চীনের ওপর ২১ দফা দাবি পেশ

Nil's Niva
0

 Q. Discuss critically aims and objective of the 21 demands.

§  চীনের ওপর ২১ দফা দাবি পেশ:

                               ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপানি সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের সাম্রাজ্য বিস্তারে এক সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল। ইংল্যান্ডের মিত্র হিসাবে জাপান ১৯১৪ সালের ২৩ আগস্ট জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনসহ অন্যান্য পাশ্চাত্য শক্তিগুলো ইউরোপে জীবন-মরণ সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। এশিয়া সম্পর্কে তাদের কোনো মোহ সেইসময় ছিল না। পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ছিল জাপান। ইউরোপের শক্তিগুলোর অবর্তমানে জাপান প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে নিজের প্রভাব বাড়িয়েছিল। তাকে বাধা দেওয়ার মতো কোনো শক্তি তখন ছিল না। যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে জাপান সমগ্র পূর্ব এশিয়ার উপর তার আধিপত্য বিস্তারের পরিকল্পনা করেছিল।

                                প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় চীনের পরিস্থিতি খুব জটিল ছিল। চীনে সমরনায়কেরা ক্ষমতাশালী হয়ে বিভিন্ন প্রান্তে নিজেদের ক্ষমতাকে বাড়িয়েছিল। চীনে প্রজাতন্ত্র তখন দুর্বল হয়ে কোনোরকমে টিকে ছিল। চীন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রথমদিকে নিরপেক্ষ ছিল। জাপান চীনের দুর্বলতার সুযোগ নিতে চেয়েছিল।

                               জাপান চীনের ওপর তার নিয়ন্ত্রণকে দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ১৯১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি তার কুখ্যাত ২১ দফা দাবি পেশ করেছিল। এই দাবিগুলোকে মেনে নেওয়া চীনের পক্ষে সম্ভব কিনা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চীনকে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। এই দাবিগুলোকে পাঠানো হয়েছিল তখনকার চীনা রাষ্ট্রপতি ইউয়ান-সি কাই-এর কাছে। তাকে এই দাবিগুলিকে গোপন রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এই দাবিগুলি যদি গোপন থাকে এবং চীনা রাষ্ট্রপতি যদি সেগুলো মেনে নেন তাহলে জাপান তার লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার সুযোগ পাবে। পাশ্চাত্যের শক্তিবর্গ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যস্ত ছিল এবং তারা এশিয়াতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আগ্রহী ছিল। তাই জাপানের মনে হয়েছিল তারা জাপানের দাবিগুলোকে মেনে নেবে। জাপানের ২১ দফা দাবি গোপন থাকেনি।

 

                             চীনের ওপর আরোপিত জাপানের ২১ দফা দাবিকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলি হল :

১. শানটুং অঞ্চলে জাপানের প্রাধান্য সংক্রান্ত দাবি।  

২.দক্ষিণ মাঞ্চুরিয়া ও পূর্ব অন্তর্মঙ্গোলিয়া সংক্রান্ত দাবি

৩. চীন থেকে কয়লা ও লৌহ শিল্প সংক্রান্ত সুযোগ সুবিধার দাবি।

৪. চীনের উপসাগর, বন্দর, তীরবর্তী দ্বীপ ইত্যাদি হস্তান্তরিত না করার দাবি।

৫. চীনের অভ্যন্তরীণ শাসনের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের ওপর জাপানের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত দাবি।

                          শানটুং সংক্রান্ত দাবি প্রসঙ্গে জাপানের বক্তব্য ছিল যুদ্ধ শেষে জাপান এই ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেবে তা চীনকে মেনে নিতে হবে। আসলে জাপান এই অঞ্চলকে নিজের অধিকারে রাখতে চেয়েছিল। এখানকার বন্দর, খনি ও রেলপথকে জাপান নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেয়েছিল।

                        জাপান কর্তৃক উত্থাপিত তৃতীয় গুচ্ছ দাবির অর্থ ছিল চীনের কয়লা ও লোহার উৎসগুলোকে জাপানের নিয়ন্ত্রণে আনা। হ্যান-ইয়ে-পিং নামে এক কোম্পানি চীনে কয়লা ও লোহার খনিগুলোকে পরিচালনা করত। জাপান দাবি করেছিল এই কোম্পানিকে এবং চীনের লোহা ও কয়লা খনিগুলোকে চীন-জাপানের যৌথ প্রকল্পে আনতে হবে।

                       জাপানে চতুর্থ গুচ্ছর দাবি ছিল চীন যেন কোনো উপসাগর, বন্দর, উপকূলবর্তী কোনো দ্বীপ ইত্যাদি বিদেশিদের অর্পণ না করে এবং ইজারা না দেয়। এই দাবির পিছনে জাপানের আসল উদ্দেশ্য ছিল চীনের দরজাকে বিদেশিদের সামনে বন্ধ করে দেওয়া। জাপানের এই দাবিকে এশিয়াতে মনরো নীতির প্রয়োগ বলা চলে।

                      চীনের কাছে জাপানের পঞ্চম গুচ্ছের দাবি ছিল সবচেয়ে মারাত্মক। জাপানের দাবি ছিল চীনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক বিভাগে জাপানি উপদেষ্টা নিয়োগ করতে হবে। চীনের কয়েকটি শহরে যৌথভাবে চীনা-জাপানি পুলিশ প্রশাসন নিয়োগ করবে। জাপান আরও দাবি করেছিল চীনের প্রয়োজনীয় সমর উপকরণের ৫০ শতাংশ জাপান থেকে কিনতে হবে। চীনে একটি অস্ত্রাগার নির্মাণ করতে হবে।

                       চীনের ওপর আরোপিত এই ২১ দফা দাবি ছিল নিঃসন্দেহে অপমানজনক। আসলে জাপান পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য ইউরোপীয় শক্তিগুলি ব্যস্ত ছিল। তাদের পক্ষে জাপানকে বাধা দেওয়া কিংবা চীনকে রক্ষা করা সম্ভব ছিল না। এই পরিস্থিতি থেকে চীনের মুক্তি ছিল না। চীন এই দাবিকে প্রত্যাখ্যানও করেনি কিংবা মানেওনি। চীনা রাষ্ট্রপতি ইউয়ান-সি-কাই ২১ দফা দাবির গোপনীয়তা ভঙ্গ করেছিলেন। এই দাবিগুলো প্রকাশ পেলে চীনে প্রচণ্ড গণঅসন্তোষ ও বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। জাপান চীনকে চাপ দেওয়ার জন্য ১৯১৫ সালের ৭ মে এক চরমপত্র প্রেরণ করেছিল। এই চিঠির বক্তব্য ছিল জাপানের দাবি না মানলে যুদ্ধ অনিবার্য। যুদ্ধের ইঙ্গিত স্বরূপ রণতরী ও যুদ্ধ জাহাজের জলছাপ এঁকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। চীনের সাধারণ জনগণ জাপানের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিল।

                      জাপান চীনের ওপর যে ২১ দফা দাবি চাপিয়েছিল তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে বিতর্ক থাকাই স্বাভাবিক। জাপান চীনের ওপর ২১ দফা দাবি চাপিয়ে সঠিক কাজ করেনি। জাপানের দাবিগুলি ছিল নৈতিক ও মানবতার আদর্শ বিরোধী দৃষ্টান্ত। এই দাবিগুলি পেশ করে জাপান তার নির্লজ্জ সাম্রাজ্যবাদের নগ্ন প্রকাশ ঘটিয়েছিল। ব্রিটিশমন্ত্রী স্যার জন জর্ডন জাপানের আগ্রাসনের নিন্দা করেছিলেন। তিনি জাপানের কাজকে জার্মানির থেকেও নিন্দনীয় বলে মনে করেছিলেন।

 

 

জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore