প্রশ্ন- বেকারত্ব দূরীকরণে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন কেন?
ভারতবর্ষের বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বেকারত্ব একটি অভিশাপ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ডিগ্রিধারী যুবকের সংখ্যা বাড়লেও শিল্পের উপযুক্ত শ্রমশক্তির অভাব রয়েছে। এই বৈপরীত্য দূর করতে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার প্রয়োজন।

বেকারত্ব দূরীকরণে
শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাঃ
১. পুঁথিগত বিদ্যার
পরিবর্তে কর্মমুখী শিক্ষা: আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা
মূলত পরীক্ষা-কেন্দ্রিক ও তাত্ত্বিক। শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি অর্জন করলেও কর্মক্ষেত্রের
ব্যবহারিক প্রয়োগ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমনভাবে সংস্কার করা প্রয়োজন
যেখানে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক হবে, যাতে একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করেই স্বনির্ভর
হতে পারে।
২. দক্ষতা ও শিল্পের
চাহিদার মেলবন্ধন: বর্তমান শ্রমবাজার বা শিল্পের চাহিদা দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু পাঠ্যক্রম সেই তুলনায় অনেক পিছিয়ে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা সায়েন্স বা আধুনিক প্রযুক্তির সাথে পাঠ্যক্রমের সমন্বয়
ঘটানো প্রয়োজন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প সংস্থাগুলির মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তুললে
শিক্ষার্থীরা বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে দক্ষ করে তুলতে পারবে।
৩. সৃজনশীলতা ও উদ্যোক্তা
তৈরির মানসিকতা: বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের
কেবল 'চাকরি প্রার্থী' হিসেবে গড়ে তোলে। সংস্কারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্যোক্তা
হওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। সৃজনশীল চিন্তা ও ব্যবসায়িক
বুদ্ধির বিকাশ ঘটলে তারা কেবল চাকরি খুঁজবে না, বরং অন্যদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ
তৈরি করবে।
৪. বৃত্তিমূলক নির্দেশনার
অভাব: অনেক শিক্ষার্থী জানে না তাদের সহজাত ক্ষমতা
অনুযায়ী কোন পেশাটি তাদের জন্য সঠিক। বিদ্যালয়ে স্তর থেকেই পেশাগত নির্দেশনা বা 'ভোকেশনাল
গাইডেন্স' প্রদান করা প্রয়োজন। এর ফলে শিক্ষার্থীরা লক্ষ্যহীনভাবে পড়াশোনা না করে নির্দিষ্ট
লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারবে, যা শিক্ষিত বেকারত্বের হার কমাবে।
৫. নৈতিকতা ও শ্রমের প্রতি মর্যাদা: আমাদের সমাজে কেবল সাদা কলারের চাকরির প্রতি মোহ রয়েছে এবং কায়িক শ্রমকে নিচু চোখে দেখা হয়। শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে শ্রমের মর্যাদা শিক্ষা দিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা যে কোনো সম্মানজনক বৃত্তিতে যোগ দিতে দ্বিধাবোধ না করে।
পরিশেষে বলা যায়, বেকারত্ব
কেবল একটি অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এটি একটি শিক্ষাগত ব্যর্থতাও বটে। ২০২০ সালের জাতীয়
শিক্ষানীতিতে (NEP 2020) এই সংস্কারের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। যদি শিক্ষা ব্যবস্থাকে জীবনমুখী,
প্রযুক্তি নির্ভর এবং দক্ষতা ভিত্তিক করা যায়, তবেই বেকারত্বের এই পাহাড়প্রমাণ সমস্যা
থেকে ভারত মুক্তি পাবে।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

