লোকসংস্কৃতির শ্রেণিবিভাগ বা উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করো। #Suggestion #NBU

Nil's Niva
0

প্রশ্ন- লোকসংস্কৃতির শ্রেণিবিভাগ বা উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করো।

যে-কোনো সমাজ, সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পরিচয় হল শিল্প-ভাস্কর্য সাহিত্য। একথা বললে অত্যুক্তি হয় না যে সাহিত্যের মাধ্যমেই সংস্কৃতির স্বরূপ উদ্‌ঘাটিত হয়ে থাকে। সেখানে উচ্চ সংস্কৃতির সঙ্গে নিম্ন সংস্কৃতির এক সুস্পষ্ট পার্থক্য লক্ষ করা যায়। তাই অনেক সময় লক্ষ করা যায় যে, একটা অন্ত্যজ মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে লোকসংস্কৃতির উপাদানগুলি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেই লোকসংস্কৃতির উপাদানগুলিকে আমরা মোটামুটিভাবে জড়িত। সেই লোকসংস্কৃতির উপাদানগুলিকে আমরা মোটামুটি আলোচনা করব-

Ø বাকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতি:

লোকসংস্কৃতির এই ধারাটি মৌখিক এবং ঐতিহ্য নির্ভর, যা দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছে। ব্যক্তিমানুষেরা গোষ্ঠীবদ্ধভাবে তথা সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করে। সমাজে বসবাস করাকালীন তারা দৈনন্দিন জীবনে কাজের মধ্য দিয়ে যে অভিজ্ঞতালাভ করে সেই অভিজ্ঞতার বাস্তব এবং সর্ব্বৈ সত্যরূপ বাক্সয় হয়ে তাদের কর্মপদ্ধতির মধ্য দিয়ে বাইরে প্রকাশিত হয়।

লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী মৌখিক সত্তাটি ধরা পড়ে এই বাকেন্দ্রিক বা কথাকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতির মধ্যে। সাধারণত, ছড়া, ধাঁধা, প্রবাদ, লোককথা, লোকগীতি, মন্ত্র, গীতিকা, লোকনাট্যের সংলাপ অংশ এই শাখার অন্তর্গত।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,

"ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো

বর্গী এলো দেশে

বুলবুলিতে ধান খেয়েছে

খাজনা দেবো কিসে"

দোলনায় ঘুমপাড়াতে গিয়ে মায়ের মুখের এই যে ছড়া, কিংবা 'একটুখানি মামা, গা বোঝাই জামা' (পেঁয়াজ) ধাঁধাটি অথবা 'জন জামাই ভাগ্না, তিন নয় আপনা'-প্রবাদটি এই বাকেন্দ্রিক শ্রেণির উদাহরণ।

Ø বস্তুকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতি:

লোকসমাজের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত উপাদানকেই বস্তুকেন্দ্রিক উপাদানের পর্যায়ভুক্ত করা হয়ে থাকে। সেখানে বাড়ি-ঘর, খাদ্য, পানীয়, পোশাক-পরিচ্ছদ, শিকার দ্রব্য, আসবাবপত্র, বাদ্যযন্ত্র, যানবাহন প্রভৃতির পরিচয় উঠে আসে।

একটি বিশেষ অঞ্চলের মানুষেরা এক বিশেষ ধরনের উপাদানের মাধ্যমে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে থাকে। পাহাড়ি অঞ্চল তার সমতলভূমির পার্থক্য ও ব্যবহৃত দ্রব্যাদির দ্বারা সম্পৃক্ত হয়ে ওঠে বাংলার লোকসমাজে। খাদ্যপানীয়ের মধ্যে রয়েছে ভাত, ডাল, রুটি, চিড়ে, মুড়ি, খই, নাড়ু, পিঠে, দুধ, ঘোল, খেজুর, তালের রস, খেজুরের গুড় ইত্যাদি। অঞ্চলভেদে এই লোকমানুষের খাদ্যেরও পরিবর্তন ঘটে।

Ø অঙ্গভঙ্গিকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতি:

অঙ্গভঙ্গি লোকসমাজের এক বিশেষ Tradition, লোকসমাজের মানুষজন এক বিশেষ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তাদের বক্তব্য বিষয়ক উপস্থাপিত করে থাকেন। বলা যায়, শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এক এক বিশেষ ভঙ্গির মধ্য দিয়ে তাদের বক্তব্য বিষয়কে ফুটিয়ে তোলেন।

অঙ্গভঙ্গিকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতি বংশপরম্পরায় প্রবাহমান, যা সময়ের প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে উন্নতরূপে পুরোনো Tradition-এর ছায়াপাত ঘটে। লোকসমাজের জীবনচিত্রে তাই এই সংস্কৃতির প্রভাব অবশ্যস্বীকার্য। রাক্ষস নৃত্য, বুড়োবুড়ি নৃত্য, বাউল ও ফরিরি নৃত্য, গাজন নৃত্য ও কাঠি নৃত্য, রণপা প্রভৃতিকে অঙ্গভঙ্গিকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতির পর্যায়ভুক্ত করা হয়ে থাকে। কেও টিম জানাজ

Ø বিশ্বাস-সংস্কার বা আচার-অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতি:

লোকসংস্কৃতির অনেক উপাদানের সৃষ্টি হয়েছে বিশেষ বিশেষ আচার-ব্যবহার, বিশ্বাস-সংস্কার ইত্যাদি থেকে। এই পর্যায়ের মধ্যে পড়ে লোকাচার, লোকসংস্কার, লোকউৎসব, লোকচিকিৎসা, লোকবিজ্ঞান, লোকমেলা, লোকপার্বণ, লোকপূজা, গাছে গাছে বিয়ে দেওয়া ইত্যাদি।

মূলত অনুকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে বংশ বা লোকপরম্পরায় মৌখিক রীতিতে লোকসংস্কৃতির এই শাখা বাহিত হয়। মানসিক ব্যাপার জড়িত থাকার ফলে এর প্রভাব সমাজের খুব গভীরে। বিজ্ঞানের ব্যাপক বিস্তার ও লোকসংস্কৃতির এই ধারাকে অবলুপ্ত করতে পারে না।

Ø খেলাধুলাকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতি:

এই শাখাটি একটি মিশ্রশাখা। এর মধ্যে একই সঙ্গে অঙ্গভঙ্গিকেন্দ্রিক ও বাকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতির যেমন যোগ আছে, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে আছে বিশ্বাস-সংস্কারের দিকটিও।

সাধারণত নিরক্ষর জনসাধারণ নিজেদের শরীরচর্চার জন্য এবং আনন্দবিধানের জন্য বহু খেলাধুলা, ব্যায়াম ও প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেছে। এই খেলাধুলাগুলোকে এককথায় লোকক্রীড়া বলে। এই লোকক্রীড়াগুলোই এই পর্যায়ের মুখ্য উপাদান।

উদাহরণস্বরূপ-হা-ডু-ডু, ডাংগুলি, নোন্তা, বউ বাসন্তি, কানামাছি, কুমির-ডাঙা, বাঘবন্দী, নৌকাবাইচ, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগ লড়াই, দাড়িয়াবান্ধা, খোটান ইত্যাদি।

Ø অঙ্কন ও লিখনকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতি:

লোকসংস্কৃতি যদিও মূলত অলিখিত বা মৌখিক। তবু এর একটা দিক অঙ্কন ও লিখনকেন্দ্রিক। লোকমানুষের জীবনচেত্রে লিখন বা অঙ্কনকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতির গুরুত্ব অপরিসীম।

লিখন-অঙ্কনকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আল্পনা, দেয়াল চিত্র, মাটির ঘট বা সরার উপর অঙ্কিত, পিঁড়ির উপর অঙ্কিত মুশারি বা আসনে অঙ্কিত চিত্র এই পর্যায়ভুক্ত। বিশেষ অনুষ্ঠান বা উৎসবে লোকমানুষেরা তাদের আঙিনায় আল্পনা দিয়ে সজ্জিত করে তোলে। তা ছাড়া ঘরের মাটির দেয়ালে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি, গাছপালা, পশুপাখি প্রভৃতির চিত্র অঙ্কন করে থাকে।

বলা যায়, এগুলি লোকমানুষের জীবনের অনুসঙ্গে এক ভিন্ন সংস্কৃতির স্বাক্ষর বহন করে। নিম্নতর সমাজের মানুষেরা নবান্ন উৎসবের সময় দেয়ালের গায়ে বা বাড়ির উঠানে চালের গুঁড়ো দিয়ে আলপনা আঁকে। রাধাকৃষ্ণের যুগলমূর্তিও তারা দেয়ালের গায়ে এঁকে রাখে। তা ছাড়া ছোটো-ছোটো কার্পেটের গায়ে নিজের অব্যক্ত কামনার কথা অঙ্কন করে দেয়ালে মেরে রাখে। লোকসমাজের জীবনচিত্রে যা যথাযথভাবে মানিয়ে যায়। এককথায় বলা যায়, এই সমস্ত উপাদান ছাড়া লোকসমাজের জীবনচিত্র যেন শ্রীহীন হয়ে পড়ে।

 


জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore