প্রশ্ন- কৌটিল্যের দন্ডনীতি সম্পর্কে আলোচনা করো।
[Discuss Kautilya's Dandanithi.]
- Ø কৌটিল্যের দন্ডনীতি :
১৯০৫ সালে শ্যামশাস্ত্রী মহাশয়ের দ্বারা
আবিষ্কৃত কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র গ্রন্থটি প্রমাণ করে যে প্রাচীন রাষ্ট্রচিন্তার আলোচনায়
ভারতীয় উপমহাদেশের অবদান গ্রিস-রোমের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। ধর্মীয় প্রভাব মুক্ত এই
গ্রন্থের মূল লক্ষ্য ছিল একটি ঐক্যবদ্ধ সমৃদ্ধশালী রাজ্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে সম্রাটকে
সুপরামর্শ দান এবং প্রকৃতির দেওয়া জমির সদ্ব্যবহার, সংরক্ষণ ও মানুষের প্রয়োজনে তাকে
কাজে লাগানোর জন্য উপদেশ দেওয়া। কৌটিল্য একটি আদর্শ জনকল্যাণকর রাষ্ট্রের সাতটি উপাদানের
কথা উল্লেখ করেছেন এবং যেগুলিকে একটি জীবদেহের বিভিন্ন অঙ্গের সঙ্গে তুলনা করেছেন..।
যেগুলি হল- ১. রাজা বা স্বামী, ২. মন্ত্রী বা অমাত্য, ৩. দেশ বা জনপদ, ৪. দুর্গ বা
Fort, ৫.কোশ বা ট্রেজারি, ৬. দন্ড বা সেনাবাহিনী, ৭. মিত্র বা Ally। এই উপাদান গুলি
একে অপরের পরিপূরক।
সেনাবাহিনীর সাহায্যে শাসক দণ্ডনীতি
প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রে অরাজকতা সৃষ্টিকারি কোনো ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদানের দ্বারা
সমাজে যেমন ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে, আবার দণ্ডনীতি প্রয়োগের মাধ্যমে বহিঃশত্রুর আক্রমণ
এর হাত থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষা করে ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখে শাসক। অর্থাৎ
সেনাবাহিনীর সাহায্যেই শাসক তার রাষ্ট্রের মধ্যে আইনসমূহ প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে পারে।
এই কারণে কৌটিল্য সেনাবাহিনী ও দণ্ড কে একে অপরের সমার্থক বলে মনে করেছেন।
অন্যদিকে প্রতিবেশী কোনো দেশের সঙ্গে
কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের যে চারটি কৌশলের (সাম, দান, দন্ড, ভেদ) কথা কৌটিল্য বলেছেন
তার মধ্যে দন্ড তথা শাস্তি প্রদান অন্যতম। এই নীতি প্রয়োগ করে প্রতিবেশী কোনো দেশের
আনুগত্য বলপূর্বক আদায় করা হয়।
দণ্ডনীতি হলো রাজনীতি বিজ্ঞান বা পলিটিক্স।
তিনটি বিজ্ঞান যথা দর্শন ত্রয়ী বেদ ও অর্থনীতিকে অর্জন ও সংরক্ষণ করার জন্য যে অস্ত্রটির
সর্বাগ্রে প্রয়োজন হয় তা হল দন্ডনীতি। মহাভারতের যুগেও দন্ডনীতির প্রচলন ছিল। মহাভারতে
বলা হয়েছে "সবাই যখন ঘুমায় দন্ড তখন জেগে থাকে এবং সকলের যথাযথ সুরক্ষার ব্যবস্থা
করে।" কৌটিল্য দণ্ডনীতি কে একাধিক অর্থে ব্যবহার করেছেন; দন্ড যেমন শাস্তির সমর্থক,
আবার তা সুরক্ষা-প্রতিরক্ষা ও আইনের প্রতিভূ। কৌটিল্য দণ্ডের প্রধানত তিনটি প্রকরণ
উল্লেখ করেছেন: (ক) অর্থদণ্ড, (খ) কায়িক দণ্ড (কশাঘাত অঙ্গছেদন, মৃত্যুদণ্ড প্রভৃতি)
এবং (গ) নির্বাসন। কৌটিল্য দণ্ড প্রয়োগের ক্ষেত্রে অপরাধের প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য বিবেচনার
কথা বলেছেন। দণ্ডের তীক্ষ্ণ প্রয়োগ সমাজে উদ্বেগ ও ত্রাসের সৃষ্টি করে এবং প্রজাসাধারণকে
রাজদ্রোহী করে তোলে।
কৌটিল্য দণ্ডনীতি প্রয়োগের কয়েকটি উদ্দেশ্য
উল্লেখ করেছেন; যেগুলি বর্তমান যুগেও অনেকখানি প্রাসঙ্গিক, যথা: ১. অপরাধের পরিমাণ
এবং শাস্তির মাত্রা যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। ২. অপরাধীকে বিচারের সময় আত্মপক্ষ সমর্থনের
সুযোগ দেওয়া এবং শাস্তির কারণ জানানো। ৩. দণ্ডদানের লক্ষ্য হবে অপরাধী বা অন্য কেউ
যাতে পুনরায় একই অন্যায় না করে তা নিশ্চিত করা। ৪. দন্ড মাত্রা বা শাস্তির পরিমান ঘোষণা
করার পূর্বে বিচারপতি অপরাধ সংঘটনের সকল প্রকার দিক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে
দেখবেন, বিচারক কখনোই হিংসার বশবর্তী হয়ে বা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে বিচার করবেন না। ৫.
সমাজে কর্ম ও গুনের দ্বারা সৃষ্ট চতুর্বর্ণের সকল ব্যক্তির নিজের নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য
সুনিশ্চিত করা হবে দণ্ডনীতির দ্বারা। ৬. দণ্ড নীতির প্রধান লক্ষ্য হবে সামাজিক অবক্ষয়,
অন্যায়-অবিচার দূর করা অর্থাৎ দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন সুনিশ্চিতকরন।
দণ্ডনীতির সঠিক প্রয়োগ একটি আদর্শ রাষ্ট্র
গঠনে একান্ত সহায়ক, যেখানে ধর্ম এবং নৈতিকতার সাহায্যে দন্ড প্রয়োগের দ্বারা অপরাধ
সংশোধন করা সম্ভব হবে। বর্তমান সময়ে কোনো আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা
ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে কৌটিল্যের দণ্ডনীতির বহু সাদৃশ্য বর্তমান।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।