দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারনগুলি আলোচনা করো।

Nil's Niva
0

 Q.Discuss the diplomatic background of the Second World war.

                   প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাত্র কুড়ি বছরের মধ্যেই ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩রা সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। এই বিশ্বযুদ্ধ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ অপেক্ষা অনেক বেশি ব্যাপক, বিধ্বংসী ও ভয়াবহ ছিল। এই যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ছিল প্রায় পাঁচ কোটি, আহত প্রায় চার কোটি এবং বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই কোনও-না-কোনওভাবে এই মহাযুদ্ধের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। এই মহাযুদ্ধের পেছনে নানা কারণ ছিল।

(১) ভার্সাই সন্ধির ত্রুটি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য অনেকেই ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ভার্সাই সন্ধিকে দায়ী করে থাকেন। তাঁদের মতে, ভার্সাই সন্ধির মধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ভার্সাইয়ে সমবেত নেতৃমণ্ডলী নিছক প্রতিশোধ-স্পৃহা দ্বারা পরিচালিত হয়ে পরাজিত জার্মানির উপর এই অপমানজনক, প্রতিশোধমূলক, স্বার্থপর ও সর্বনাশা ভার্সাই চুক্তি বলপূর্বক চাপিয়ে দেন। জার্মানির ন্যায্য দাবিগুলি পূরণ করে জার্মানিকে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের সীমানায় ফিরিয়ে দিলেই জার্মানি সন্তুষ্ট হত ।

(২) নাৎসি দলের উত্থান : জার্মানিতে নাৎসি দলের উত্থান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত। এই দলের উদ্দেশ্য ছিল (ক) ভার্সাই সন্ধিকে বাতিল করা, (খ) ইউরোপের জার্মান ভাষাভাষী অঞ্চলগুলিকে জার্মানির অন্তর্ভুক্ত করে বৃহত্তর জার্মানি গঠন করা এবং (গ) বিশুদ্ধ আর্য জাতি হিসেবে পৃথিবীর অপরাপর জাতিগুলির উপর জার্মানির আধিপত্য স্থাপন করে বিশ্বব্যাপী এক জার্মান সাম্রাজ্য গঠন করা। সুতরাং নাৎসি দলের মূল লক্ষ্যগুলি কার্যকর করতে গেলে জার্মানির পক্ষে যুদ্ধনীতি গ্রহণ করা অপরিহার্য ছিল।

(৩)ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সাম্রাজ্যবাদী-স্পৃহা। ভার্সাই চুক্তির ফলে জার্মানি তার উপনিবেশগুলি থেকে বঞ্চিত হয় এবং মিত্রশক্তিবর্গ তা নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেয়। মিত্রপক্ষে থাকা সত্ত্বেও ইতালি ও জাপান যা পেয়েছিল তাতে তারা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়। এইভাবে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আমেরিকা, বেলজিয়াম, হল্যান্ড প্রভৃতি দেশ পৃথিবীর বিভিন্ন উপনিবেশ নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেয়।  

(৪) মিত্রপক্ষীয়দের মধ্যে বিবাদ: মিত্রপক্ষীয় বিভিন্ন দেশের অনৈক্য ও স্বার্থ-সংঘাত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে অনিবার্য করে তোলে। জাপান সুদূর প্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করলেই ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি মিত্রদের সঙ্গে তার বিবাদের সূচনা হয় এবং জাপান অন্য শিবিরে যোগদান করে। সুতরাং যুদ্ধান্তে মিত্রপক্ষীয় শক্তিবর্গের পারস্পরিক বিবাদ বিশ্বে নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

(৫) ইঙ্গ-ফরাসি অনৈক্য : ইংরেজ, ফরাসি এবং মার্কিন ঐতিহাসিক ও রাষ্ট্রনীতিজ্ঞরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মানিকে দায়ী করলেও, ইঙ্গ-ফরাসি পক্ষের দায়িত্ব অস্বীকার করা যায় না। ইঙ্গ-ফরাসি মতানৈক্যের জন্য জার্মানি একের পর এক ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলী লঙ্ঘন করতে থাকে, যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, জাতিসঙ্ঘের দুর্বলতা সর্বসমক্ষে প্রকট হয়ে ওঠে এবং ইউরোপীয় রাজনীতি দ্রুত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ধাবিত হয়।

(৬)নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের ব্যর্থতা: নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের ব্যর্থতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ। আন্তর্জাতিক শান্তির অন্যতম শর্ত হিসেবে প্রেসিডেন্ট উইলসন তাঁর ‘চোদ্দো দফা শর্তে নিরস্ত্রীকরণের কথা বলেন। ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলী এবং জাতিসঙ্ঘের চুক্তিপত্রে নিরস্ত্রীকরণের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়। জার্মানি জাতিসঙ্ঘের সদস্যপদ ত্যাগ করে ইচ্ছামতো সামরিক সাজসজ্জা বৃদ্ধি করতে থাকে। এর ফলে ইউরোপে যুদ্ধের পরিবেশ গড়ে ওঠে।

(৭)জাতিসঙ্ঘের ব্যর্থতা: জাতিসঙ্ঘের দুর্বলতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ। প্রথম মহাযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে জাতিসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। নানা কারণে জাতিসঙ্ঘ তার কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়, যার পরিণতি হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

 (৮)দুই শক্তিজোটঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইউরোপ যেমন পরস্পর-বিবদমান দুটি রাষ্ট্রজোটে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেও ঠিক ওই একই অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। জাপান, জার্মানি ও ইতালিএই তিনটি ‘অতৃপ্ত রাষ্ট্র পারস্পরিক অধিকার ও স্বার্থরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গড়ে তোলে ‘রোম-বার্লিন-টোকিও' জোট বা ‘অক্ষশক্তি' (‘Axis Power)। অপরদিকে, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স জোটবদ্ধ হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই জোটে (মিত্রশক্তি) যোগ দেয়। এই দুই পরস্পর-বিরোধী জোটের মধ্যে সন্দেহ, বিবাদ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ।

(৯) ইঙ্গ-ফরাসি তোষণ নীতি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ হিসেবে অনেকেই ইঙ্গ-ফরাসি তোষণ নীতিকে দায়ী করেছেন। জার্মানি-ইতালি-জাপান যখন ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলী লঙ্ঘন করে ধাপে ধাপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল তখন ইঙ্গ-ফরাসি পক্ষ তাদের বাধা না দিয়ে অহেতুক তোষণ নীতি গ্রহণ করে তাদের সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষাকে আরও বৃদ্ধি করে দেয়।

(১০) প্রত্যক্ষ কারণ : ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে হিটলার উপলব্ধি করেন যে, ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ আসন্ন। এই যুদ্ধে যাতে রাশিয়া ইঙ্গ-ফরাসি পক্ষে যোগ দিতে না পারে, সেজন্য হিটলার রাশিয়ার সঙ্গে দশ বছরের অনাক্রমণ চুক্তি (আগস্ট, ১৯৩৯ খ্রিঃ) সম্পাদন করেন। রুশ রাষ্ট্রপ্রধান স্ট্যালিনও বিশেষ পরিস্থিতিতে এই চুক্তি সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন। অতঃপর ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে। ৩রা সেপ্টেম্বর ইঙ্গ-ফরাসি জোট পোল্যান্ডের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।

জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore