টোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রের পতনের কারনগুলি আলোচনা করো।

Nil's Niva
0

 1.Discuss the causes of failure of the Shagunate.

§  টোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রের পতন:

                           ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে যে টোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, তা ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকেই দুর্বল হতে শুরু করেছিল । জাপানের শোগুন শাসকদের ওপর চীন থেকে আগত বৌদ্ধধর্মের প্রভাব ছিল অপরিসীম। তাঁদের উদ্যোগেই বৌদ্ধধর্ম রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা পেয়েছিল। কিন্তু জাপানের সাধারণ মানুষ জাপানের নিজস্ব শিন্টো ধর্মের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। শিন্টো ধৰ্মীয় মতানুযায়ী সম্রাটকেই দেশের প্রকৃত শাসকদের মর্যাদা দেওয়া হত। অথচ প্ৰকৃত শাসনকার্য পরিচালনা করতেন শোগুন। ফলে জনসাধারণের মনে সর্বদাই এই ধারণা বদ্ধমূলক ছিল যে, শোগুনরা অবৈধভাবে দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে সম্রাটকে একটি গুরুত্বহীন জায়গায় বসিয়ে রেখেছেন।শিন্টো ধর্মের পুনরুত্থানের দাবি জাপানে শোগুন-বিরোধী আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল।

                          অষ্টাদশ শতাব্দী থেকেই শোগুনতন্ত্রের প্রশাসনিক দক্ষতা হ্রাস পেতে আরম্ভ করে। ঊনবিংশ শতকে প্রশাসনের ক্ষেত্রে তীব্র নৈরাজ্য দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রেই শোগুনরা শাসনকার্য পরিচালনা করার জন্য ডাইম্যো বা বড়ো জমিদার শ্রেণী এবং সামুরাই বা পেশাদার যোদ্ধাশ্রেণীর ওপর বড়ো বেশি নির্ভর করতেন। এই নির্ভরশীলতার ফলে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এক অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়। অভ্যন্তরীণ সংকট ও বৈদেশিক চাপের সঙ্গে প্রশাসনিক অদক্ষতা যুক্ত হয়ে শোগুনতন্ত্রের পতন অনিবার্য করে তুলেছিল।

                          ই. এইচ. নরম্যান , হিউ বর্টন , জন হ্যালিডে প্রমুখ ঐতিহাসিকেরা টোকুগাওয়া জাপানের কৃষক বিদ্রোহগুলিকে শোগুনতন্ত্রের পতনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। টোকুগাওয়া জাপানে কৃষকের ওপর মাত্রাতিরিক্ত করের বোঝা চাপানো হয়েছিল এবং কৃষকেরা প্রায়ই ডাইম্যো ও সামন্তপ্রভুদের দ্বারা নির্যাতিত হতেন। তাছাড়া, সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে চালের গুরুত্ব হ্রাস এবং মুদ্রা অর্থনীতির প্রচলন কৃষকদের আর্থিক সংকট বাড়িয়ে তুলেছিল। এর প্রতিবাদে অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে জাপানি কৃষকেরা অনেকগুলি কৃষক বিদ্রোহ গড়ে তোলেন। এই কৃষক বিদ্রোহগুলি নিঃসন্দেহে শোগুনতন্ত্রের অধীনস্থ সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি দুর্বল করেছিল।

                           কৃষির সংকট ও কৃষক বিদ্রোহের ফলশ্রুতি হিসাবে জমি থেকে ডাইম্যোদের আয় হ্রাস পায়। কিন্তু শহুরে জীবনযাপনের জন্য তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পায়। ফলে ডাইম্যোরা এক আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হন। এই আর্থিক দুরবস্থার জন্য তাঁরা শোগুনকে দায়ী করেন এবং শোগুনতন্ত্রের পতন কামনা করেন।

                          মেইজি জাপানের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ প্রিন্স মাৎসুকাটা অর্থনৈতিক সংকটকে শোগুনতন্ত্রের পতনের জন্য সব থেকে বেশি দায়ী করেছেন । অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে একটি মারাত্মক অগ্নিকাণ্ড এবং ভয়ংকর একটি ভূমিকম্পের ফলে জাপানের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই ক্ষয়ক্ষতি মেটানোর জন্য তৎকালীন জাপান সরকারকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। রাজকোষের ওপর চাপ পড়ে এবং আর্থিক সংকট দেখা দেয়। অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে অবশ্য জাপানের অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা পরিলক্ষিত হয়। এই সময়ে চালের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং উৎপন্ন চাল ও খনিজ সম্পদ থেকে ভালো রাজস্ব আয় হয়। তাছাড়া, এই সময় থেকে শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নতি ঘটতে থাকে এবং শহর এলাকার বণিকদের কাছ থেকেও রাজস্ব আসতে থাকে। কিন্তু তখন বহির্বাণিজ্য না থাকার ফলে আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক থেকে সরকার বঞ্চিত হয়, তা সত্ত্বেও তদানীন্তন জাপানে একটা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় ছিল এবং উনিশ শতকের গোড়ার দিক পর্যন্ত এই স্থিতিশীলতা চলেছিল। এই অর্থনৈতিক অবক্ষয় অবশ্যই শোগুন শাসনের অবসান ত্বরান্বিত করেছিল।

                                      ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের পর বিদেশি চাপ জাপানের আরবণ উন্মোচিত করেছিল এবং জাপান তার রুদ্ধদ্বার নীতি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। বহির্জগতের সামনে উন্মুক্ত হবার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হিসাবে জাপানে তীব্র শোগুনতন্ত্র- বিরোধী আন্দোলন দেখা দেয়। চারটি গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী সাৎসুমা, চোসু, হিজেন এবং তোসা রাজতন্ত্রের পক্ষ অবলম্বন করে শোগুনতন্ত্রের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে এবং শোগুনতন্ত্রের পতন সুনিশ্চিত হয়।

জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore