লোকসাহিত্য সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দাও।

Nil's Niva
0

প্রশ্ন- লোকসাহিত্য সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দাও।

উত্তরঃ সংস্কৃতির মতো সাহিত্যেরও দুটি শ্রেণি-লোকসাহিত্য ও শিষ্টসাহিত্য। লোকসমাজ-সৃষ্ট সাহিত্যই লোকসাহিত্য। লোকসাহিত্য লোকসংস্কৃতির অন্যতম শাখা। লোকসাহিত্য মূলত বাককেন্দ্রিক, ঐতিহ্যবাহী এবং মৌখিক। লোকসাহিত্য ছড়া, প্রবাদ, ধাঁধা, গান, গীতিকা, কথা, নাট্য, মঞ্চ ইত্যাদি উপকরণ নিয়ে গড়ে ওঠে। লোকসংস্কৃতির মতো লোকসাহিত্যেরও নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যেমন-

লোকসাহিত্য মূলত বাকেন্দ্রিক। লোকসাহিত্যের শিষ্টসাহিত্যের মতো লিখিত রূপ নেই। 'Folk Literature is simply literature transmitted orally' লোকসাহিত্য মূলত মৌখিক। অর্থাৎ স্মৃতি আশ্রিত ও শ্রুতি বাহিত।

কেবল মৌখিক নয়, ঐতিহ্যবাহীও, অর্থাৎ লোকপরম্পরায় লোকসাহিত্য মুখে মুখে বাহিত হয়। মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার হওয়ার পর এই শ্রেণির লোকসংস্কৃতি অর্থাৎ যেগুলোকে আমরা লোকসাহিত্য বলি সেগুলোর বহু অংশ আজ লিখিত সাহিত্যে প্রবেশ করেছে।

লিখন পদ্ধতির সূত্র ধরে লোকসাহিত্য যেমন, শিষ্টসাহিত্যের অন্তর্গত হয়েছে তেমনি আবার শিষ্টসাহিত্যের অনেক বিষয়ও লোকপরম্পরায় বাহিত হয়ে লোকসাহিত্যে পরিণত হয়ে গেছে।

লোকসাহিত্য মূলত বাককেন্দ্রিক কিন্তু কথাসর্বস্ব নয়। তার সঙ্গে শিল্পমাধ্যমের আরো একাধিক অনুবঙ্গ থেকে গেছে। উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে, যেমন-লোকনাট্য, লোকসংগীত ইত্যাদি। লোকনাট্যের সংলাপগুলো লোকসাহিত্যের বা বাকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতির উপাদান হলেও এর অভিনয়গত দিকটির মধ্যে আছে অঙ্গভঙ্গিকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতির উপাদান বা অভিনয়কেন্দ্রিকতা। আছে নাট্যশিল্পের একাধিক উপাদান। আবার লোকসংগীতের ক্ষেত্রেও বাককেন্দ্রিকতা ছাড়িয়ে যুক্ত আছে যন্ত্রানুষঙ্গ ও গীত হওয়ার দিকটি।

লোকসাহিত্য মৌখিক বা অলিখিত ও ঐতিহ্যবাহী হলেও সংরক্ষণের সুবিধার্থে লোকসাহিত্যের একটা লিখিতরূপ বর্তমানে স্বীকৃত।

লোকসাহিত্য তার ঐতিহ্যবাহী রূপের সমান্তরালে বিবর্তিত রূপকেও জায়গা করে দিচ্ছে। অর্থাৎ লোকসাহিত্য আর কেবল ঐতিহ্যকেন্দ্রিক থাকছে না। লোকসাহিত্য ঐতিহ্যকে স্বীকার করার পাশাপাশি বর্তমানকেও ধারণ করছে। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে আধুনিক মৌখিক সাহিত্যও লোকসাহিত্যের ধারাকে সমৃদ্ধ করছে।

লোকসাহিত্যের প্রাচীন ধারণায় তা কেবল গ্রাম্যসাহিত্য বলেই পরিচিত ছিল। গ্রামীণ কৃষিজীবী মানুষের সাহিত্যই (যা মূলত মৌখিক) ছিল একসময় লোকসাহিত্য।

কিন্তু এখন লোকসংস্কৃতির প্রেক্ষাপট পালটানোর সমান্তরালে লোকসাহিত্যের পরিধি বিস্তারিত হয়েছে। লোকসাহিত্য আর কেবল গ্রাম্যসাহিত্য নয়, নয় কেবলমাত্র কৃষিজীবীদের সাহিত্য। তা গ্রামের গন্ডি ছেড়ে নাগরিক জীবনেও প্রবেশ করেছে।

লোকসাহিত্য বা লোকসংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা ছিল যে, তা নিরক্ষর জনগণের সাহিত্য। এ পরিচয়ও পরিবর্তিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ লোকসাহিত্য আর নিরক্ষরের সাহিত্য নয়, তা শিক্ষিত মানুষেরও সাহিত্য। তবে, লোকসাহিত্য তখনই শিক্ষিত মানুষের বা নাগরিক মানুষের লোকসাহিত্য হয়, যখন নাগরিক শিক্ষিত মানুষ 'লোক' সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েন। যখন কোনো একটা নির্দিষ্ট সূত্র ধরে শিক্ষা, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি কিংবা সামাজিক বেশ কিছু মানুষ এক হন বা সংহত হন, সে গ্রামের নিরক্ষর কিংবা শহরের শিক্ষিত, কৃষিজীবী কিংবা কারখানার শ্রমিক তখন সে সংহত জনসমষ্টিকে এককথার লোক বা Folk বলা যায়। আর এই লোকসমাজের সৃষ্ট সাহিত্যই লোকসাহিত্য। এ সাহিত্য মুখ্যত মৌখিক এবং ঐতিহ্যবাহী।


জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore