প্রবাদের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করুন।

Nil's Niva
0

প্রশ্ন- প্রবাদের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করুন।

*****************************************

উত্তরঃ দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাকে যখন সংক্ষিপ্ততম বাক্যে প্রকাশ করা হয় তখনই তা হবে প্রবাদ। ইংরেজিতে বলা হয় "Proverb is a short sentence based of long experience"। যথার্থ প্রবাদের মধ্যে একটি জাতির সামগ্রিক জীবনচর্যার পরিচয় পাওয়া যায়। প্রবাদের সত্যতার মধ্যে রয়েছে সামাজিক সত্য। প্রবাদ ব্যক্তিবিশেষ তথা সমাজের বাস্তবজীবনের অভিজ্ঞতার অভিব্যক্তি, প্রবাদ সমাজ অভিব্যক্তি অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। অলংকার-রূপকের সহাবস্থানে প্রবাদ সাহিত্যগুণ বিশিষ্ট ও সরস হয়ে ওঠে। প্রবাদ সংক্ষিপ্ত রচনা কিন্তু পূর্ণ বাক্য, যার মধ্যে কর্তা, কর্ম, অসমাপিকা ক্রিয়া সবই থাকে। আশুতোষ ভট্টাচার্য 'বাংলার লোকসাহিত্য' গ্রন্থে প্রবাদের সংজ্ঞা দিয়েছেন, "প্রকৃতপক্ষে সমাজ যাহা আচরণ করে এবং সামাজিক মানুষ প্রাত্যহিক জীবনাচরণের ভিতর দিয়া যে অভিজ্ঞতা লাভ করে তাহাদের মধ্যে যাহা নিজেদের অভিজ্ঞতার দিক দিয়া নিতান্ত তিক্ত, প্রধানতঃ তাহা দ্বারাই প্রবাদ রচিত হইয়া থাকে। প্রবাদ মধুর বচন নহে, তাহা সংসার সংগ্রামে ক্ষতবিক্ষত মানুষের কঠোর অভিজ্ঞতার অভিব্যক্তি মাত্র।" প্রবাদ নিরক্ষর সমাজের সৃষ্টি হলেও আদিম সমাজ পার হয়ে মানুষ যখন দলপতির তত্ত্বাবধানে জীবননির্বাহ শুরু করেছে, সমাজবদ্ধ হয়েছে তখন থেকে প্রবাদের প্রচলন শুরু হয়। মৌখিকভাবে রচিত হলেও এর রচনাকৌশলে যে সূক্ষ্মতা আছে তা আদিম সমাজের আয়ত্তাধীন নয়। ভারতীয় সাহিত্যে প্রথম ঋগ্বেদে প্রবাদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

            প্রবাদে যেমন থাকে ঘরের কথা, পরিবারের কথা, তেমনি থাকে যৌথ জীবনের কথা, কৃষি ও কর্মের কথা, শত দুঃখ-যন্ত্রণা, আনন্দ-বেদনার কথা। সেই জন্য প্রবাদ মানস কর্মের স্বর্ণফসল, সমস্ত মনন ক্রিয়ার নির্যাস। বাবিন্যাসে তাই প্রবাদ দ্রুত সঞ্চারী অথচ সন্ধ্যাতারার মতো নিঃসঙ্গ।

          সত্যকথা বিশেষভাবে উপস্থাপন করতে পারলে তবেই তা প্রবাদ হয়, নতুবা নীতিকথা মাত্র হয়ে থাকে। প্রবাদ লৌকিক বিষয় হলেও তা সাহিত্য। সুতরাং লোকোক্তি মাত্রই প্রবাদ নয়, এটি প্রত্যক্ষ জীবননির্ভর এবং সরস হওয়া আবশ্যক; এমনকি, সর্বদা এটি চিরন্তন সত্য না হলেও চলতে পারে; জীবন সম্পর্কে সমষ্টির যা অভিজ্ঞতা, তারই এটা সরস অভিব্যক্তি মাত্র। প্রবাদে সাধারণত দুটি পদ থাকে। প্রত্যেকটি পদই এক-একটি পরিপূর্ণ ভাবপ্রকাশক। বিশেষত যে রচনায় অলংকারের প্রয়োগ হয়, তা সামান্য দীর্ঘ না হয়ে কোনো উপায় নেই।

  • প্রবাদের বৈশিষ্ট্য

[১] প্রবাদের প্রথম কথা সুদীর্ঘ সমাজ অভিজ্ঞতা। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনায় মানুষের যা সঞ্চয় হয়েছে সমাজ থেকে, প্রবাদের সম্পদ তা-ই।

[২] প্রবাদের রচনা ও ব্যাবহারিক জীবনে তার প্রয়োগ-দুই-ই ক্ষিপ্রতা ও তীক্ষ্ণতায় ভরা। সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকে তার প্রয়োগ নয়। ফলত অভিজ্ঞতার সারমর্ম থেকে মনে হয় সমাজজীবনের একেবারে শুরুতে তার উদ্ভব নয়, কিছু পরে হওয়াই সমীচীন।

[৩] লোকসাহিত্যের অন্যান্য শাখার তুলনায় প্রবাদ সংক্ষিপ্ত ও সারগর্ভ ভাবনায় সমৃদ্ধ।

[৪] প্রবাদ রূপক ও উপমার ছড়াছড়ি। এতেই চমৎকারিত্ব আসে। ব্যঞ্জনার সাহায্যে জাগতিক সত্যকে নির্দেশ করার অপূর্ব ভঙ্গি এখানে চোখে পড়ে।

[৫] বেশ কিছু প্রবাদ উপদেশমূলক। লোক অভিজ্ঞতা থেকে সাবধানতাসূচক বা নিষেধাজ্ঞামূলক ভাবনা দিয়ে তিক্ততা থেকে উদ্ধার এর মূল লক্ষ্য।

[৬] কথার ভিতর দিয়ে আঘাত করার ভঙ্গি বিশেষত বক্রোক্তিকে সার্থকতা আনে। ফলে তথাকথিত প্রবাদের সরসতা রক্ষা পায়।

[৭] প্রবাদের অঙ্গসৌষ্ঠব লোকসাহিত্যের অন্যান্য শাখার থেকে পৃথক। এক্ষেত্রে যে বিশেষত্ব দেখা যায়-অনুপ্রাস, রূপক, সম্বোধন, দৃষ্টান্ত, তুলনামূলকতা ইত্যাদি।

[৮] প্রবাদ বৈদগ্ধময় রচনা। অবশ্য এই বৈদগ্ধ ব্যক্তির নয়, সমষ্টির প্রজ্ঞা।

[৯] প্রবাদের মধ্যে অনেক সময় কোনো প্রাচীন কাহিনি, ইতিহাস বা ঘটনা সযত্নে সুপ্ত বা লালিত থাকে। ফলত প্রবাদের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক সূত্র অন্বেষণ করা যায়।

[১০] অনেক সময় প্রবাদ একেবারে সমাজ বা পরিবারকেন্দ্রিক বিষয় হলে তাতে অতীত সমাজের ছবি ধরা থাকে। ফলত দেশ ও সমাজ পুনর্গঠনে এদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।



জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore