সাঁচী স্তূপের বৈশিষ্ট্যসহ আলোচনা কর

Nil's Niva
0

প্রশ্ন- সাঁচী স্তূপের বৈশিষ্ট্যসহ আলোচনা কর। 

উত্তরঃ সাঁচীতে ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলে যে স্তূপগুলি আছে তার মধ্যে সাঁচী স্তূপ সর্ববৃহৎ। সাঁচীর নিকটবর্তী অন্যান্য স্তূপগুলিকে 'ভিলসা স্তূপ সমুদয়' নামে অভিহিত করা হয়। সাঁচীতে ১০ মাইল দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে ৬ মাইল সীমানার মধ্যে অবস্থিত অঞ্চলে পাঁচ-ছয় গুচ্ছ স্তূপ রয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি স্তূপের অস্তিত্ব দেখা যায়। এদের অধিকাংশ অশোকের সমকালীন। কয়েকটি পরবর্তীকালের।

বিখ্যাত চিনদেশীয় পরিব্রাজক হিউয়েন সাং-এর ভ্রমণ-বৃত্তান্তে সাঁচী স্তূপের কোন উল্লেখ নেই। 'মহাবংশ' গ্রন্থে একমাত্র সাঁচী স্তূপের উল্লেখ পাওয়া যায়। বুদ্ধের দেহাবশেষ নিয়ে যে আটটি স্তূপ নির্মিত হয় তার মধ্যেও সাঁচীর উল্লেখ নেই। কেউ কেউ মনে করেন, সাঁচী স্তূপ বুদ্ধের দেহাবশেষের উপর নির্মিত হয়নি। ফার্গুসন বলেছেন, অশোকের নির্মিত ৮৪,০০০ স্তূপের মধ্যে একটি ছিল সাঁচী স্তূপ। কিন্তু তখন ঐ অঞ্চলের নাম ছিল বিদিশা। বিদিশার স্তূপের বিবরণ অনেক ভ্রমণবৃত্তান্তে উল্লিখিত হয়েছে।

সাঁচীর বিখ্যাত বৌদ্ধস্তূপটিরর নির্মাণ অশোকের আমলে (আনুমানিক ২৭৩-২৩২ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দ) বলে ধরা হয়। তখন একটি আকারে ক্ষুদ্র ছিল এবং এটি ইট দ্বারা নির্মিত ছিল। পরে শুঙ্গ আমলে এর আকার দ্বিগুণ হয় এবং ইটের পরিবর্তে পাথর দ্বারা তা আবৃত করা হয়।

সাঁচীর সর্ববৃহৎ স্তূপটির ব্যস ১০৬ ফুট, উচ্চতা ৪২ ফুট। শীর্ষভাগ ক্রমে সূক্ষ্ম হয়ে যাওয়ায় ঐ স্থানের পরিসর মাত্র ৩৪ ফুট। এই স্তূপটিকে বলা হয় 'কনক-হেড্ডা স্তূপ'। এর বেষ্টনীর ভগ্নাবশেষ অবশিষ্ট রয়েছে। পাথরের প্রাচীর বেষ্টিত স্তূপটির উপর কোন উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম না থাকলেও এর চারটি তোরণ অপূর্ব ভাস্কর্যমন্ডিত। স্তূপটি নয়; বিশালত্বই এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। তোরণে প্রবেশপথে স্তূপগাত্রে তথাগতের মূর্তি অঙ্কিত আছে। তোরণগুলি চতুষ্কোণ স্তম্ভের উপর নির্মিত। এর শীর্ষভাগে তিনটি আলঙ্কারিক খিলান রয়েছে। অলঙ্কারবহুল খিলানগুলির একের উপর ব্যবধান রেখে অপরটি সন্নিবিষ্ট হয়েছে।

পশ্চিমদিকের তোরণের খিলানের মধ্যে বুদ্ধের সপ্তজন্মের সাতটি প্রতিকৃতি উৎকীর্ণ আছে। প্রথম খিলানের এই বর্ণনার পর দ্বিতীয় বা মধ্য খিলানে মৃগদাবে বুদ্ধের উপদেশ দান কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। তৃতীয় বা সর্বনিম্ন খিলানের চিত্র বর্ণনাত্মক।

সাঁচী স্তূপে একটি বোধিবৃক্ষের সামনে বেদীকার উপর ছত্র স্থাপিত হয়েছে। এর পাশে বাদক ও ভক্তবৃন্দ আনন্দ উৎসবে মগ্ন। বিপরীত দিকে একটি হস্তী ও মার- পরাভব চিত্র উৎকীর্ণ আছে। এই তোরণটির উপরের খিলানটির নিম্নভাগে একসারি হস্তী এবং এর উপরে উৎকীর্ণত্মল স্তম্ভ ও সিংহমূর্তি সংযুক্ত হয়েছে। সাঁচী স্তূপের দক্ষিণ তোরণের কাছে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত আলোকস্তম্ভ রয়েছে। দক্ষিণ তোরণের উপর হিন্দুদের মহালক্ষ্মী মূর্তির মত একটি মূর্তি স্থাপিত আছে, যাকে বৌদ্ধরা মায়াদেবীর মূর্তি বলে থাকেন। এই তোরণটিও অলঙ্কারবহুল। সাঁচী স্তূপের পূর্বদিকের তোরণটিও বহু অলঙ্কারশোভিত। উত্তরদিকের তোরণটিতে সবচেয়ে উৎকৃষ্ণ শিল্পনৈপুণ্য লক্ষ্য করা যায়। এর ঊর্ধ্বভাগের ধর্মচক্রটির অর্ধাংশ ভেঙে গেলেও মূল রূপটির সৌন্দর্য অনুভব করা যায়। এর নিম্নভাগের প্রথম খিলানটিতে বৃক্ষতলে উপদেশদানরত বুদ্ধ ছাড়াও নভোমন্ডলে বিচরণশীল বুদ্ধমূর্তি উৎকীর্ণ হয়েছে। দ্বিতীয় খিলানে তথাগতকে মর্কটরাজের মধুপর্ণ পাত্র প্রদানের দৃশ্য রয়েছে। বুদ্ধের জন্মগ্রহণের কাহিনীর প্রতীক পদ্ম, গৃহত্যাগের প্রতীক ছত্রশোভিত অশ্ব, বুদ্ধত্বলাভের প্রতীক বোধিবৃক্ষ এখানে প্রকাশ করা হয়েছে। ধর্ম ব্যাখ্যা, প্রতীক ধর্মচক্র এবং জাতক কাহিনীর কিছু চিত্রও এখানে উৎকীর্ণ আছে।

এ. এল. ব্যাসাম মন্তব্য করেছেন-সাঁচীর শিল্প তথা ভাস্করদের সৃষ্টিধর্মী কাজ দেখে বোঝা যায়, তাঁরা শিল্পের মাধ্যম ও হাতিয়ারকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হন। সাঁচীর ভাস্কর্যে ছিল ভারহৃতের তুলনায় জীবন্ত এবং প্রথম থেকেই বলিষ্ঠরূপে প্রতীয়মান।

জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

6295916282; 7076398606

জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore