ভারতে নারীদের মর্যাদার ক্ষেত্রে সমাজ-সংস্কার আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা করো।

Nil's Niva
0

প্রশ্ন- ভারতে নারীদের মর্যাদার ক্ষেত্রে সমাজ-সংস্কার আন্দোলনের প্রভাব আলোচনা করো।

উত্তরঃ অষ্টাদশ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতের সমাজ সংস্কার আন্দোলনগুলির কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল 'নারী'। কিন্তু 'নারীরা কী চায়'- সেই বিষয় নিয়ে সমাজ সংস্কারকেরা খুব একটা ভাবিত ছিলেন না। বরং নারীদের কীভাবে আধুনিকা করে তোলা যায়, সেটিই ছিল এই জাতীয় আন্দোলনগুলির মূল উদ্দেশ্য। সমাজে নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের জন্য মূলত দায়ী ছিল ধর্ম, সংস্কৃতি এবং সামাজিক কাঠামো। ফলে নারীদের অবস্থানের উন্নয়নের জন্য এগুলির সংস্কার করা প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন যে, ইউরোপের নবজাগরণ ও রেনেসাঁসের আদর্শের দ্বারাই ভারতীয় সংস্কার আন্দোলনগুলি প্রভাবিত ছিল। মূলত, ১৭৯২ সালে মেরি ওলস্টোনক্রাফট রচিত Vindication of the Rights of Women গ্রন্থটির প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে নারীদের অধিকার ও নারীমুক্তি নিয়ে ইউরোপে আলোচনা শুরু হয়, যাকে নারীবাদের 'প্রথম তরঙ্গ' বলে অভিহিত করা হয়। ঔপনিবেশিকতার হাত ধরে এই তরঙ্গের প্রভাব ধীরে ধীরে ভারতেও পরিলক্ষিত হয়। যদিও ভারতীয় সমাজে নারী পুরুষের মধ্যে সাম্যতা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে এই আন্দোলনগুলি গড়ে ওঠেনি বা লিঙ্গ বৈষম্যের মূল নিহিত রয়েছে সমাজের যে পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোয়, সেই কাঠামোকেও এই আন্দোলনগুলি চ্যালেঞ্জ জানায়নি বা তার পরিবর্তন দাবি করেনি। প্রকৃতপক্ষে, সংস্কারকরা নারীদের সামাজিক অবস্থানের কিছু পরিবর্তন চেয়েছিলেন মাত্র। নারীদের প্রতি ভারতীয় সমাজের নিষ্ঠুর আচরণ যেমন, ধর্মীয় মৌলবাদ, কুসংস্কার, সতীদাহ প্রথা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, দেবদাসী প্রথা, বিধবা বিবাহ বিরোধ, নারী শিক্ষার বিরোধ প্রভৃতির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসাবে এই আন্দোলনগুলি গড়ে ওঠে। তবে এ বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন যে, ভারতে সমাজ সংস্কারক আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে পুরুষ সমাজ সংস্কারকদের নেতৃত্বেই। আন্দোলনের প্রাথমিক পর্বে মহিলাদের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দেখা যায়না, বরং পরবর্তীকালে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে, বিশেষত, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ভারতীয় নারীরা অনেক সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া সেই সময়কার ভারতীয় মহিলাদের অবস্থান ও বহির্জগতে তাঁদের অংশগ্রহণ সম্পর্কিত তেমন তথ্য না থাকায় সেই সময় নারী আন্দোলনের নারীদের অংশগ্রহণের মূল্যায়ন সহজসাধ্য নয়। তবু লভ্য তথ্যের ভিত্তিতে সমাজ সংস্কারক আন্দোলনে নারীদের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে তাদেরকে সাধারণত দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে- এক, সেইসমস্ত নারীরা যাঁরা তাঁদের স্বাধীন চিন্তাধারা গড়ে তোলার পরিবর্তে পুরুষদের সহকারীর ভূমিকা পালন করেছিলেন। এবং দুই, সেইসমস্ত নারী যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। মূলত নারীশিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে কয়েকজন ব্যতিক্রমী নারীকে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে দেখা গেছে। এঁদেরকেই ভারতের আধুনিক নারীবাদীদের পূর্বসুরী হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, ফ্রাঙ্কিনা সোরাবজী, পার্বতী আয়াপ্পান, রামাবাঈ রানাডে, মহারানী অপস্বীনী, পন্ডিতা রামাবাঈ, বেগম রোকাইয়া সাখায়াত, সাবিত্রীবাঈ ফুলে প্রমুখ।  

        এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজে নারীদের অবস্থার উন্নয়ন, নারীশিক্ষার প্রসার, সামাজিক-ধর্মীয় বৈষম্যমূলক নিপীড়নের অবসান ইত্যাদি। 


জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

6295916282; 7076398606


জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore