যোগ শিক্ষার সংজ্ঞা লেখো ?সংখ্যা দর্শনে যোগশিক্ষার নীতিগুলি আলোচনা করো।কিভাবে যোগব্যায়াম মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে?
যোগ শিক্ষা কি:
সংস্কৃত যোগ শব্দটি ইংরেজীতে YOGA । YOGA -যোগ মানে ব্যায়াম নয়। শরীর,
মন, ও আত্মার ক্রম উন্নয়নের যে পদ্ধতি (Method) সমাধী স্তরে পৌঁছায় তাই
যোগ- YOGA। শরীর, মন, বুদ্ধি ও অহংকার আত্মারই বিভূতি বা শক্তি। যোগ বুঝতে হলে
নিজের সংকীর্ন গন্ডি ছেড়ে সৃষ্টির মূলের দিকে তাকাতে হবে। যোগ মানে আদির সংগে
প্রান্তের যোগ, বৃহতের সংগে ক্ষুদ্রের যোগ, জীবাত্মার সংগে পরমাত্মার যোগ,
সৃষ্টির সংগে স্রষ্টার যোগ। ‘যোগসূত্র’ গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ের দ্বিতীয়
সূত্রে মহর্ষি পতঞ্জলি যোগের বর্ননা দিয়েছেন-‘চিত্তবৃত্তি নিরোধ’। চিত্ত এখানে
ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত। মন, বুদ্ধি ও অহংকার এই তিনের সামূহিক অর্থে এবং এই
তিনটিকে বিক্ষিপ্ত হওয়া থেকে অর্থাৎ বিপথগামী হওয়া থেকে নিবৃত্ত করাই যোগ।
যোগের অঙ্গ:
মহর্ষি পতঞ্জলির পাতঞ্জল যোগ দর্শনে অষ্টাঙ্গ যোগের যে ব্যাখা দিয়েছেন তা
শ্বাশ্বত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।
অষ্টাঙ্গ যোগের ৮টি অঙ্গ:
(১)যম (২)নিয়ম (৩)আসন (৪)প্রানায়াম (৫)প্রত্যাহার (৬)ধারনা (৭)ধ্যান (৮)সমাধি।
যোগশিক্ষার নিয়ম:
অষ্টাংগ যোগের দ্বিতীয় ধাপ নিয়ম। নিয়ম অর্থ নিয়মানুবর্তিতার দ্বারা আত্মশুদ্ধি।
আসলে নিয়ম হচ্ছে, ব্যক্তিগত আচরন বিধি। এর উপাদান ৫টি।
(ক) শৌচ: সর্ব প্রকার পরিচ্ছন্নতা রক্ষাই শৌচ। যোগীরা এই শৌচকে দু’ভাগে
ভাগ করেছেন। বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীক। বাহ্যিক শৌচে বলা হয়েছে, আমাদের বাহিরের
শরীর শুধু নয়, আমাদের পোশাক এবং ব্যবহারিক সব কিছুই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার
কথা। এমন কি যে পরিবেশে আমরা থাকি, তাকেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শরীর
গঠনের জন্য সাত্ত্বিক আহারের প্রয়োজন। মনের শোধন বা নির্মলতাই অভ্যন্তরিক শৌচ।
শৌচকে ঠিক মত উপলদ্ধি করতে পারলেই একাগ্রতা ও আত্মদর্শনের যোগ্যতা লাভ করা যায়।
ঈর্ষা, দ্বেষ, ঘৃনা, ক্রোধ, লালসা, লৌলুপতা, কামুকতা, অহংকার ইত্যাদি মন থেকে
দূর করতে না পারলে মন শূচি হয় না। শুচি মনে একাগ্রতা আসলে সাধনা জয় করা য়ায়।
(খ) সন্তোষ: সন্তোষ অর্থ সম্যক তৃপ্তি । চাহিদার সমুদ্রে নিজেকে হারিয়ে না ফেলে
আপন অবস্থাতে সন্তুষ্ট থকাই সন্তোষ। সর্ব প্রকার দ্বন্দ্ব থেকে মনকে স্থির
রাখাই সন্তোষ। সন্তোষ সুপ্রতিষ্ঠিত হলে প্রশান্তি লাভ করা যায়।
(গ) তপস্যা তপ: হচ্ছে কোন সংকল্পসিদ্ধির উদ্দ্যেশ্য কঠোর সাধনা। সর্ব প্রকার
সংযম অভ্যাস। উপবাস এবং অন্যান্য প্রকারে শরীর, মন এবং ইন্দ্রিয় সমূহকে শুদ্ধ
রাখাই তপস্যা। বাক সংযম দ্বারা তপস্যা সিদ্ধ হয়। তপস্যার দ্বারা শরীর ও
ইন্দ্রিয়ের এবং জড়তা দোষ দূর করতে পারলে সিদ্ধি প্রাপ্তি সম্ভব হয়।
(ঘ) স্বাধ্যায়: স্বাধ্যায় মানে নিজেকে জানা। স্ব-অর্থ স্বয়ং আর অধ্যায় অর্থ
অধ্যয়ন। স্বাধ্যায় থেকে যে সব মহান চিন্তার উদ্ভভ হয় তা তাঁর জীবনের ও সত্ত্বায়
অঙ্গীভূত হয়। তিনি উপলদ্ধি করেন এই নিখিল সৃষ্টি ভোগের জন্য নয়, ভক্তির জন্য।
যে শক্তি তাকে চালিত করছে সে শক্তি বিশ্ব ব্রম্মান্ড চালিত করছে।
(ঙ) স্রষ্টার প্রনিধান: প্রনিধান মানে অর্পন। সমস্ত কর্ম ও ইচ্ছা সৃষ্টিকর্তার
উপর অর্পন করার নাম স্রষ্টার প্রনিধান।
ষ্টির মূলতত্ত্ব ক্রম বিকাশ। ভাব থেবে বস্তু, অরূপ থেকে রূপ, এক থেকে বহুকে এনে
যখন স্রষ্টা জগৎ সৃষ্টি শুরু করে ছিলেন তখন থেকেই এই ক্রম বিকাশের গোপন
ক্রিয়া শুরু। মতভিন্নতায় ১৩৭০ কোটি বছর আগে সৌরজগত তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়।
৫০০ কোটি বছর আগে সৌরজগত তৈরি হয়। ৪৬০ কোটি বছর আগে পৃথিবী তৈরি হয়। যোগের
প্রশ্ন এসেছে অনেক পরে, ক্রমে ক্রমে। প্রথমে ছিল শুধু জড়বস্ত, তারপরে এল প্রান,
তাও ৫৭ কোটি বছর আগে। প্রানের পূর্নতা প্রাপ্তির পরে এল মন। মন হল অপূর্ব
চেতনাময় এক অদৃশ্য যন্ত্র। মনের বিশেষ কাজ ভাবের সঙ্গে বস্তুর মিলনের সেতু
স্বরুপ হওয়া।
মানসিক চাপ নয়ন্ত্রনে যোগ ব্যায়ামের ভূমিকাঃ
মানসিক জড়তা ও অবসন্ন ভাব কাটাতে সাহায্য করে যোগাসন। রাগ, চঞ্চলতার মতো মনের
বেশ কিছু অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব যোগাসনের মাধ্যমে।নিরোগ শরীর বজায়
রাখতে নিয়মিত যোগাসন করা প্রয়োজন। শরীর ও মন— দুয়ের উপরেই যোগের প্রভাব
অপরিসীম। যোগাসন মানসিক জড়তা ও অবসন্ন ভাব কাটাতে সাহায্য করে। যোগাসনের
মাধ্যমে রাগ, চঞ্চলতার মতো মনের বেশ কিছু অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যোগা
হল এক মাত্র প্রাকৃতিক উপায় যা শারীরিক গঠন ঠিক করে এবং গোটা শরীর জুড়ে কাজ
করে।দৈনন্দিন ভিত্তিতে যোগব্যায়াম অনুশীলন করলে অতিরিক্ত ক্যালোরি ঝরতে
সাহায্য করে৷
মানসিক ও শারীরিক চাপ কমিয়ে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়ার জন্যে যোগাসনের ভূমিকা
অনস্বীকার্য। যোগাসন নানারকম ভাবে আপনাকে উপকার প্রদান করতে পারে।
বিস্তারিতভাবে দেখে নেওয়া যাক:অভ্যন্তরীণ ভাবে স্বাস্থ্যের উপকারিতা প্রদান
করতে যোগাসনের ভূমিকা প্রবল। রক্ত সঞ্চালন থেকে শুরু করে শরীরের যেকোনো ব্যাথা
বা কষ্ট কমাতে যোগ ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। আপনি যদি নিয়ম করে ২ মাস যোগাসন
চর্চা করেন তাহলে অনায়সে শরীরে পরিবর্তন অনুভব করতে পারবেন।
শরীরের নানারকমের ব্যাথা কমানো ছাড়াও, মস্তিস্ক শান্ত করতে সাহায্য করে যোগাসন।
এর ফলে ধৈর্য্য ক্ষমতা বাড়ে ও মনের শান্তি বজায় থাকে। যোগাসনের মাধ্যমে শরীর
নতুন করে শক্তি সঞ্চারিত হয় যার ফলে সতেজতা ফিরে আসে। যোগাসনের মাধ্যমে
মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা হয় যার ফলে মেজাজ শান্ত থাকে। এর জন্যে আপনি চাপমুক্ত থাকতে
পারেন ও রাতে অনিদ্রার সমস্যা কেটে যায়।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।