দিল্লি সুলতানি যুগের ইতিহাসের উপাদান আলোচনা করো।

Nil's Niva
0

প্রশ্ন- দিল্লি সুলতানি যুগের ইতিহাসের উপাদান আলোচনা করো।   

উত্তরঃ দিল্লি সুলতানি যুগের ইতিহাস রচনার তথ্যাদির অভাব নেই। দিল্লির সুলতানদের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে অবদান কৃতিত্বপূর্ণ। হজরত মহম্মদের সময় থেকেই আরবীয়গণের মধ্যে ইতিহাস রচনার সূত্রপাত হয়। প্রথমদিকে আরবী ভাষায় ইতিহাস রচনা শুরু হয়। পরে পারসিক ভাষায় ইতিহাস লেখা খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ভারতে আগমনকালে তুর্কিগণ পারসিক ভাষায় ইতিহাস রচনার ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে আসে। দিল্লির সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতায় অজস্র ধারায় ঐতিহাসিকগণ ইতিহাস রচনা করেন। প্রাচীন যুগের ন্যায় দিল্লি সুলতানি যুগের ইতিহাস রচনায় শিলালিপি, কিংবদন্তী, মুদ্রা ও সাহিত্যে বিক্ষিপ্ত ঐতিহাসিক উপাদানগুলি কষ্ট করে সংগ্রহ করার কোন প্রয়োজন হয় না। ঐতিহাসিকগণ অত্যন্ত সচেতন ছিলেন ইতিহাস লেখার প্রণালী সম্বন্ধে। তাই একাদশ শতাব্দীতে প্রখ্যাত আরব মনীষী আলবেরুণী ভারতীয় ইতিহাসের উপাদানের অভাবের কথা বলতে গিয়ে তীক্ষ্ণ ভাষায় ব্যক্ত করেছেন, "হিন্দুগণ ঐতিহাসিক রচনার প্রতি উদাসীন, তারা রাজাদের কালানুক্রমিক ইতিহাস সম্পর্কেও অজ্ঞ এবং ঐতিহাসিক তথ্যের জন্য চাপ দিলে তারা কল্পনা ও কিংবদন্তীর আশ্রয় গ্রহণ করে।" ঐতিহাসিক ফ্লিটও অনুরূপ মন্তব্য করে বলেছেন যে প্রাচীন হিন্দুরা ইতিহাস লিখতে জানত না এবং তাদের ঐতিহাসিক বোধও ছিল না। 

        আপাতদৃষ্টিতে উপরোক্ত অভিযোগগুলি যুক্তিপূর্ণ বলে মনে হয় এবং এটা সত্য যে হেরোডোটাস, থুকিডিডিস বা টাসিটাসের ন্যায় ঐতিহাসিক প্রাচীন ভারতে আবির্ভূত হননি; তাঁদের রচিত ঐতিহাসিক গ্রন্থের ন্যায় গ্রন্থও ভারতে সেই যুগে রচিত হয়নি। তথাপি এটা স্বীকার করা যায় না, সে-যুগে হিন্দুগণ ইতিহাস রচনায় সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলেন। বিভিন্ন রাজবংশের শিলালিপি ও তাম্রলিপি প্রাচীন ভারতীয়দের ইতিহাস জ্ঞানের সাক্ষ্য বহন করে-কারণ এগুলি ইতিহাসের অমূল্য উপাদান। হিন্দুরাজাদের সভাকবিগণের প্রশস্তিলিপিগুলি অনবদ্য ঐতিহাসিক তথ্যে পরিপূর্ণ। এগুলি সমকালীন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক দলিল। 

১. সরকারী দলিলপত্র-  সরকারী দলিলপত্রকে একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সুলতানি যুগেই প্রথম এই দলিলপত্র সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়, কিন্তু দুর্ভাগ্য, তা সত্ত্বেও বহু অমূল্য দলিল ধ্বংস হয়েছে। মুঘল যুগে দলিলপত্র রক্ষার আরও সুব্যবস্থা করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও আকবরের গ্রন্থাগার থেকে ২৪,০০০ গ্রন্থের কোন হদিশ পাওয়া যায়নি। তথাপি যেটুকু সামান্য দলিলপত্র রক্ষা পেয়েছে, তা দিল্লি সুলতানি যুগের রচনার ক্ষেত্রে অমূল্য সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হয়।

২. সমসাময়িক ঐতিহাসিক রচনা-  দিল্লি সুলতানি যুগের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত আকর গ্রন্থগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে গ্রন্থগুলির মূল্যবান তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দলিল হিসাবে স্বীকৃত।

(ক) সুলতানি যুগের একটি অতি মূল্যবান গ্রন্থ কামিলাৎ-তারিখ। এই গ্রন্থ থেকে মহম্মদ ঘুরীর বংশ-পরিচয় ও মধ্যএশিয়া সম্পর্কে বহু তথ্য পাওয়া যায়। গ্রন্থের লেখক ইবনাল আশির। তিনি ১২৩০ খ্রিস্টাব্দে এই গ্রন্থ রচনা শেষ করেন। এই গ্রন্থের ঘটনার তারিখগুলি সঠিক বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন।

(খ) তারিখ-ই-জাহান গুসা-ই-জুয়াইনিঃ ১২৬০ খ্রিস্টাব্দে এই গ্রন্থটি রচনা করেন আতা মালিক জুয়াইনি। এ গ্রন্থ থেকে মধ্যএশিয়া সম্পর্কে বহু তথ্য জানা যায়। পশ্চিম এশিয়ায় মোঙ্গল আক্রমণের ইতিহাস এতে সুন্দরভাবে বলা হয়েছে। এই গ্রন্থের লেখক নিজে মোঙ্গল নেতা হলাকুর অধীনে উচ্চপদে আসীন ছিলেন। স্বভাবতই তিনি সব ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন। তাই গ্রন্থটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

(গ) তারিখ-ই-গাজীদাঃ ১৩২৯ খ্রিস্টাব্দে এই গ্রন্থটি লেখেন হামদুল্লা মাস্তোকী কাজাবনী। এই গ্রন্থ থেকে ঘুর, গজনী ও ভারতে সুলতানদের পরিচয় পাওয়া যায়। এই গ্রন্থের তথ্য গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হয়।

(ঘ) নরুদ্দিন মহম্মদ উফীর লেখা জুয়ামিনুল-হিকায়াৎ নামক গ্রন্থ থেকে নাসিরউদ্দিন কুবাচার বিরুদ্ধে ইলতুৎমিসের সামরিক অভিযানের প্রাথমিক পরিচয় পাওয়া যায়। 

(ঙ) আরবদের সিন্ধু বিজয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান ঐতিহাসিক উপাদান আরবী ভাষায় রচিত চাচনামা নামক গ্রন্থটি। এই গ্রন্থে মহম্মদ-বিন-কাশিমের সিন্ধু অভিযানের প্রাক্কালে সিন্ধুদেশের বিস্তৃত বিবরণ আছে। তখনকার গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি এতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। নাসিরউদ্দিন কুবাচার রাজত্বকালে ১২১৬ খ্রিস্টাব্দে পারসিক ভাষায় এই গ্রন্থ অনুবাদ করেন আবু বকর কুফি।  

(চ) তারিখ-ই-সিন্ধ ভান্দ্রা-নিবাসী মীর মহম্মদ মাসুমের লেখা। গ্রন্থটিকে সমসাময়িক বলা যায় না। কারণ, গ্রন্থটি লেখা হয়েছে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে চাচনামা-কে ভিত্তি করে। তবে আরবদের সিন্ধু অভিযান থেকে সম্রাট আকবরের রাজত্বকাল পর্যন্ত একটা সুন্দর বর্ণনা আছে।

(ছ) আবু নাসের বিন উতবীর লেখা কিতাবুল ইয়ামিনি দিল্লি সুলতানি যুগের প্রাথমিক পর্বের একটি মূল্যবান গ্রন্থ। গ্রন্থটিকে ইতিহাস না বলে সাহিত্য বলাই শ্রেয়। সাল-তারিখের ভুল-ভ্রান্তি সত্ত্বেও গজনীর সুলতান সবুক্তগীন ও সুলতান মামুদের রাজত্বকাল থেকে ১০২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এক ধারাবাহিক ইতিহাস এই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। মামুদের প্রথম জীবন ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।


জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

6295916282; 7076398606


জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore