প্রশ্নঃ ইসলামীয় শিক্ষাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

Nil's Niva
0

প্রশ্নঃ ইসলামীয় শিক্ষাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

অথবা, ভারতে মধ্যযুগীয় শিক্ষার পাঁচটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

v ইসলামীয় শিক্ষাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ

দ্বাদশ শতকের শুরুতে ভারতবর্ষে বহুবার মুসলিম শাসকদের আক্রমণ ঘটে। ক্রমাগত মুসলিম আক্রমণের ফলে প্রাচীন হিন্দু যুগের অবসান হয় এবং ধীরে ধীরে মুসলিম শাসকরা ভারতবর্ষে চিরস্থায়ী শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলে। তাদের প্রভাবে ভাষা, সংস্কৃতি এবং ধর্মে বিভিন্ন পরিবর্তন আসে। মুসলিম প্রভাবিত যুগকে মধ্যযুগ বা ইসলামীয় সভ্যতার যুগ বলা হয়। মুসলিম যুগের বা মধ্যযুগীয় শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি হল-


১. লক্ষ্যঃ এই শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীর নৈতিক এবং জাগতিক জীবনের মান উন্নয়ন। ইসলাম ধর্মের আদর্শ এবং পবিত্র কোরানের নির্দেশ অনুযায়ী চরিত্রবান ও ধার্মিক মানুষ সৃষ্টি করাই ছিল এই শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য। এই শিক্ষায় কোনোরূপ বর্ণবৈষম্য ছিল না। তবে নারীশিক্ষা ছিল অবহেলিত।

২. সংগঠনঃ মুসলিম শিক্ষায় বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান ছিল। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য মক্তব এবং উচ্চশিক্ষার জন্য মাদ্রাসা গড়ে তোলা হত।

৩. পাঠক্রমঃ ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যে ছিল কোরান, মহম্মদের বাণী, ইসলামীয় ইতিহাস ইত্যাদি। এ ছাড়া আরবি সাহিত্য, ব্যাকরণ, ইতিহাস, দর্শন, গণিত, ভূগোল, অর্থনীতি, রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়েও পাঠ দান করা হত।

৪. পৃষ্ঠপোষকতাঃ মুসলিম শাসকগণ মক্তব এবং মাদ্রাসার সমস্ত খরচ বহন করতেন এবং বহু ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বৃত্তিও দিতেন।

৫. শঙ্খলাঃ মুসলিম যুগে শিক্ষকরা খুব একটা সম্মান পেতেন না। সবসময়ই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা লেগে থাকত। শিক্ষার্থীদের দৈহিক শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা ছিল।

৬. শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক: উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসাগুলি ছিল আবাসিক। আবাসিক বিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত পারস্পরিক সান্নিধ্যলাভের ফলে শিষ্যের জীবনধারার ওপর গুরুর প্রভাব প্রতিফলিত হত। হিন্দ শিক্ষাব্যবস্থার মতো গুরুসেবাকে এক্ষেত্রেও শিষ্যের অবশ্য কর্তব্য বলে মনে করা হত। সৎচরিত্র শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীর পিতা-পুত্রে সম্পর্কের ভিত্তিতে নৈতিক জীবন উন্নত হত।

৭. পরীক্ষাব্যবস্থাঃ সেই সময় আধুনিক যুগের মতো পরীক্ষাব্যবসা প্রচলিত ছিল না। কিন্তু ক্রমিক মূল্যায়ন ব্যবস্থার প্রচলন ছিল।

৮. শিক্ষার মাধ্যমঃ শিক্ষায় মাতৃভাষাকে অবহেলা করা হত। মাতৃভাষার পরিবর্তে ফারসি ও আরবি ভাষাচর্চা করা হত।

৯. সামরিক শিক্ষাঃ মুসলিম যুগে শিক্ষার্থীদের সামরিক শিক্ষা দেওয়া হত। মূলত হিন্দু রাজাদের ওপর কর্তৃত্ব করার জন্য সামরিক শিক্ষা ছিল বাধ্যতামূলক।

১০. ডিগ্রি প্রদানঃ শিক্ষাশেষে ডিগ্রিদানের ব্যবস্থা ছিল। যারা ধর্মের ক্ষেত্রে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করত তাদের 'আলিম' উপাধি, যারা যুক্তিশিক্ষায় বিশেষ জ্ঞান অর্জন করত তাদের 'ফাজিল' উপাধি এবং সাহিত্যে বিশেষ পারদর্শীদের 'কাবিল' উপাধি দেওয়া হত।

১১.  শিক্ষার সুযোগঃ মুসলিম যুগে বিশ্ববিদ্যালয়ের খুবই অভাব ছিল। হিন্দুরা তেমনভাবে শিক্ষার সুযোগ পেত না। মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত মুসলিমরাই শিক্ষার সুযোগ পেত।

১২. নারীশিক্ষাঃ মুসলিম যুগে পর্দাপ্রথা চালু হলেও নারীশিক্ষার প্রচলন ছিল। নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত ছেলেমেয়ে একসঙ্গে পড়লেও একটি বয়সের পর মেয়েদের শিক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হত। কেবল অভিজাত পরিবারের মেয়েরাই গৃহে শিক্ষালাভের সুযোগ পেত।


জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore