ভক্তি আন্দোলন বলতে কী বোঝো।

Nil's Niva
0

প্রশ্ন-  ভক্তি আন্দোলন বলতে কী বোঝো। 

উত্তরঃ সুলতানি যুগে ভক্তি-আন্দোলন ছিল এক বিরাট গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বস্তুত বৌদ্ধধর্ম প্রচারিত হওয়ার পর ভক্তি-আন্দোলনের মত এত ব্যাপক ও জনপ্রিয় ধর্ম-সংস্কার আন্দোলন এদেশে হয়নি।

            ভক্তিবাদের উদ্ভব সম্পর্কে বিভিন্ন রকম ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। কারও কারও মতে, সুলতানি যুগেই ভক্তিবাদের উদ্ভব হয়। ইসলামের একেশ্বরবাদ ও আল্লাহর প্রতি ভক্তিই হিন্দুসমাজে ভক্তিধর্মের জন্ম দেয়। হিন্দু ধর্মসংস্কারকেরা ব্যয়বহুল আচার-সর্বস্ব ধর্মাচরণের পরিবর্তে অন্তরের ভক্তি দ্বারা ঈশ্বরসাধনা ও ঈশ্বরলাভের একমাত্র পথ বলে প্রচার করেন। ইসলামের মত এঁরাও এক ঈশ্বরতত্ত্ব প্রচার করেন। ইসলামের ধর্মীয় সাম্য, সৌভ্রাতৃত্ব ও জাতিভেদবিহীন ধর্মভাবনা হিন্দু ধর্মসংস্কারকদের আকৃষ্ট করে। তাঁরা উপলব্ধি করেন যে, ব্রাহ্মণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও জাতিভেদে জর্জরিত হিন্দুসমাজ গোঁড়ামি ও বহু দেবদেবীতে বিশ্বাসের ফলে ক্রমক্ষীয়মান। এই ক্ষয় থেকে বাঁচার একমাত্র পথ ধর্মীয় বিভেদ পরিহার করা ও ধর্মীয় সাম্য প্রতিষ্ঠার দ্বারা সামাজিক সাম্যের পথ প্রশস্ত করা। মুসলমান সুফী-সম্ভদের প্রচারও ভক্তিবাদ-আন্দোলন সংগঠনে সাহায্য করে। সুফী-সন্তরা অতীন্দ্রিয়, ভক্তিতত্ত্ব ও নৈতিক আদর্শকে ঈশ্বরলাভের পথ হিসেবে প্রচার করেন। কোরানের অনুশাসন ও আচারের পরিবর্তে আল্লাহর প্রতি ভক্তির ওপরেই জোর দেন। পাণিক্কর-এর মতে, 'ইসলামের একেশ্বরবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ভক্তিবাদকে হিন্দুধর্মের নতুন ব্যাখ্যা বলা যায়, যদিও এর ভিত্তি ছিল ভগ্নদ গীতা।” তাঁর মতে, ইসলামের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই হিন্দু ধর্মাচার্যগণ ভক্তিবাদ প্রচারে অগ্রণী হন। 

            অনেকের মতে, ভক্তিবাদের আদর্শ হিন্দু ধর্মশাস্ত্রের মধ্যেই নিহিত আছে। সুপ্রাচীন বেদে ইন্দ্র বা বরুণের স্তবে ভক্তির প্রাধান্য দেখা যায়। গৌতম বুদ্ধ ও মহাবীরের শিক্ষাদর্শের মধ্যেও ভক্তির প্রাধান্য দেখা যায়। তবে পরবর্তীকালে ভক্তির পরিবর্তে আচার- অনুষ্ঠান প্রাধান্য পেতে থাকে। সুলতানি যুগে নানা কারণে আবার প্রবল আকারে প্রকাশ লাভ করে ভক্তিতত্ত্ব। হিন্দু ধর্মশাস্ত্রের মুক্তির তিনটি পথের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যথা-জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তি। শঙ্করাচার্য জ্ঞানযোগ ও কর্মযোগের কথা প্রচার করেন। কিন্তু সুলতানি যুগের সাধকেরা ভক্তিযোগের ওপর গুরুত্ব দেন। এজন্য তাঁদের ইসলামের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হয়নি। মধ্যযুগের ধর্মগুরুরা নতুন আবেগ ও উৎসাহের সাথে আদি ভক্তিযোগকে প্রচার করে এক আন্দোলনের পর্যায়ে উত্তীর্ণ করেন। এই ভক্তি-আন্দোলনের প্রকৃত সূচনা হয়েছিল সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে দক্ষিণ-ভারতে। এই প্রসঙ্গে শৈব 'নায়নার' ও বৈষ্ণব 'আলবার' সম্প্রদায়ের নাম স্মরণ করা যেতে পারে। এঁরা সামাজিক বৈষম্য ও জাতিভেদের বিরুদ্ধে ও ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি ও প্রেমের আদর্শ প্রচার করেছিলেন। এই শিক্ষাই পরবর্তীকালে উত্তর-ভারতে ভক্তি-আন্দোলনের সূচনা করেছিল।


জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

6295916282; 7076398606


জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore