘৃণার ভাব উৎপন্ন হতে শুরু করে। ফলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয় এবং খ্রিস্ট ধর্মে শামিল
লোকেরা পাশ্চাত্য সমাজের গতিবিধির ধারক হয়ে যায়। ধর্ম পরিবর্তনের পরিবেশ ধ্বংসাত্মক
শক্তিগুলির বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। মূলত এইগুলি সব রাজনৈতিক স্বার্থের কারণ ছিল।
৬)ব্যক্তিবাদীতাঃ
খ্রিস্ট ধর্ম গোষ্ঠী অপেক্ষা ব্যক্তিকেই বেশি
গুরুত্ব দেয়। এই কারণে ভারতীয় লোকেদের মধ্যেও ব্যক্তিবাদীতার ধারণা গড়ে ওঠে।
৭)বাস্তবাদঃ
পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত খ্রিস্ট ধর্মে বাস্তব চাহিদার উপর জোর
দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ভারতীয় সমাজে বাস্তববাদকে উৎসাহিত করা শ্রেষ্ঠত্ব হল খ্রিস্ট
ধর্মে।
৮)বৈবাহিকতায় পরিবর্তনঃ
খ্রিস্ট ধর্মের প্রভাবে ভারতে বাল্য বিবাহ, কুলীন বিবাহ, বিধবা বিবাহ ইত্যাদিতে ব্যাপক
পরিবর্তন আসে, বিবাহ কেবল দুটি পরিবারের সম্পর্ক নয় । পতি-পত্নীর মধ্যে একটি পারস্পরিক
বোঝাপড়া। ভারতে প্রেম বিবাহের প্রচলন খ্রিস্ট ধর্মের প্রভাবেই হয়।
৯)আচার আচরণগত মানদণ্ডে পরিবর্তনঃ
খ্রিস্ট ধর্ম ভারতীয় সমাজের খাওয়াদাওয়া, আদবকায়দা, বেশভূষা ও ব্যবহারকেও প্রভাবিত
করে। খ্রিস্ট ধর্মের প্রভাবে লোকেদের জীবনে কৃত্রিমতা বৃদ্ধি পায়।
স্পষ্টভাবে বলা যায় যে,
খ্রিস্ট ধর্ম ভারতীয় সমাজে বিভিন্ন পক্ষকে প্রভাবিত করে। কিন্তু তবুও এটা মানা যায়
না যে ভারতীয় সমাজের মৌলিক স্বরূপ নেই। হিন্দুগণ খ্রিস্টধর্মের তথ্যগুলি আত্মসাৎ করেছে।
বিদেশী সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়েও ভারতীয় সংস্কৃতি নিজের মৌলিক স্বরূপকে বজায়
রেখেছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, খ্রিস্ট ধর্ম হিন্দুদের নিজ ধর্মের পুনপরীক্ষণের জন্য
তার্কিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করার সুযোগ দিয়েছে।
জ্ঞ্যানজ্যোতি
কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
6295916282; 7076398606
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।