বাংলা রঙ্গমঞ্চে শিশিরকুমার ভাদুড়ির অবদান আলোচনা করো।

Nil's Niva
0

প্রশ্ন- বাংলা রঙ্গমঞ্চে শিশিরকুমার ভাদুড়ির অবদান আলোচনা করো।

*****************************************

উত্তরঃ বিশ শতকের দ্বিতীয় শতকে বাংলা থিয়েটারে যে নতুন আলো বহন করে এনেছিলেন নাট্যতত্ত্বজ্ঞ এবং পরম নাট্যানুরাগী শিশিরকুমার ভাদুড়ি তার প্রথম আত্মপ্রকাশ সাধারণ রঙ্গালয়ে দেখা গিয়েছিল ১৯২১-এর ১০ই ডিসেম্বর আলমগীর নাটকের নাম ভূমিকায়। এরপর নিজস্ব মঞ্চ স্থাপনের উদ্দেশ্যে থিয়েটার সংক্রান্ত পরীক্ষা নিরীক্ষায় সাফল্য অর্জনের জন্য তিনি মনমোহন থিয়েটারের মধ্যে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে নাট্যমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

       শিশিরকুমার ভাদুড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনার মতো সেকালে সম্মানীয় জীবিকা ছেড়ে আধুনিক থিয়েটারের উন্নয়নের স্বার্থে পেশাদার রঙ্গালয়ে শুধুমাত্র যে নিজেই আত্মনিয়োগ করেছিলেন তাই নয়, তাঁর সমকালীন অনেক শিক্ষিত এবং বুচিবান বাঙালি যুবাকে অনুপ্রাণিত করতে পেরেছিলেন যেমন নরেশচন্দ্র মিত্র, রাধিকানন্দন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

        বিডন স্ট্রিটে মনমোহন পান্ডের থিয়েটার লীজ নিয়েই ৬ই আগস্ট ১৯২৪-এ যোগেশ চৌধুরীর পৌরাণিক নাটক 'সীতা' অভিনয়ের মধ্য দিয়ে 'মনোমোহন নাট্যমন্দিরে'র উদ্বোধন হল। নামকরণের মধ্য দিয়েই শিশিরকুমার নাট্যালয়ের মন্দিরসুলভ ধ্রুপদী গাম্ভীর্য এবং পবিত্রতার নীতিটি যে অনুসরণীয় সে কথা জানালেন। এই 'সীতা' অভিনয়ের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ তিন দশকব্যাপী শৌশিরিক অভিনয় প্রতিভার বিকাশের মুহূর্ত যেন শুরু হল, যিনি ঐতিহাসিক সৌকর্য, শৈল্পিক কল্পনা, মেধা ও নন্দনতাত্ত্বিক সৌন্দর্যবোধের সমবায়ে বাংলা রঙ্গালয়ে এক অসামান্য ইতিবাচক পরিবর্তনের ধর্ম প্রতিষ্ঠা করলেন। বাংলার সাংস্কৃতিক এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে মহিমান্বিত করবার জন্য এই মঞ্চের টিকিট সারি ও চেয়ারের ক্রমিক সংখ্যা সবই বাংলা বর্ণমালা এবং সংখ্যার সাহায্যে লেখা হয়েছিল। তাঁর অভিনয় ও প্রযোজনার মৌলিকতার সর্বত্র প্রশংশিত হয়। 'পাষাণী' নাটকে গৌতম এবং ইন্দ্রের দ্বৈত ভূমিকায় শিশির কুমারের অসাধারণ অভিনয় পারদর্শিতার নিদর্শন রেখেছিল। এরপর ভিক্টর হুগোর 'দ্য হাঞ্চব্যাক্ অফ নোটরগম'-এর অনুপ্রেরণায় শ্রীশচন্দ্র বসুর লেখা 'পুন্ডরীক' অভিনীত হয়। কিন্তু স্মরণীয় অভিনয় সত্ত্বেও দূর্বল নাট্যরূপের জন্য এই প্রযোজনাটির কারণে শিশিরকুমারকে আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়।

        শিশিরকুমার ভাদুড়ির প্রতিভা ও খ্যাতি ঔজ্জ্বল্য সত্ত্বেও পেশাদারী রঙ্গালয়ের ব্যবসায়িক সাফল্যকে সুনিশ্চিত করতে তিনি পারেন নি। তাই তাঁর প্রতিষ্ঠিত নাট্যমন্দিরের অস্তিত্ব ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের দিকে বিপন্ন হয়ে ওঠে। তিনি ১৯৩৩ সালে আমেরিকায় যান। কিন্তু সীতা নাটকটি সেখানে আশানুরূপ সাফল্য লাভ করে নি। ১৯৩২-এ রঙ্গমহল ছেড়ে চলে এলেন। এরপরে তৃতীয় পর্বে স্টার থিয়েটারের মঞ্চ লীজ নিয়ে নাট্যমন্দিরের পতাকাতলে 'অভিমানিনী'র অভিনয় করেন। ২৮-এ জুলাই ১৯৩৪-এ শরৎচন্দ্রের 'বিরাজ বৌ' উপন্যাসের নাট্যরূপের মধ্য দিয়ে নবনাটামন্দিরের প্রতি দর্শক আকর্ষণ কেন্দ্রীভূত হয়। কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্য থাকলেও ১৯৩৭-এর মধ্যপর্বে নবনাট্যমন্দির বন্ধ করা হয়ে যায়। এরপর নভেম্বর ১৯৪১-এ তার শেষ রঙ্গমঞ্চ শ্রীরঙ্গম-এ যুক্ত ছিলেন। তিনটি পর্বে সুদীর্ঘ সময় ধরে নাট্যমন্দির নামটি শিশিরকুমার ভাদুড়ির অভিনয় জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত ছিল।



জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore