প্রশ্ন ঃ সাতবাহন শাসনব্যবস্থা কেমন ছিল আলোচনা করো।
অথবা, ভারতীয় শসনব্যবস্থার ইতিহাসে
সাতবাহন বংশের অবদান মূল্যায়ন করো।
ভারত ইতিহাসে সাতবাহনদের শাসনকাল
(খ্রিস্টপূর্ব 60 অব্দ থেকে আনুমানিক 195 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত) এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
প্রায় দুশো বছরের ওপর সাতবাহনরা ভারতে রাজত্ব করেছিল। এই বংশের শাসনকালেই সর্বপ্রথম
দাক্ষিণাত্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং একটি সুদৃঢ় শাসনকাঠামো গড়ে উঠেছিল। মৎস পুরাণ,
বায়ু পুরাণ, গুণাঢ্যের 'বৃহৎকথা', টলেমির 'ভূগোল', গৌতমী বলশ্রীর নাসিক প্রশস্তি,
মাতা নায়নিকার নানাঘাট শিলালিপি, জুনাগড় ও হাতিগুম্ফা শিলালিপি সাতবাহন শাসনব্যবস্থা
সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিবেশন করে।
- Ø রাজার ক্ষমতা ও মর্যাদা:
সাতবাহন শাসনব্যবস্থা ছিল রাজতান্ত্রিক
এবং রাজপদ ছিল বংশানুক্রমিক। সাতবাহন রাজাদের নামের সঙ্গে মায়ের নাম জড়িত থাকলেও পিতার
মৃত্যুর পর জৈষ্ঠপুত্র সিংহাসনে বসতেন। এই কারণে সাতবাহন রাজবংশের ইতিহাসে ভ্রাতৃবিরোধের
কোনো নজির পাওয়া যায় না। রাজারা কোনো আড়ম্বরপূর্ণ উপাধি ধারণ করতেন না-তাঁরা 'রাজন'
উপাধি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতেন। ধর্মশাস্ত্রে রাজাকে ধর্মের রক্ষক বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
রাজা ছিলেন সর্বশক্তির আধার। তিনি ছিলেন প্রধান শাসক, প্রধান সেনাপতি, প্রধান বিচারক
ও প্রধান আইনপ্রণেতা। এ সত্ত্বেও তিনি স্বৈরাচারী ছিলেন না। তাঁর রাজকীয় ক্ষমতা শাস্ত্রীয়
নির্দেশ ও প্রচলিত রীতিনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। রাজার কর্তব্য ছিল দেশরক্ষা, বৈদেশিক
আক্রমণ প্রতিরোধ, যুদ্ধক্ষেত্রে সেনা পরিচালনা, ধর্মরক্ষা, ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও জনহিতকর
কর্মসূচি গ্রহণ করা।
- Ø সামন্তশাসিত প্রদেশ:
সাতবাহন রাজ্যে দু-ধরনের শাসনব্যবস্থা
প্রচলিত ছিল-(i) সামন্তশাসিত অঞ্চল। (ii) রাজার প্রত্যক্ষ শাসনাধীন অঞ্চল। সামন্তশাসিত
অঞ্চলের শাসনভার থাকত সামন্তদের হাতে। রাজার অধীনে থেকে তাঁরা শাসনকার্য পরিচালনা করতেন।
উচ্চস্তরের সামন্তরা 'রাজা' উপাধি ধারণ করতেন-এমনকি অনেক সময় নিজ নামে 'মহাসেনাপতি',
'মহারথী', 'মহাভোজ' প্রভৃতি বিভিন্ন স্তর ছিল। এইসব সামন্তরা রাজপরিবারের সঙ্গে বিবাহসূত্রে
আবদ্ধ হতে পারেন।
- Ø প্রশাসনিক বিভাগ:
সাতবাহনরা মৌর্য প্রশাসনিক বিভাগকে
অপরিবর্তিত রেখেছিল। রাজার প্রত্যক্ষ শাসনাধীন অঞ্চল কয়েকটি জনপদে বিভক্ত ছিল। জনপদ-এর
শাসনকর্তা ছিলেন যুবরাজ। আহর-এর শাসনভার ছিল আমাত্য নামক কর্মচারীদের ওপর। গ্রাম ছিল
শাসনব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তর। কতকগুলি গ্রাম নিয়ে তৈরি হত আহর। গ্রামের শাসনভার ছিল
গ্রামিক নামক কর্মচারীর ওপর। গ্রামিক একজন সামরিক ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর অধীনে 12টি রথ,
৭টি হাতি, 25টি ঘোড়া এবং 45 জন পদাতিক সেনা নিয়ে গঠিত একটি বাহিনী থাকত। গ্রামাঞ্চলে
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
- Ø অন্যান্য কর্মচারী :
উপরিউক্ত রাজকর্মচারী ছাড়াও সাতবাহনদের
বিভিন্ন লিপি থেকে আরো কিছু কর্মচারীর নাম জানা যায়। তাঁরা হলেন-রাজামাত্য, মহামাত্র,
ভান্ডাগারিক, লেখক, নিবন্ধকার, দূতক, হৈরণিক, তলবর, মহাতলবর প্রমুখ। রাজামাত্য ছিলেন
রাজার বিশেষ আস্থাভাজন এবং উপদেষ্টাদের একজন। মহামাত্র ছিলেন বিশেষ বিশেষ কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
ভান্ডাগারিক হলেন ভান্ডারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী। লেখক রাজকীয় দলিল-দস্তাবেজ রচনার
দায়িত্বে ছিলেন। দূতক হলেন রাজার দূত। তলবর ছিলেন প্রহরী এবং মহাতলবর পুলিশ বিভাগের
সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
- Ø সামন্তপ্রথা:
সাতবাহন রাজ্যে ব্রাহ্মণ, বৌদ্ধ,
শ্রমণ এবং রাজকর্মচারীদের করমুক্ত গ্রাম বা জমি নেওয়া হত। এইসব স্থান রাজকীয় প্রশাসনের
অন্তর্ভুক্ত ছিল না। দানগ্রহীতা ব্রাহ্মণ, শ্রমণ বা রাজকর্মচারীরা এইসব স্থানের শাসনকার্য
পরিচালনা করতেন। শক্তিশালী সামন্তরা 'রাজা' উপাধি নিতেন এমনকি নিজ নামে মুদ্রা প্রবর্তন
করতেন।
- Ø রাজস্বব্যবস্থা:
ভূমিরাজস্ব ছিল সরকারি আয়ের প্রধান
উৎস। এ ছাড়া সীতা জমি, লবণ শুল্ক, জরিমানা প্রভৃতি থেকেও সরকারের আয় হত। নগদ অর্থ বা
শস্যের মাধ্যমে রাজস্ব দেওয়া যেত। সৈন্য ও সরকারি কর্মচারীরা বেতনের পরিবর্তে জমি ভোগ
করতেন। কৃষকদের অবস্থা ভালো ছিল না। সামন্তপ্রথার দরুন তারা নানাভাবে শোষিত হত। সরকারি
কর্মচারীরা মাঝে মধ্যেই কৃষকের জমিতে হস্তক্ষেপ করত।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।