প্রশ্নঃ শব্দালঙ্কার
কাকে বলে?শব্দালঙ্কার কত প্রকার? প্রতিটি বিভাগের একটি করে উদাহরন দিয়ে তাদের সম্পর্কে
আলোচনা করো।
শব্দালঙ্কারঃ
অর্থপূর্ণ ধ্বনিসমষ্টিকে বলা হয় শব্দ। যে অলঙ্কার শব্দের ধ্বনিগত সৌন্দর্যবৃদ্ধি করে তাকে শব্দালঙ্কার বলে। এই অলঙ্কার পুরোপুরি ধ্বনিসুষমার ওপর নির্ভর করে। তাই এই ধরনের অলঙ্কারে শব্দকে বদল করা চলে না। যেমন-
“এদেশে বিদ্যার মন্দিরে সুন্দরের প্রবেশ নিষেধ।“
উপর্যুক্ত উদাহরণ দুটোতে শব্দের ধ্বনির পরিবর্তন করলে শব্দালঙ্কার বিনষ্ট হয়। প্রথম উদাহরণে যদি এদেশে না বলে এ প্রদেশে বা পুরো বাক্য পরিবর্তন করে বলা হয ‘এ প্রদেশে বিদ্যাশিক্ষার প্রথা অত্যন্ত নীরস’ তাহলে শ্লেষ ও অনুপ্রাস থাকে না। আবার দ্বিতীয় উদাহরণে শব্দের আদিতে ‘ব’ ধ্বনি, প্রথমটি ছাড়া অন্যান্য সব শব্দে ‘ম’ ধ্বনি এবং প্রথম পর্বের আদিতে ‘বাঘের’ সাথে মিল রেখে দ্বিতীয় পর্বের আদিতেও অনুরূপ শব্দ ব্যবহৃত হবার ফলে যে ব্যঞ্চনা সৃষ্টি হয় তাই অলঙ্কার।
শব্দালঙ্কারের প্রকারভেদঃ
শব্দালঙ্কার ছয় প্রকার। যেমন- অনুপ্রাস, যমক, শ্লেষ, বক্লোক্তি, ধ্বনি্যুক্তি, পুনরুক্তবদাভাস। নিম্নে এই প্রসঙ্গে আলোচনা করা হলো।
অনুপ্রাস : একই রকম বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি বারবার ব্যবহৃত হয়ে যে শব্দসাম্য সৃষ্টি করে তাকে অনুপ্রাস বলে। যেমন-
“কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিল।“
অনুপ্রাস নানা প্রকার। নিম্নে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. সরল অনুপ্রাস : একটি বা দুটি বর্ণ বারবার ধ্বনিত হলে তাকে বলে সরল অনুপ্রাস। মেযন-
“ঝুলিছে ঝলি ঝালরে মুকুতা।“
২. অন্ত্যানুপ্রাস : কবিতার চরণে শেষে যে মিল, তাকে অন্ত্যানউপ্রাস বলে। যেমন-
“নাম লেখে ওষুধের
এদেশের পশুদের।“
৩. গুচ্ছানুপ্রাস : একাধিক ব্যঞ্জনধ্বনি বারবার ধ্বনিত হলে তাকে গুচ্ছানুপ্রাস বলে। যেমন-
“না মানে শাসন, বসন বাসন অশন আসন যত।“
৪. ছেকানুপ্রাস : একাধিক ব্যঞ্জনধ্বনিগুচ্ছ যদি দুইবার মাত্র বাক্যে ব্যবহৃত হয় তাকে ছেকানুপ্রাস বলে। যেমন-
“এখনি অন্ধ বন্ধ করোনা পাখা।“
৫. শ্রুত্যনুপ্রাস : কণ্ঠ, তানু, দন্ত প্রভৃতি যে কোন এক স্থান থেকে উচ্চারিত, অথচ ভিন্ন বর্ণের সাথে মধুর সাদৃশ্য ঘটলে তাকে শ্রুত্যনুপ্রাস বলে। যেমন-
“ওই মেঘ জমছে ।“
৬. মালানুপ্রাস : অনুপ্রাসের মালা বা একাধিক অনুপ্রাস ব্যবহৃত হলে তাকে মালানুপ্রাস বলে। যেমন-
“শিশির কনায় মানিক ঘনায় দুর্বাদলে দীপজ্বলে।
শীতল শিথিল শিউলী বোঁটায় সুপ্ত শিমুর ঘুম টলে।“
যমক : যমক শব্দের অর্থ যুগ্ম। একই শব্দ বা একই রকম শব্দ দুটি দুইবার বা ততোধিকবার উচ্চারিত হয় এবং ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে তাকে যমক বলে। যেমন-
“গুরুর কাছে লব গুরু দুখ।“
যমক কাব্যে আদি, মধ্য ও অন্ত্যে ব্যবহৃত হতে পারে। এ কারণে যমককে আদি, মধ্য ও অন্ত্য এই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।
১. আদ্যযমক :
“কমলা সনে কমলাসনে কমলাপতি বিহর।“
২. মধ্যযমক :
“ভাবিলে ভবের বাজি বাজি হয় ভোর।“
৩. অন্ত্যযমক :
“শয়নে-স্বপনে, ভাবিয়া তারা।
নিমিষ-নিহত নয় তারা।।“
শ্লেষ : একটি শব্দ যখন একের বেশী অর্থে একবার বাক্যে বসে তখন শ্লেষ অলঙ্কার হয়। যেমন-
“কে বলে ঈশ্বরগুপ্ত ব্যাপ্ত চরাচর,
যাহার প্রভায় প্রভা পায় প্রভাকর।“
শ্লেষ দুই প্রকার। যেমন- ১. অভঙ্গ শ্লেষ ও ২. সভঙ্গ শ্লেষ।
শব্দকে না ভেঙে যখন দুটি অর্থে তাকে প্রয়োগ করা যায় তাকে অভঙ্গ শ্লেষ বলে। আর শব্দকে ভেঙ্গে যখন দুটি অর্থ পাওয়া যায় তাকে সভঙ্গ শ্লেষ বলে। নিম্নে উদাহরণ দেয়া হলো-
ক. অভঙ্গ শ্লেষ : অর্ধেক বয়স রাজা এক পাটরাণী।
পাঁচপুত্র স্থপতির সবে যুবজানি।।
খ. সভঙ্গ শ্লেষ : পরম কুলনি স্বামী বন্দব্যবংশ খ্যাত।
বক্রোক্তি : এক অর্থে ব্যবহার করা শব্দকে যদি প্রশ্ন বা স্বরবিকৃতির দ্বারা অন্য অর্থে সংযোজন করে ব্যাখ্যা করা যায় তাকে বক্রোক্তি অলঙ্কার। যেমন-
“কে না জানে অলঙ্কারের অঙ্গনা বিলাসী?”
ধ্বনিযুক্তি : শব্দের উচ্চারণের দ্বারা যদি অর্থের আভাস ঘটে অর্থাৎ, বাক্যের ধ্বনিরূপ দিয়ে অর্থ প্রকাশ করা হয় এবং একটি সুরের ব্যঞ্জনা সৃষ্টি হয়, তাকে ধ্বন্যুক্তি অলঙ্কার বলে। যেমন-
“নদীর জল
চমকে চল
ছলাৎ ছল !
চলবে চল
নদীর জল
ছলাৎ ছল !”
পুনরুক্তবদাভ্যাস : অভিন্ন অর্থজ্ঞাপক বিভিন্ন শব্দের প্রয়োগে যদি মনে হয় যে, পুনরুক্তি ঘটেছে এবং পরে অর্থ স্পষ্ট হলে পুনরুক্তি দোষ মনে হয় না তাকে পুনরুক্তবদাভাস অলঙ্কার বলে। যেমন-
“তনু দেহটি সাজাবো তব আমার আভরগে।“
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।