Q: Role of Environmental factors in contemporary
International Relations.
v আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পরিবেশগত
কারণসমূহের ভূমিকাঃ
সমসাময়িক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে
পরিবেশগত কারণসমূহ একটি অপরিহার্য এবং কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে। একসময় পরিবেশগত
বিষয় গুলিকে (যেমন দূষণ বা স্থানীয় সংরক্ষণ) কেবল অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখা হলেও,
আজ এগুলি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, কূটনীতি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার
প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত। পরিবেশগত বিষয়গুলো বর্তমানে রাষ্ট্রগুলোর
পররাষ্ট্র নীতি, নিরাপত্তা কৌশল এবং বৈশ্বিক সহযোগিতার কাঠামোকে গভীরভাবে প্রভাবিত
করছে।
১. নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে পরিবেশগত অবনতিঃ ঐতিহ্যগতভাবে সামরিক হুমকিকে নিরাপত্তা
হিসেবে দেখা হলেও, বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন, পানির অভাব, এবং মরুকরণের মতো পরিবেশগত
সমস্যাগুলো অ-সামরিক নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট
চরম আবহাওয়া, খরা বা জমির উর্বরতা হ্রাস বিভিন্ন অঞ্চলে সম্পদ নিয়ে অভ্যন্তরীণ ও
আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংঘাতের জন্ম দিতে পারে। এটি খাদ্য ও জলের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে
রাষ্ট্রগুলোর স্থিতিশীলতাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে।
২. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বহুপাক্ষিকতার প্রয়োজনীয়তাঃ পরিবেশগত সমস্যাগুলি যেমন গ্রিনহাউস
গ্যাস নির্গমন, মহাসাগরের দূষণ বা জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি—এগুলো কোনো একক রাষ্ট্রের সীমানায়
আবদ্ধ নয়; এগুলো আন্তঃসীমান্তীয়। এই সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার জন্য রাষ্ট্রগুলোর
মধ্যে বিস্তৃত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বহুপাক্ষিকতা অপরিহার্য। প্যারিস চুক্তির মতো
বৈশ্বিক চুক্তিগুলোর সফল আলোচনা এবং বাস্তবায়নই প্রমাণ করে যে পরিবেশগত সমস্যাগুলো
আধুনিক কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই সহযোগিতা
সহজতর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. পরিবেশগত অভিবাসন ও মানব নিরাপত্তাঃ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সমুদ্রপৃষ্ঠের
উচ্চতা বৃদ্ধি এবং দীর্ঘস্থায়ী পরিবেশগত অবনতি বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষকে তাদের বাসস্থান
থেকে বাস্তুচ্যুত করছে। এই পরিবেশগত অভিবাসন
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন মানবিক এবং নিরাপত্তা সংকট তৈরি করেছে।
বিপুল সংখ্যক জলবায়ু শরণার্থীর আগমন প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ সম্পদ, শ্রমবাজার
এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার উপর চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উত্তেজনা
এবং নতুন নীতি প্রণয়নের প্রয়োজন দেখা দেয়।
৪. অর্থনৈতিক নীতি ও বাণিজ্য কাঠামোর পরিবর্তনঃ পরিবেশ রক্ষার নীতিগুলো বিশ্ব অর্থনীতি
এবং বাণিজ্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। অনেক উন্নত দেশ কার্বন নির্গমন কমানোর লক্ষ্যে
এমন নিয়ম প্রবর্তন করছে যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে। যেমন, কার্বন ট্যাক্স
বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো উদ্যোগগুলো বাণিজ্য অংশীদারদের পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া
গ্রহণ করতে বাধ্য করছে। ফলস্বরূপ, রাষ্ট্রগুলো নবায়নযোগ্য প্রযুক্তি এবং পরিবেশবান্ধব
উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন প্রতিযোগিতা ও সুযোগ সৃষ্টি
করছে।
৫. উত্তর-দক্ষিণ বিভেদকে গভীর করাঃ পরিবেশগত সমস্যাগুলো, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নত
দেশ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান
ঐতিহাসিক বিভেদকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো যুক্তি দেয় যে শিল্পায়নের
মাধ্যমে উন্নত দেশগুলোই পরিবেশের প্রধান ক্ষতিকারক। তাই পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়
অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের প্রধান দায়িত্ব উন্নত দেশগুলোর। জলবায়ু
ক্ষতিপূরণের মতো বিতর্কগুলো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মঞ্চে অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার এবং
ঐতিহাসিক দায়িত্ব নিয়ে আলোচনাকে তীব্র করেছে।
অতীতে পরিবেশ একটি 'নরম ইস্যু' হিসেবে
বিবেচিত হলেও, বর্তমানে এটি কৌশলগত, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি 'কঠিন
ইস্যু'-তে পরিণত হয়েছে। পরিবেশগত সমস্যাগুলো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তাত্ত্বিক কাঠামোকে
চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে এবং রাষ্ট্রগুলোকে কেবল সামরিক শক্তির পরিবর্তে পারস্পরিক সহযোগিতা
ও দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে বাধ্য করছে।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

