Q.Trace the Origin and development of the Communist movement in China under Mao-Tse-Tung.
চীনের কমিউনিস্ট আন্দোলনের
ইতিহাস মাও-সে-তুং-এর জীবনকে বাদ দিয়ে লেখা সম্ভব নয়। তিনি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী
চীনের প্রধান স্থপতি। চীনের মুক্তি আন্দোলনের নেতা। সমাজতন্ত্রবাদের তাত্ত্বিক পণ্ডিত।
আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। মার্কস ও এঙ্গেলসের মূল সমাজতন্ত্রবাদকে
লেনিন যেভাবে রাশিয়ার উপযোগী করে প্রয়োগ করেছিলেন, সেরূপ মাও-সে-তুংও চীনে সমাজতন্ত্রবাদকে
চীনের উপযোগী করে তার প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন। তিনি বেশ কিছু মৌলিক তত্ত্ব উদ্ভাবন করেছিলেন।
মার্কসবাদ-লেনিনবাদে মাও-সে-তুঙের তাত্ত্বিক সংযোজনগুলো মাওবাদ বা Maoism নামে আজ পরিচিত
হয়েছে।
চীনের কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন
নেতারা চীনে কমিউনিস্ট দল গঠনে তৎপর হয়েছিলেন। কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের প্রতিনিধিরা
১৯২০ সালে চীনে এসেছিলেন। এঁদের নেতৃত্বে ছিলেন ভয়তিনস্কি । তিনি লি-তা-চাও এবং চেন-তু
শিউ প্রমুখ নেতার সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছিলেন। এসবের পরিণতিতে ১৯২১ সালের জুলাই মাসে
চীনের সাংহাই শহরে চীনা কমিউনিস্ট দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। হুনানের প্রতিনিধি হিসাবে
মাও-সে-তুং এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
মাও-এর নেতৃত্বে হুনান
প্রদেশে শ্রমিক আন্দোলন পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছিল । মাও-এর নেতৃত্বে ছাত্ররাও কমিউনিস্ট
আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। তবে মাও সঠিকভাবে অনুধাবন করেছিলেন যে চীনের মতো শিল্পহীন
দেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের হাতিয়ার শ্রমিকরা নন, কৃষকরাই হবেন চীন বিপ্লবের প্রধান
হাতিয়ার । তাঁর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট আন্দোলন চীনের জনমানসে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। কমিউনিস্ট
আন্দোলনকে তিনি সমগ্র চীনে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।
আধুনিক চীনের ইতিহাসে মাও-সে-তুং
এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব। চীনা জনগণের কাছে তিনি মুক্তির ধ্রুবতারা। চীনা বিপ্লবের
তিনি বীর নায়ক। যেভাবে তিনি চীনের মতো আধা-সমাক্ততান্ত্রিক ও আধা-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রে
গণপ্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা ছিল অভূতপূর্ব। এই আপসহীন সংগ্রামী নেতাকে অনেক
প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। একদিকে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদের দাপট অন্যদিকে চিয়াং-কাই-শেকের
মতো শক্তিশালী নেতার নেতৃত্বাধীন প্রতিক্রিয়াশীলদের প্রতিনিয়ত আক্রমণ তাঁকে মোকাবিলা
করতে হয়েছিল। কমিউনিস্টদের মধ্যে ভাবাদর্শগত বিরোধ তাঁকে প্রথমদিকে কোণঠাসা করে দিয়েছিল।
তাঁকে ট্রটস্কিবাদী দক্ষিণপন্থী চেন-তু-শিউ এবং উগ্র বামপন্থী নেতা লি-লি-শানের বিরোধিতার
সম্মুখীন হতে হয়েছিল। চীনা কমিউনিস্ট দলের এমন কিছু নেতা ছিলেন যাঁরা মার্কসীয় রচনাবলী
থেকে বেশ কিছু অপ্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছিল। এছাড়া ছিল মস্কোর
সাথে তাঁর আদর্শগত বিরোধ। তিনি কমিউনিস্ট বিপ্লবের হাতিয়ার হিসাবে চীনের কৃষকসমাজের
ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। মাও সব ধরনের বাধা অতিক্রম করেছিলেন। লেনিনকেও এই ধরনের
বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তিনি মেনশেভিক ও নারদনিকদের ভাবাদর্শের বিরুদ্ধে সংগ্রাম
করে রুশ বিপ্লব সফল করেছিলেন। মাওকেও তাই করতে হয়েছিল।
মাও কেবল বিপ্লবী নেতা
ছিলেন না। তিনি একজন তাত্ত্বিক নেতা ছিলেন। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনাকে বহু গ্রন্থে লিপিবদ্ধ
করেছিলেন। তিনি দার্শনিক হিসাবে খ্যাতিলাভ করেছিলেন। মাও-সে তুঙের মতে সোভিয়েত নেতৃত্ব
মার্কসবাদ থেকে বিচ্যুত হয়ে সংশোধনবাদী পন্থা অনুসরণ করেছে। অন্যদিকে মাও-এর প্রতি
সোভিয়েত নেতৃত্বের সমালোচনা ছিল তিনি বামপন্থী নীতি থেকে সরে এসেছেন।
আধুনিক চীন গঠনে মাও-এর
অবদানকে অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি কতকগুলো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রচনা করেছিলেন।
সেগুলো হল পাঁচশালা পরিকল্পনা, কৃষি উন্নয়ন পরিকল্পনা, ধনী কৃষকদের সুবিধা বিলোপ,
নতুন শিল্পব্যবস্থা ইত্যাদি। তাঁর দক্ষ পরিচালনায় চীন দ্রুত আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত
হয়েছিল। তিনি চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে মধ্যযুগীয় জড়তা থেকে চীনাদের উদ্ধার
করেছিলেন। তিনি চীনের ইতিহাসে এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব।
আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট
আন্দোলনে ও জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে মাও-সে-তুঙের ভূমিকার মূল্যায়ন নিয়ে বিতর্ক আজও
অব্যাহত। ভুললে চলবে না কী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তাঁকে চীনে বিপ্লবকে পরিচালনা করতে
হয়েছিল। চীন ছিল সাম্রাজ্যবাদীদের শোষণের মৃগয়াভূমি। সাম্রাজ্যবাদীদের শোষণে চীনের
ঐক্য নষ্ট হয়েছিল। চীন সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা বিচ্ছিন্ন ও সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতায়
আচ্ছন্ন ছিল । মাও চীনকে এসবের হাত থেকে মুক্ত করেছিলেন। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শক্তিতে
চীন রূপান্তরিত হয়েছে মাও-এর যোগ্য নেতৃত্বের সুবাদে। শক্তিশালী আধুনিক চীনের কারিগর
যে মাও ছিলেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।