প্রশ্নঃ ভারতীয় সমাজের উপর বৈদ্ধ ধর্মের প্রভাব আলোচনা করো।
প্রশ্ন মানঃ১২
§ ভারতীয় সমাজের ওপর বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবঃ
বৌদ্ধ ধর্ম ভারতীয় সভ্যতা এবং সাংস্কৃতিকে
বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করেছে। অনেক ক্ষেত্রে বৌদ্ধ ধর্মের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই আর. ঘোষালের মতে “বৌদ্ধ ধর্ম একটি বড় ও প্রভাবশালী ধর্মীয় আন্দোলন ছিল, যা মানুষের
উন্নতিতে সাহায্য করেছিল।”
বৌদ্ধ ধর্ম ভারতীয় সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে।
1)সাহিত্যের ক্ষেত্রেঃ
মানুষের বুদ্ধির বিকাশে বৌদ্ধধর্মের অবদান অপরিসীম। জনসাধারণের
ভাগপালি ও প্রকৃত বৌদ্ধ ধর্ম সাহিত্যে স্থান পেয়েছে। জয়াদিত্য এবং জীনেন্দ্র প্রমুখ
ব্যক্তিগণ ব্যাকরণ ও তর্কশাস্ত্রে যোগদান করেছেন। নাগার্জুন মাধ্যমিক দর্শনকেও ঠিকমত
সাজিয়েছিলেন। বুদ্ধচরিত, সরিতপুত্র প্রকরণ, মিলিন্দপদ্ম, অমরকোষ প্রমুখ বিখ্যাত গ্রন্থ
ভারতীয় সাহিত্যকে অমরত্ব প্রদান করেছে। পালি ভাষায় রচিত ত্রিপিটক এবং জাতকের কথাগুলি
খুবই বিখ্যাত। বৌদ্ধ ধর্মই প্রথম নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষা
শুরু করে। তদন্তপুরী এবং বিক্রমশীলাতেও বৌদ্ধ শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়।
2)দর্শনের ক্ষেত্রেঃ
বৌদ্ধ বিচারকগণ এবং দার্শনিকগণ বিবিধ সমস্যার ওপর স্বাধীনভাবে
চিন্তাভাবনা করে নতুন বিচারধারার উদ্ভাবন করেন। নতুন নতুন দার্শনিক সম্প্রদায় উৎপন্ন
হয়। নাগার্জুন শূন্যবাদ এবং মাধ্যমি দর্শনের উপস্থাপনা করেন। বৌদ্ধধর্মের অনেক দার্শনিক
বৌদ্ধ দার্শনিক সাহিত্যের সৃষ্টি করেন। অনাত্মবাদ, অনীশ্বরবাদ, কর্মবাদ, পুর্নজন্মের
তথ্য, প্রতীতা সমুৎপাদ নিয়ম, আন্তরিক বৃদ্ধি এবং নির্বাণ সংক্রান্ত দার্শনিক চিন্তাধারাগুলি
হল বৌদ্ধধর্মের অমূল্য দান।
3)স্থাপত্য কলা ক্ষেত্রেঃ
বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবে বাস্তু কলা এবং ভবন নির্মাণ কলা অত্যাধিক
বিকশিত হয়। বৌদ্ধদের নির্মিত অনেক স্তূপ ও চৈত্য উৎকৃষ্ট কলার নিদর্শন, অজন্তা ইলোরার
গুহা, সাঁচী, অমরাবতীর স্তূপ, তাঁর প্রবেশদ্বারের স্থাপত্যকলা বৌদ্ধ ধর্মের অনুপম সৃষ্টি।
4)চিত্রকলার ক্ষেত্রেঃ
চিত্রকলার দিক থেকে বৌদ্ধকালকে স্বর্ণকাল বলা হয়েছে। বুদ্ধের
বিভিন্ন জন্মের কল্পিত স্বরূপকে বোধিসত্ত্ব বলা হয়েছে। বুদ্ধ ও বৌদ্ধ সাহিত্যের জীবনের
সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক চিত্র অজন্তার গুহাচিত্রের প্রভাব অনেক স্থানের স্তূপে অঙ্কিত
চিত্রকলার ওপরও পড়ে।
5)মূর্তিকলার ক্ষেত্রেঃ
কুষাণ যুগে বৌদ্ধ মূর্তিকলার বিকাশ হয়। ঐ যুগের মূর্তিকলার
দুটি অন্যতম কেন্দ্র মথুরা ও গান্ধারের ওপর গ্রীক শিল্পকলার প্রভাব ছিল। এই যুগে বুদ্ধের
পাথর ও ধাতুর অনেক আকর্ষক মূর্তি তৈরি করা হয়েছিল।
6)প্রশাসনিক ক্ষেত্রেঃ
প্রশাসনিক ক্ষেত্রে উদারতা এবং সহিষ্ণুতায় বৌদ্ধ ধর্মের
প্রভাব রয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই সম্রাট অশোক ও অন্যান্য রাজারা
উদার নীতি গ্রহণ করেছিলেন।
7)সঙ্ঘ ব্যবস্থাঃ
সঙ্ঘ ব্যবস্থা বৌদ্ধ ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ দান। ভারতে
জনসাধারণের জন্য সংগঠিত এবং ব্যবস্থিত লৌকিক, আধ্যাত্মিক এবং নৈতিক শিক্ষার প্রচার
প্রসারের চেষ্টা বৌদ্ধ সঙ্ঘেই করা হয়েছিল।
৪)রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় একতাঃ
বৌদ্ধ ধর্ম, অস্পৃশ্যতা, জাতিবাদ এবং উচ্চ-নীচ ভাবধারায়
সমাপ্তি ঘটিয়ে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক একতার জন্য অনেক চেষ্টা করেন। কথা ভাষার প্রয়োগের
ফলে জনসাধারণ এই ধর্মোপদেশ সহজভাবে বুঝতেও পারে। এই কারণে একতার সৃষ্টি হয়।
9)ধর্মীয় ক্ষেত্রেঃ
বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবে ব্রাহ্মণ্য ধর্মে উদারতা সৃষ্টি হয়।
পশুবলির মতো কু-প্রথার সমাপ্তি ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। জটিল ও বৌদ্ধিক কর্মকাণ্ড থেকেও
লোকেরা মুক্তি পেতে শুরু করে।
10)বিদেশে সভ্যতা, সংস্কৃতির প্রসারঃ
বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং পণ্ডিতগণ বিদেশে গিয়েও বৌদ্ধ ধর্মের
প্রচার চালান। ফলে ভারতীয় সভ্যতা এবং সংস্কৃতির প্রভাব মধ্য এশিয়ার অনেক দেশে ছড়িয়ে
পড়ে।
জ্ঞ্যানজ্যোতি
কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
6295916282; 7076398606
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।