প্রশ্নঃ ভারতীয় সমাজের উপর জৈন ধর্মের প্রভাব আলোচনা করো।
§ ভারতীয় সমাজের উপর জৈন ধর্মের প্রভারঃ
Ø দর্শনের ক্ষেত্রে—
জৈন
ধর্ম ভারতীয় সামাজিক জীবনে নব জীবনের সঞ্চার ঘটায়। জৈন ধর্ম নতুন তথ্যের উপস্থাপন
করেছে যা ভারতীয় দশর্ণের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। জৈন ধর্মে জ্ঞান তথ্য, বহুত্ববাদী
দর্শন, সত্য ও অহিংসার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক জীবনের আত্মাপূর্ণ জ্ঞান
যুক্ত এবং তার ওপর সাংসারিকতার পর্দা ঢাকা থাকে। এটিকে জ্ঞান তথ্যের অন্তর্গত বলে মনে
করা হয়েছে। এই কারণে ব্যক্তি জ্ঞানের প্রকাশ করতে পারে না । সুতরাং প্রত্যেককে এই
পর্দা সরিয়ে জ্ঞানকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। বিচার সমন্বয়ের দৃষ্টিতে জৈন ধর্মে বহুত্ববাদী
দর্শনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
Ø সাহিত্যের ক্ষেত্রে-
জৈন
ধর্মে ভাষা এবং সাহিত্যের ক্ষেত্রে সাংস্কৃতির সমন্ধয়কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সংস্কৃতি পণ্ডিতগণের ভাষা ছিল এবং জৈন ধর্মের অভ্যুদয়ের পূর্বে গ্রন্থগুলি সংস্কৃত
ভাষায় রচনা করা হয়েছিল। কিন্তু সংস্কৃত জনসাধারণের ভাষা ছিল না। জনসাধারণের ভাষা
পালি ও প্রাকৃত ছিল। মহাবীর স্বামী প্রাকৃত ভাষাতেই উপদেশ দিতেন, যার প্রভাব জনসাধারণের
ওপর পড়েছে। দক্ষিণ ভারতে ধর্ম প্রচারের জন্য তামিল এবং কন্নড় ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে।
জৈন চার্যগণ অধিকাংশ গ্রন্থের রচনা প্রাকৃত ভাষায় করেছিলেন। কোনো কোনো জৈনাচার্য সংস্কৃত
ভাষাতে ও গ্রন্থ লিখেছিলেন। জৈন ধর্ম ভারতে জনভাষার বিকাশে অনেকটা সাহায্য করেছিল।
দর্শন, ব্যাকারণ, ছন্দশাস্ত্র, গণিত, কাব্য ও নাটক ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কিত সাহিত্যের
সৃজনও অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি করেছেন। জৈন গ্রন্থের বিশেষ গুরুত্ব হল এটি প্রাচীন ভারতীয়
ইতিহাসকে প্রমাণ সাপেক্ষে জানতে সাহায্য করেছে।
Ø কলার ক্ষেত্রে—
জৈন
কলা ভারতীয় কলার স্বরূপকে উজ্জ্বল করতে বিশেষভাবে সাহায্য করেছে। জৈন ধর্মাবলম্বীগণ
নিজেদের তীর্থঙ্করদের স্মরণে সুন্দর সুন্দর ভবন, মন্দির মূর্তি, স্তূপ ইত্যাদি তৈরি
করিয়েছিলেন। একাদশ এবং দ্বাদশ শতাব্দীতে জৈন কলা বিকাশের শিখরে পৌঁছে গেছিল। আবু পবর্তের
ওপর শ্বেত পাথরে তৈরি দিলবারা মন্দির তার নিজের কলার জন্য বিশ্ব প্রসিদ্ধ। মধ্য ভারতের
ঋতুবাহে কোন কোন জৈন মন্দির দশম শতাব্দীতে তৈরি হয়েছে। ইলোরাতে অনেক জৈন গুমফা আছে।
উড়িষ্যার পুরী জেলায় উদয়গিরিও খণ্ডগিরিতে ৩৫টি জৈন গুম্ফা পাওয়া গেছে। এইগুলির
জৈন ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত চিত্রকলা এবং মূর্তিকলা দেখার মতো।
Ø সামাজিক ক্ষেত্র—
জৈন
ধর্ম সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। তারা জন্মভিত্তিক জাতিব্যবস্থায়
বিরোধীতা করে। মহাবীর উচ্চ নিন্মের ভেদাভেদকে কখনও স্বীকার করেননি। নিজের কর্মের ওপরই
তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, মানুষ মাত্রই মোক্ষলাভের অধিকার আছে, তা সে
যে কোন জাতিরই হোক না কেন। মহাবীর নারীকে সম্মান করতেন। সে শুধু ধর্ম জৈনধর্ম সামাজিক
সাম্যের ওপর জোর দেয়। জৈনধর্মে নৈতিক আদর্শ এবং চরিত্র নির্মাণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে,
জৈন ধর্ম ভারতীয় দর্শন, সাহিত্য, কলা এবং সংস্কৃতিকে নানা ভাবে প্রভাবিত করেছে। এটি
ভারতীয় সামাজিক জীবনে ব্যাপ্ত সামাজিক ত্রুটিগুলিকে দূর করার চেষ্টা করেছে।
জ্ঞ্যানজ্যোতি
কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
6295916282; 7076398606
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।