শিখ ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।

Nil's Niva
0

 

প্রশ্নঃ শিখ ধর্মের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।    

                                                                          প্রশ্ন মানঃ১২

§  শিখ ধর্মের বৈশিষ্ট্যঃ

                       শিখ ধর্ম একটি এমন ধর্ম যেখানে হিন্দু ও মুসলমান ধর্মের বৈশিষ্ট্য ছাড়া খ্রিস্টান ধর্মের বৈশিষ্ট্যও স্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া যায়। সুতরাং শিখ ধর্ম হল সমন্বয়াত্মক প্রগতিশীল ও ব্যবহারিক ধর্ম, যার মধ্যে সকল ধর্মের বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায়। শিখ ধর্মের বাস্তব আদর্শকে জানা প্রয়োজন এই ধর্মের বৈশিষ্ট্যগুলিকে। ক সহজে বুঝতে গেলে প্রথমে

1)শিখ ধর্ম কর্মকাণ্ডের বিরোধীঃ শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানক হিন্দুদের মধ্যে ব্যাপ্ত কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করেন এবং প্রচলিত সংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসের ওপর আঘাত হানেন। নানক দেব এবং অন্যান্য শিখ গুরুগণ ‘ব্রাহ্ম' অথবা ‘মোক্ষ' প্রাপ্তির জন্য কর্তব্যকেই সর্বোচ্চ স্থান দেন। উদাসীর জন্য যখন নানক দেব গয়া যান, তখন সেখানে পণ্ডিতদের পিণ্ডদান ও দীপদান করতে দেখে নিজেদের তীক্ষ্ণ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন— “আমার দীপ হল ঈশ্বরের নাম যার মধ্যে লোকেদের দুঃখের তেল ফেলা হয়েছে। এই দীপ আমার মৃত্যুভয়রূপী অন্ধকারকে দূর করে দিয়েছে। মৃত ব্যক্তিকে পিণ্ডদান করে কী হবে? বাস্তবিক কর্মকাণ্ড হল ঈশ্বরের নাম যা সর্বদা আমার উদ্ভাবক।”

2)শিখ ধর্ম এক ঈশ্বরে আস্থা রাখেঃ এই ধর্ম মূর্তিপূজায় বিশ্বাস করে না। এই ধর্ম ঈশ্বরকে সর্বব্যাপক ও সর্বশক্তিমান বলে মনে করে। বিভিন্ন যাত্রার কারণে গুরু নানক দেব মুসলমানদের পবিত্র স্থান মক্কায় যান। যাত্রাপথের ক্লান্তির কারণে তিনি কাবার দিকে পা করে শুয়ে পড়েছিলেন। এই সময় সেখানকার লোকেরা তাকে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে তোলে এবং বলে যে তিনি এটা কী করছেন? যেখানে খুদা আছেন, সে দিকেই পা দিয়ে শুয়ে আছেন? তখন গুরু নানক দেব সহজ ও মধুর ভাবে তাদের বলেন যে, যেদিকে খুদা নেই সেদিকে তার পা করে দিতে। এমন কথিত আছে যে, যেদিকে তারা নানকের পা ঘুরিয়ে দেয় সেদিকে কাবাও ঘুরে যায়। গুরু নানক দেবের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ ধর্মের মধ্যেই একজন সর্বশক্তিমান ও অলৌকিক শক্তির উপর আস্থা রেখে ব্রহ্ম অথবা সত্যলোক লাভ করতে পারে ।

3)সাম্যের নীতির ওপর জোরঃ শিখ ধর্মে সাম্যের নীতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। অন্যভাবে বলা যায় এই ধর্মের দৃঢ় বিশ্বাস হল যে কোনো ব্যক্তি জন্ম থেকেই উঁচু, নীচু হয় না। পরমাত্মা সবাইকে সমান করে তৈরি করেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি সমাজে ছোট বা বড় হয় তাহলে তা সে নিজের কর্মের জন্য। গুরু নানক প্রত্যেক মানুষকেই ভালবাসতেন তা সে যে কোনো বর্ণেরই হোক না কেন। শিখ ধর্মে সাম্যের নীতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি ধার্মিক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করতে পারে। শিখ গুরুগণ স্ত্রী-পুরুষ এর অধিকারের মধ্যেও সাম্যের কথা বলেছেন।

4)ব্যক্তিগত অহঙ্কার ও কর্মের প্রদর্শনের গুরুত্ব নেইঃ গুরু রামদাস বলেছেন যে, “মনের গতিতে চলতে থাকা মানুষ ক্লান্ত হয়ে যায়। কিন্তু তার মনের ময়লা দূর হয়ে যায় না। লালন মন না থাকার ফলে ভক্তিও আসে না, নিজের কল্যাণ সাধনও হয় না।” স্বয়ং গুরু নানক দেব বলে ছিলেন, “যতক্ষণ না মনকে মেরে ঠিক করা যায় ততক্ষণ কোনো কার্য সিদ্ধ হয় না। মনকে নিজের বশে রাখা ততক্ষণ সম্ভব যখন তাকে দিয়ে রামের গুণগান করানো যায়। তখনই ভোলা মন ঐ একাকারে গিয়েই স্থির হতে পারে।” নানক একথাও বলেছেন যে, 'হঠকারিতা ও নিগ্রহ করা মাত্রেই শরীর নষ্ট হয়ে যায়। কেবল ব্রত ও তপস্যা দ্বারা মনকে বশে আনা যায় না, কেবল রাম নামের দ্বারাই মনকে বশে আনা যায়।

5)আদর্শ ও ব্যবহারের সামঞ্জস্যের ওপর জোরঃ শিখ গুরুগণ ব্যক্তির আদর্শ ও আচরণের মধ্যে সামঞ্জস্য স্থাপন করার ওপর বেশি জোর দিয়েছেন এবং একে আবশ্যক বলেও মনে করা হয়েছে। তাই নানক থেকে শুরু করে গুরু গোবিন্দ সিংহের সময় পর্যন্ত শিখ গুরুগণ যে তথ্য ও উপদেশ রচনা করেছিলেন তা ব্যবহারিক দিক থেকে পরিবর্তন করারও চেষ্টা করা হয়েছে। সাথে সাথে একথাও বলা হয়েছে যে, যদি ব্যক্তির কথা ও কাজের মধ্যে পার্থক্য থাকে তাহলে উর্দ্ধ থেকে উচ্চ বিচারও নিরর্থক হয়ে যায়।  

6)শিখ ধর্মে ব্যবহারিকতার গুণঃ আজ শিখ ধর্ম যতটা প্রগতিশীল ও ব্যবহারিক ততটা অন্য কোনো ধর্ম নয়। গুরু অর্জুনদেরে অন্তিম সময় থেকে শুরু করে গুরু গোবিন্দ সিংহের সময় এই ধর্মকে মুসলমানদের কাটুতাপূর্ণ ব্যবহারের সম্মুখীন হতে হয়। মুসলমান শাসকগণ নিজ সৈনিকদের সাহায্যে তাদের ভোজনের জিনিসপত্র অপবিত্র করে দিত এবং তাদের ধর্ম থেকে বিচলিত করারও চেষ্টা করত। এই পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য গুরু গোবিন্দ সিংহ নিজের নেতৃত্বে খালসা সম্প্রদায় গঠন করেন এবং প্রত্যেক শিখ অনুগামীদের জন্য কেশ, চিরুনি, কৃপাণ, বাচ্ছা ও কড়ার ব্যবহার অনিবার্য করেন। কেশ রাখার কারণ হল যাতে একজন শিখ অপর শিখকে সহজে বুঝতে পারে। চিরুনি ব্যবহার করা হয় লম্বা চুলকে ঠিক ভাবে রাখার জন্য। কৃপাণ ব্যবহার করা হয় বিরোধী গোষ্ঠীর হাত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য। কাচ্ছার প্রয়োগ এই কারণে করা হয় যাতে লড়াইয়ের সময় বস্ত্র হরণ হলেও শিখ যাতে নগ্ন না হয়ে যায়। কড়া প্রয়োগ করা হয় সৈনিকদের ছোঁয়া অপবিত্র জিনিসগুলিকে শুদ্ধ করার জন্য।

7)শিখ ধর্মে গুরুদের প্রতি গভীর নিষ্ঠাঃ শিখ ধর্মে ঈশ্বর লাভের জন্য গুরুর প্রতি গভীর আস্থা প্রকট করা হয়েছে। নানকের মতে “গুরু পাওয়ার পরেই সাংসারিক জীবনের শেষ এবং আধ্যাত্মিক জীবনের শুরু অনুভব করা যায়, গর্ব দূর হয়ে যায়, মৃতাবস্থা লাভ করা যায় ও হরির চরণে স্থান পাওয়া যায়। সংসারে যত খুশি বন্ধু থাকুক না কেন, গুরু ছাড়া পরমেশ্বরের অস্তিত্বকে বোঝা যায় না।

গুরু অমরদাসও বলেছেন “প্রত্যেক মানুষের মধ্যে হীরা, পান্নার মতো রত্ন রয়েছে। কিন্তু অজ্ঞানতাবশত আমরা তাদের ঠিক মতো চিনতে পারি না। গুরুর সহায়তাতেই আমরা অত্যন্ত অগম্য ও অপার নাম ও নিরঞ্জন লাভ করতে পারি।

শিখ ধর্মে ঈশ্বর লাভের জন্য সৎগুরুর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, সৎ গুরুই আমাদের আনন্দ লাভ করতে সাহায্য করে। তিনি প্রভু, তিনি নারায়ণ, গুরুর মতো দাতা আর নেই। শিখ ধর্মে গুরুকে এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, আজ কোনো মানব গুরু না থাকলেও দশজন শিখ গুরুর উপদেশগুলিকে সাক্ষাৎ গুরু বলেই মনে করা হয়। তাই শিখগণ ‘আদি গ্রন্থ'কে 'গুরু গ্রন্থ সাহেব' বলে সম্বোধিত করেন। শিখ ধর্ম সম্পর্কে যদি অধিক জানতে চাই তাহলে আমাদের ‘গুরু গ্রন্থ সাহেব' কে জানতে হবে যা শিখদের একটি মহান ধর্মীয় ও পবিত্র গ্রন্থ।

জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

6295916282; 7076398606

জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore