2.Give an account of the education and the social changes introduces in Japan after the Restoration.
§ সমাজব্যাবস্থাঃ
সামন্ততন্ত্রের অবসান জাপানের
ঐতিহ্যগত সামাজিক জীবনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। সামন্ততন্ত্রের অবসানের পরিণতিতে
ডাইমো বা জমিদারদের জমি সরকারের হাতে চলে এসেছিল। ডাইমো বা জমিদাররা সাধারণ নাগরিকে
পরিণত হয়েছিল। সামন্ততন্ত্রের পতন জাপানে সামাজিক বিপ্লব ঘটিয়েছিল। মেইজি সরকার জন্ম
নয় যোগ্যতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। সব শ্রেণীর মানুষ যে কোনো সরকারি কাজে যোগ দেওয়ার
অধিকার পেয়েছিল। সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে জাপান আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে
নিজেকে প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে গিয়েছিল।
নব্য জাপানের নায়করা এটা
উপলব্ধি করেছিল যে দেশকে আধুনিক ও শক্তিশালী করতে হলে সামাজিক সংস্কার করতে হবে। পাশ্চাত্যের
সমকক্ষতা অর্জন করতে হলে পাশ্চাত্যকে অনুকরণ করতে হবে। পাশ্চাত্য সভ্যতা ভিত্তিক সমাজ
গঠন করতে হবে। জাপানি সম্রাট নিজে ছিলেন উদার। পাশ্চাত্যকে অনুকরণ করার ক্ষেত্রে তাঁর
মনে কোনো দ্বিধা ছিল না।
জাপানি সম্রাট নিজে উদারবাদী
ছিলেন। তিনি পাশ্চাত্য সভ্যতার পৃষ্ঠপোষক ও অনুরাগী ছিলেন। তিনি ইউরোপিয়ান সম্রাটদের
আদব কায়দা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইউরোপীয় পোশাক পরে রাজদরবার থেকে শুরু করে রণক্ষেত্র
সর্বত্রই বিচরণ করতেন। ইউরোপীয়দের কায়দায় চুল কেটে এবং খাদ্যগ্রহণ করে সম্রাট তাঁর
প্রজাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন। এমনকি তিনি গো-মাংস ভক্ষণ করেছিলেন।
পাশ্চাত্যের অনুকরণে
পশ্চিমি ক্যালেন্ডার চালু হয়েছিল। এর ফলে সাতদিনে সপ্তাহ ও রবিবার ছুটির দিন হিসাবে
ধার্য হয়েছিল। ১৮৭২ সালে প্রথম ইয়াকোহামায় রাস্তায় গ্যাসের আলো জ্বালানো হয়েছিল।
১৮৮৭ সালে টোকিওতে প্রথম বিজলি বাতি জ্বলেছিল। ১৮৭৩ সালে সরকারি ডাক পরিষেবার প্রচলন
হয়েছিল। রেলপথ নির্মিত হয়েছিল। ১৮৯৭ সালে জাপানে রেলপথ প্রায় তিন হাজার মাইল পাতা
হয়েছিল। রেলগাড়ির প্রচলন হয়েছিল। রিক্সার পরিবর্তে মোটরযান চালু হয়েছিল। ১৮৭২ সালে
দরবারে এবং সরকারি অনুষ্ঠানে পাশ্চাত্য পোশাক পরিধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। জাপান
ইংরেজদের আদব কায়দা গ্রহণ করেছিল।
পশ্চিমি সভ্যতার প্রভাব জাপানের
নারী সমাজকেও প্রভাবিত করেছিল। ঐতিহ্যগত জাপানি সমাজে নারীদের স্থান যে খুব উচ্চে ছিল
তা বলা যাবে না। মেইজি যুগ নারীদের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে ছিল। ১৮৭২ সালে নারীরা
প্রথম ধর্মীয় স্থানে বা মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছিল। নারী শিক্ষা বিস্তারের
জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। মেয়েরাও পাশ্চাত্য পোশাক পরিধান করেছিল। এ ব্যাপারে
রানি তাদের পথ দেখিয়েছিলেন। জাপানি বিবাহিত মহিলারা দাঁত কালো করতেন এবং চোখের ভ্রু
কামাতেন। রানি এই প্রথাকে ভেঙে দিয়েছিলেন। তিনি ইংল্যান্ডের রানিদের মতো পোশাক পরতেন
।
§ শিক্ষা ব্যবস্থাঃ
মেইজি যুগে শিক্ষা ক্ষেত্রে
বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছিল। মেইজি শাসকেরা সঠিক ভাবে উপলব্ধি করেছিলেন শিক্ষা ক্ষেত্রে
সংস্কার ছাড়া জাপান কখনোই আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে না। আধুনিক
শিক্ষা গ্রহণের জন্য জাপানিদের আগ্রহের সীমা ছিল না। সামন্ততান্ত্রিক জাপানে কেবলমাত্র
সুবিধাভোগী শ্রেণীর লোকেরা লেখাপড়া করার অধিকার পেত। মেইজি শাসকেরা এই ঐতিহ্যকে ভাঙতে
চেয়েছিলেন। তাঁরা পশ্চিমি ধাঁচে শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার এনেছিলেন। সারা পৃথিবী
থেকে জ্ঞান অন্বেষণ করে জাপানে তার প্রয়োগ ঘটানোর কথা মেইজি শাসকেরা বলেছেন। তাঁরা
নতুন জ্ঞান আহরণ করার জন্য জাপানি ছাত্রদের বিদেশে পাঠাবার সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছিলেন।
মেইজি শাসকেরা জাপানের প্রচলিত
শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন। শোগুন যুগে কেবলমাত্র উচ্চবিত্তরা কিছুটা
পড়াশুনার সুযোগ পেত। মঠ, মন্দির প্রভৃতি স্থানে পড়াশুনা হত। মেইজি সরকার একটি পরিকল্পিত
শিক্ষানীতি গ্রহণ করেছিল। ১৮৭১ সালে জাপানে শিক্ষাবিভাগ স্থাপন করা হয়েছিল এবং একজন
মন্ত্রী শিক্ষাবিভাগ পরিচালনা করার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। মেইজি সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে
বাধ্যতামূলক করেছিল এবং এ ব্যাপারে মার্কিন পদ্ধতি অনুসৃত হয়েছিল। ১৮৩৩ সালের মধ্যে
৩৩ লক্ষ ছাত্র শিক্ষা গ্রহণ করেছিল।
জাপানে
ত্রিস্তর শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। সেগুলি হল প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়
ও বিশ্ববিদ্যালয়। এই ত্রিস্তর শিক্ষা ব্যবস্থাকে কার্যকর করার জন্য জন সারে নামে এক
মার্কিন পণ্ডিতকে জাপানে আনা হয়েছিল। বালক বালিকারা . ছয় বছর বয়সে শিক্ষা শুরু করবে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছয় বছর পড়বে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তারা পাঁচ বছর পড়ার পর কলেজে
তিন বছর পড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ে "তাদের তিন বছর পড়তে হবে। এই ত্রিস্তর শিক্ষা
ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য অনেক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এই সময়ে জাপানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল।
১৮৯০ এর দশক থেকে জাপানে
শিক্ষার অভিমুখের পরিবর্তন হয়েছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পাঠক্রমের ওপর সরকারি বিধিনিষেধ
অতিমাত্রায় কার্যকর হয়েছিল। জার্মান শিক্ষানীতি এই সময় অনুসরণ করা হয়েছিল। এই সময়
জাপানের শিক্ষা নীতির মূল বিষয় ছিল - "Education is not for the benefit of
the student but of the nation” অর্থাৎ শিক্ষা ছাত্রদের সুবিধার জন্য নয়, জাতির সুবিধার
জন্য। এই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাগরিকদেরকে রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ করে
তোলা।
সম্রাটের ছবি এবং সরকারি
আদেশ প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছিল। প্রতিবছর একটি বিশেষ দিনে সম্রাটের
ছবিকে সামনে রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছাত্রদের সামনে রাজকীয় আদেশ পড়ে শোনাতেন।
প্রতিটি ছাত্র রাষ্ট্র ও সম্রাটের প্রতি অনুগত থাকার সংকল্প গ্রহণ করত। সরকারি শিক্ষা
ব্যবস্থার পাশাপাশি উদ্যোগেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল।
মেইজি যুগে শিক্ষা পদ্ধতিতে
ব্যাপক সংস্কার হয়েছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। শিক্ষাকে আধুনিক করে তোলার যাবতীয় প্রয়াস
সরকার করেছিল। বিদেশি অধ্যাপকদের জাপান এনে এবং জাপানি ছাত্রদের বিদেশে পাঠিয়ে তারা
পাশ্চাত্য জ্ঞান বিজ্ঞানকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা তাদের ছিল। বিদেশের মূল্যবান
গ্রন্থগুলোকে জাপানি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। এই বিষয়ে প্রধান উদ্যোগী ছিলেন ফুকুজাওয়া
ইউকিচি। তিনি বহু বুদ্ধিজীবীকে সঙ্গে নিয়ে পাশ্চাত্যের বহু বিখ্যাত গ্রন্থ যেমন স্টুয়ার্ট
মিলের 'On Liberty', Samuel Smiles-এর Self Help' প্রভৃতি গ্রন্থকে জাপানি ভাষায় অনুবাদ
করেছিলেন।
আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যা
ও জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথেও জাপানিদের প্রত্যক্ষ পরিচয় হয়েছিল। বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা
ও আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা জাপানের জাতীয় সংহতি বাড়িয়েছিল এবং দেশকে প্রগতির পথে
নিয়ে গিয়েছিল। মেইজি যুগের শিক্ষা ব্যবস্থা সরকারের প্রয়োজনকে মিটিয়েছিল কিন্তু
সাধারণ জনগণের চাহিদা মেটাতে পারেনি।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।