Q. What were the causes and consequences of the Russo-Japanese war?
§ রুশ-জাপান যুদ্ধ:
উনিশ শতকের শেষ দিকে জাপান দ্রুতগতিতে উন্নতি
করতে থাকে। মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাত্র কুড়ি বছরের মধ্যেই জাপান অর্থনৈতিক দিক থেকে
একটি সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হয়েছিল। বিভিন্ন সংস্কার সাধন এবং শিল্পায়নের মাধ্যমে
জাপান উনিশ শতাব্দীর শেষ লগ্নে যে শক্তি সঞ্চয় করে ছিল তা কেবলমাত্র আত্মরক্ষার্থে
নিয়োজিত হয়নি। জাপানে পুঁজিবাদের উত্থান এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই সাম্রাজ্যবাদেরও উন্মেষ
ঘটেছিল। কোরিয়ার উপর জাপানের আধিপত্য বিস্তারের বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই 1894 খ্রিস্টাব্দে
চীন জাপান যুদ্ধ ঘটেছিল। এই কোরিয়া কে কেন্দ্র করেই রুশ-জাপান সম্পর্ক তিক্ত হয়েছিল
এবং 1904-1905 সালে রুশ জাপান যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।
চীন কে পরাস্ত করার পর
শিমনোসেকির সন্ধির মাধ্যমে জাপান চীনের যে সমস্ত এলাকা লাভ করেছিল সেগুলি ফ্রান্স,
জার্মানি এবং বিশেষত রাশিয়ার হস্তক্ষেপে জাপান তা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। উপরন্তু রাশিয়া
1893 খ্রিস্টাব্দে চীনের সাথে লি-লেবানভ চুক্তি গোপনে স্বাক্ষর করেছিল। মাঞ্চুরিয়া
তে রাশিয়ার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়া গোপনে চীনের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে
যদিও আমেরিকা ব্রিটেন এবং জাপানের বিরোধিতার ফলে এই চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। দূরপ্রাচ্যে
রাশিয়ার এই আগ্রাসী নীতির প্রত্যুত্তরে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে জাপান ইংরেজদের সাথে ঈঙ্গ-জাপান
মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করে।
কোরিয়া ছিল চীনের করদ রাজ্য হিসেবে পরিচিত। শিমনোসেকির
সন্ধির মাধ্যমে কোরিয়া একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।কোরিয়াতে জাপানের
অর্থনৈতিক স্বার্থ ছিল। উনিশ শতকের শেষ দিকে জাপানে দ্রুত শিল্পায়ন হয়েছিল। জাপানি
শিল্পপতিরা কোরিয়ার বাজারের দিকে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তাছাড়া জাপান সেই সময় কোরিয়া
থেকে আমদানিকৃত চালের ওপর নির্ভরশীল ছিল। উপরন্তু সেই সময় জাপানের জনসংখ্যা দ্রুত
বর্ধিত হচ্ছিল, যার স্থান সংকুলানের জন্য কোরিয়ার প্রতি জাপানের নজর ছিল। কোরিয়াতে
জাপানি পরামর্শদাতা পাঠানো হয়। জাপান কোরিয়ার আধুনিকীকরণের জন্য চাপ দিতে থাকে।জাপানি
প্ররোচনায় কোরিয়াতে একটি অভ্যুত্থান ঘটে, যাতে সংস্কার বিরোধী রানী মিন নিহত হন।
ফলে রাশিয়ার কাছে সুযোগ আসে কোরিয়াতে সেনা ঢুকিয়ে দেওয়ার দূতাবাস গুলি কে রক্ষা
করার অজুহাতে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে রাশিয়ার প্রভাব দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই প্রেক্ষিতে
জাপান ও রাশিয়ার মধ্যে কোরিয়ার বিষয়ে একটি সমঝোতায় আসার জন্য 1896 খ্রিস্টাব্দে
ইয়ামাগাতা-লেবানন চুক্তি স্বাক্ষর করে। 1898 খ্রিস্টাব্দে উভয়ের মধ্যে নিশি-রোজেন
কনভেনশন স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি মতে উভয়ে কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না
করার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করে এবং আরও বলা হয় একটি দেশ অন্য দেশের অনুমতি ছাড়া কোরিয়াতে
পরামর্শ পাঠাবে না। রাশিয়া প্রতিশ্রুতি দেয় যে জাপান যদি তার নতুন শিল্পায়নের স্বার্থে
কোরিয়া থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা নেয় তাতে রাশিয়া বাধা দেবে না।
কোরিয়ার পর দু'দেশের
মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণ হয়ে ওঠে মাঞ্চুরিয়া।রাশিয়া কর্তৃক পোর্ট আর্থার অধিকার, মাঞ্চুরিয়ার
ভেতর দিয়ে ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলপথ নির্মাণ এবং রাশিয়ার কর্তৃত্বাধীন যৌথ ব্যাংকের
প্রতিষ্ঠা রাশিয়াকে প্রলুব্ধ করেছিল। অন্যদিকে শিল্পায়নের খাতিরে মাঞ্চুরিয়ার সম্পদ,
কয়ল্, লোহা প্রভৃতির ওপর জাপানের দৃষ্টি ছিল। এদিকে বক্সার বিদ্রোহের সুযোগ নিয়ে
রাশিয়া মাঞ্চুরিয়াতে সৈন্য পাঠিয়েছিলো। এই ঘটনায় জাপান আমেরিকা এবং ব্রিটেন রাশিয়ার
বিরোধিতা করে। পূর্ব এশিয়াতে রুশ আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯০২ সালে ইঙ্গ-জাপান মৈত্রী
চুক্তি সম্পাদিত হয়।
এই অবস্থায় জাপান রাশিয়ার
কাছে প্রস্তাব পাঠায় যে উভয় রাষ্ট্র চীন ও কোরিয়ায় মুক্তদ্বার নীতি মেনে চলুক। কিন্তু
রাশিয়া তাতে কর্ণপাত করেনি। দ্বিতীয় বার জাপান প্রস্তাব পাঠায় যে উভয়ই চীন ও কোরিয়ার
আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করুক; রাশিয়া কোরিয়াকে জাপানের বিশেষ স্বার্থ জড়িত অঞ্চলের
মেনে নিক, জাপানও মাঞ্চুরিয়াকে রাশিয়ার বিশেষ স্বার্থ জড়িত অঞ্চল হিসাবে মেনে নেবে।
প্রত্যুত্তরে রাশিয়া বলে যে এই প্রস্তাব তারা গ্রহণ করতে পারে তখন, যখন আগে জাপান
ঘোষণা করবে যে মাঞ্চুরিয়া তে তার কোন স্বার্থ নেই। ফলে জাপান ইতঃস্তত বোধ করে এবং
এই আলোচনা ব্যর্থ হয়ে যায়। রাশিয়া পূর্ব অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র নড়তে অস্বীকার
করে। তখন ক্ষুব্ধ জাপান রাশিয়ার সাথে যাবতীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং পোর্ট
আর্থার আক্রমণের মধ্য দিয়ে (1904 ফেব্রুয়ারি)মাস রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে।
§ রুশ-জাপান যুদ্ধের গুরুত্ব:
আধুনিক দূরপ্রাচ্য
তথা সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে রুশ-জাপান যুদ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম। রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাপানের
বিজয় পূর্ব এশিয়াতে রাশিয়ার আগ্রাসী বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি
করেছিল। প্রাচ্যে রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী সম্প্রসারণ ব্যাহত হবার ফলে রাশিয়া তার লুব্ধদৃষ্টি
পুনরায় ইউরোপে, বিশেষত বলকান অঞ্চলের দিকে নিবদ্ধ করে। বলকান সমস্যা আরও জটিল হয়ে
ওঠে।
রাশিয়াকে পরাস্ত
করার ফলে জাপানের আন্তর্জাতিক মর্যাদা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদী
শক্তিগুলির সমপর্যায়ে উন্নীত হয়ে সে প্রথম শ্রেণীর একটি শক্তি হিসাবে পরিগণিত হয়েছিল।
১৯০২ খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গ-জাপান মৈত্রী চুক্তির দ্বারা ইংল্যান্ড এবং পোর্টসমাউথের সন্ধি-চুক্তির
মাধ্যমে রাশিয়া কোরিয়াতে জাপানের প্রাধান্য স্বীকার করে নেবার ফলে জাপান কোরিয়াকে
গ্রাস করতে উদ্যত হয়। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে কোরিয়া তার স্বাধীনতা হারিয়ে জাপানি সাম্রাজ্যের
অন্তর্ভুক্ত হয়।
যদিও এই যুদ্ধ জাপানকে
নিরবচ্ছিন্ন সাফল্য এনে দিয়েছিল, তবুও এই যুদ্ধের ফলে জাপানে অসংখ্য জীবনহানি ঘটেছিল
এবং যুদ্ধের ব্যয়ভার জাপানের জাতীয় অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল।
রুশ-জাপান যুদ্ধে জাপানের
বিজয় পাশ্চাত্য শক্তির অপরাজেয়তার কাল্পনিক গল্পকে ভূলুণ্ঠিত করেছিল। এশিয়ার অ-শ্বেতকায়
মানুষ জাপানের বিজয়ে আশার আলোর সন্ধান পেয়েছিলেন এবং আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলেন।
বিশেষ করে চীনের মানুষকে জাপানের বিজয় মারাত্মক রকমের অনুপ্রাণিত করেছিল। তারা তীক্ষ্ণ
চোখে লক্ষ করেছিল যে, জাপান আধুনিকীকরণের মাধ্যমে কী প্রচণ্ড শক্তি সঞ্চয় করেছিল।
তখন থেকেই চীনা ছাত্ররা পড়াশুনা করার জন্য জাপান যেতে আরম্ভ করেন।
১৯১১ খ্রিস্টাব্দে চীনের
বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের রূপকার ড. সান ইয়াৎ-সেন জাপানের বিজয় থেকেই জাতীয়তাবাদের
পাঠ নিয়েছিলেন। এশিয়ার সাধারণ মানুষের কাছে রুশ-জাপান যুদ্ধে জাপানের জয় ইউরোপের
ওপর এশিয়ার বিজয়ের বার্তা বহন করেছিল।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।