প্রশ্ন- মালিক কাফুরের উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

Nil's Niva
0

প্রশ্ন- মালিক কাফুরের উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

*****************************************

উত্তরঃ মালিক কাফুর ছিলেন আলাউদ্দিন খিলজির প্রধান সেনাপতি। প্রথম জীবনে তিনি হিন্দু ছিলেন। এক হাজার দিনার মুদ্রার বিনিময়ে তাঁকে ক্রীতদাসে পরিণত করা হয়। দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খলজি (১২৯৬-১৩১৬ খ্রি.) ১২৯৭ খ্রিস্টাব্দে গুজরাট অভিযান করে সেখান থেকে প্রচুর ধনসম্পদ দিল্লিতে নিয়ে আসেন। এই ধনসম্পদের সঙ্গে মালিক কাফুর নামে এই ক্রীতদাসকে গুজরাট থেকে দিল্লিতে আনা হয়।

1. আলাউদ্দিনের সেনাপতি: মালিক কাফুরকে দিল্লিতে আনার পর অল্পকালের মধ্যেই তিনি নিজ প্রতিভা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আলাউদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ফলে দ্রুতগতিতে তাঁর পদোন্নতি ঘটতে থাকে। তিনি আলাউদ্দিনের অন্যতম সেনাপতি হিসেবে বিভিন্ন অভিযানে যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় দেন। তাঁর নেতৃত্বে সুলতানি বাহিনী দাক্ষিণাত্যের দেবগিরি, বরঙ্গল, দ্বারসমুদ্র প্রভৃতি অঞ্চল দখল করে।

2. দাক্ষিণাত্য অভিযানে ভূমিকা: মালিক কাফুর সেনাপতি হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দাক্ষিণাত্যে আলাউদ্দিনের বিভিন্ন অভিযানে নেতৃত্ব দেন।

i. দেবগিরি অভিযান: আলাউদ্দিনের নির্দেশে সেনাপতি মালিক কাফুর ১৩০৭ খ্রিস্টাব্দে দাক্ষিণাত্যের দেবগিরি অভিযান করেন। তিনি দেবগিরির পরাজিত রাজা রামচন্দ্রদেবকে সসম্মানে দিল্লিতে নিয়ে আসেন। পরে রামচন্দ্র তাঁর রাজ্য ফিরে পান এবং আলাউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর কন্যার বিবাহ দেন।

ii. বরঙ্গল অভিযান: কাফুরের নেতৃত্বে সুলতানি বাহিনী ১৩০৮ খ্রিস্টাব্দে বরঙ্গল (বর্তমান তেলেঙ্গানা) অভিযান করেন। রবঙ্গলের পরাজিত রাজা প্রতাপরুদ্রদেব সুলতানকে প্রচুর ধনসম্পদ, হাতি, ঘোড়া প্রভৃতি প্রদান করেন এবং বার্ষিক কর প্রদানের অঙ্গীকার করেন।

iii. হোয়সল অভিযান: কাফুর ১৩১০ খ্রিস্টাব্দে দাক্ষিণাত্যের দ্বারসমুদ্র বা হোয়সল রাজ্য অভিযান করেন। হোয়সলের পরাজিত রাজা তৃতীয় বীরবল্লাল সুলতান আলাউদ্দিনকে প্রচুর ধনসম্পদ, হাতি, ঘোড়া প্রভৃতি প্রদান করেন এবং বার্ষিক কর প্রদানের অঙ্গীকার করেন।

iv. পাণ্ড্য অভিযান: কাফুর ১৩১১ খ্রিস্টাব্দে সুদুর দক্ষিণের পাণ্ড্যরাজ্য অভিযান করেন। আমীর খসরু বলেছেন যে, মালিক কাফুর এই রাজ্য থেকে ২৭৫০ পাউন্ড সোনা, বিপুল পরিমাণ মণিমুক্তা, ৫ হাজার ঘোড়া ও ৫১২টি হাতি দিল্লিতে আনেন।

3. উচ্চাকাচ্চা: মালিক কাফুর ছিলেন খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী। পরবর্তীকালে বিভিন্ন কৌশলে তিনি আলাউদ্দিনের 'ওয়াজীর' বা প্রধানমন্ত্রী পদও লাভ করেন। আলাউদ্দিনের মৃত্যুর পর তাঁর শিশুপুত্র শিহাবউদ্দিন ওমর-কে সিংহাসনে বসিয়ে মালিক কাফুর সুলতানি প্রশাসনের সমস্ত ক্ষমতা হস্তগত করেন। এরপর তিনি আলাউদ্দিনের জ্যেষ্ঠপুত্র খিজির খাঁ ও কনিষ্ঠ পুত্র সাদি খাঁ-কে অন্ধ করে দেন এবং রানিকে বন্দী করেন। এছাড়া সুলতানের ঘনিষ্ঠ সকল রাজকর্মচারী ও অনুরাগীদের বিতাড়িত করেন।

উপসংহার: ১৩০৭ খ্রিস্টাব্দে দেবগিরি অভিযানের পর থেকে আলাউদ্দিনের মৃত্যু (১৩১৬ খ্রি.) পর্যন্ত আলাউদ্দিনের শাসনকার্যে মালিক কাফুর এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন যে, তখনকার খলজি ইতিহাস প্রকৃতপক্ষে মালিক কাফুরের জীবন-ইতিহাসে পরিণত হয়। শেষপর্যন্ত তাঁর সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা, অত্যাচার ও স্বেচ্ছাচারিতায় আতঙ্কিত হয়ে দরবারের আমীর-ওমরাহগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাফুরকে হত্যা করে। মালিক কাফুরের মৃত্যুর কিছুদিন পর শিশু সুলতান শিহাবউদ্দিন ওমরকে হত্যা করে আলাউদ্দিনের অপর পুত্র কুতুবউদ্দিন মুবারক শাহ দিল্লির সিংহাসনে বসেন (১৩১৬ খ্রি.)।



জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore