পাঠ পরিকল্পনা গঠনের বিভিন্ন পর্যায়

Nil's Niva
0

 

প্রশ্নঃ২ পাঠ পরিকল্পনা গঠনের পর্যায়গুলি ব্যাখ্যা করো

                     পাঠ পরিকল্পনা হলো কোনো কোনো বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠ দেওয়ার পূর্বে পাঠটি সম্পর্কে লিখিত দলিল।শ্রেনীকক্ষে পাঠ উপস্থাপনের পূর্বে পাঠটিতে কী পদ্ধতি বা কৌশল ব্যবহার করা হবে, কোন ধরনের উপকরন ব্যবহার করা হবে এবং কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা।

                   শিক্ষা বিষয়ক ব্লগার ব্রি স্টফার (Bri Stauffer) Applied Education Systems ওয়েবসাইটে লিখেছেন যে, শিক্ষার্থীরা কী শিখবে, কীভাবে তা শেখানো হবে এবং কীভাবে শিখন মূল্যায়ন করা হবে সে সম্পর্কে শিক্ষকের দৈনন্দিন নির্দেশনা হলো পাঠ পরিকল্পনা।

                  পাঠ পরিকল্পনা (Lesson Plan) নিয়ে সর্বপ্রথম কথা বলেন হার্বার্ট স্পেনসার। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, পাঠ পরিকল্পনা একজন শিক্ষকের পাঠদানের দক্ষতা ও কৌশলজ্ঞান অনেকাংশে বাড়িয়ে দিতে পারে। কেউ কেউ আবার এটাও বলে থাকেন যে, পাঠ পরিকল্পনার সূচনা হয়েছে খৃস্টিয় দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শতকের মধ্যে কোনো সময়ে, তবে এর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

                পাঠ পরিকল্পনা গঠনের বিভিন্ন পর্যায়ঃ

 ফ্রেডরিক হার্বার্ট পাঠদানের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে পাঁচটি ধাপ অনুসরণ করার কথা বলেন যা বাঙালি শিক্ষাবিদ ও শিক্ষক-প্রশিক্ষকদের কাছে পাঠ পরিকল্পনার পঞ্চসোপান বা হার্বার্টের পঞ্চসোপান নামে পরিচিত। হার্বার্টের পঞ্চসোপান ইংরেজিতে ‘Herbert’s Five Steps of Lesson Plan’ নামে পরিচিত। ব্রিটানিকার তুলে ধরা তথ্য অনুসারে হার্বার্টের পঞ্চসোপানে যা আছে তা হলো-

১. প্রস্ততি (preparation)

নতুন কোনো কিছু শিক্ষাদানের আগে ওই বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয়েছে এমন অথবা শিক্ষার্থীরা জানে এমন কোনো কিছুর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের নাম হলো প্রস্ততি। প্রস্ততি পর্বের কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে পাঠের প্রতি আগ্রহী করার প্রচেষ্টা করা হয়।

২. উপস্থাপন (presentation)

প্রস্ততি পর্ব সাফল্যের সাথে শেষ করার পর পাঠের বিষয়বস্তু প্রকৃত অভিজ্ঞতার আলোকে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করা করতে হয়। উপস্থাপন যদি প্রকৃত অভিজ্ঞতার আলোকে না হয় তাহলে শিখন কার্যকর হয় না।

৩. সংযোগ (association)

হার্বার্টের শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় সংযোগ হলো শিক্ষার্থীদের পুর্ব ধারণার সাথে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপিত পাঠের সাথে সংযোগ ঘটিয়ে তুলনাকরণের মাধ্যমে মিল এবং অমিল বা পার্থক্যগুলো বিবেচনার মাধ্যমে নতুন ধারণার সৃষ্টি।

৪. সাধারণীকরণ (generalizing)

পাঠদানে সাধারণীকরণ হলো কোনো একক শিখন অভিজ্ঞতা, যা শ্রেণিকক্ষে শেখানো হয়েছে তা বাস্তবজীবনের একাধিক অভিজ্ঞতার সাথে এক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার প্রক্রিয়া।

৫. প্রয়োগ (application)

শিক্ষাদান বা জ্ঞানদান পর্যন্ত সীমাবদ্ধ না রেখে বরং শিখনকে শিক্ষার্থীদের জীবনে কার্যকরী করতে এর তাৎক্ষণিক প্রয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা প্রয়োজন। শিক্ষক যা কিছু শেখান, তা যদি তাৎক্ষনিকভাবে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে প্রয়োগ করাতে পারেন তাহলে ওই শিখন অপেক্ষাকৃতভাবে বেশি স্থায়ী হয়।

                বলা হয়ে থাকে হার্বার্টের পঞ্চসোপান আধুনিক পাঠ পরিকল্পনার কাঠামোর কাছে গুরুত্ব হারিয়েছে। কিন্তু সত্যি কথা হলো যখন কোনো শিক্ষক পাঠ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন বা কোনো শিক্ষক প্রশিক্ষক পাঠ পরিকল্পনা প্রণয়ন সম্পর্কে প্রশিক্ষণনার্থীদের উদ্দেশে লেকচার দেন, তখন এই পঞ্চসোপানকে এড়িয়ে যেতে পারেন না। আমার দেখা প্রত্যেকেই স্বীকার করেছেন, আধুনিক পাঠ পরিকল্পনা মূলত হার্বার্টের পাঠদান ধাপেরই সংক্ষিপ্ত রুপ। হার্বার্টের পঞ্চসোপানকে সংক্ষিপ্ত করার পেছনে জন ডিউইর বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মত দিয়েছেন শিক্ষাক্ষেত্রের বিভিন্ন পণ্ডিত।

আধুনিক পাঠ পরিকল্পনার ত্রিসোপান

ফ্রেডরিক হার্বার্টের পঞ্চসোপানকে সংক্ষিপ্ত করে তিনধাপ বিশিষ্ট পাঠ পরিকল্পনার নকশা প্রবর্তন করা হয় যা বর্তমানে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই আধুনিক পাঠ পরিকল্পনাকে ত্রিসোপানিক পাঠ পরিকিলপনা বলে।

আধুনিক পাঠ পরিকল্পনার এই তিনটি ধাপ হলো-

১. প্রস্ততি,

           ২. উপস্থাপন এবং

  ৩. মূল্যায়ন।

১. প্রস্ততি (preparation)

একজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে কীভাবে উত্তম পন্থায় শিক্ষার্থীদেরকে নির্ধারিত পাঠের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চান, পাঠের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষক কীভাবে শিক্ষার্থীদের সাথে সংযোগ স্থাপন করবেন, নতুন পাঠ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের কীভাবে উৎসাহী করে তুলবেন ইত্যাদি হলো পাঠ পরিকল্পনার প্রস্ততি অংশের অন্তর্ভুক্ত।

কুশল বিনিময়, পূর্বজ্ঞান যাচাই, মজার কৌতুক বলা, ধাঁধা ছুড়ে দেওয়া, ছোট্ট গল্প বলা, কার্টুন দেখানো ইত্যাদি প্রস্ততি পর্বের একেকটি কৌশল।

২. উপস্থাপন (presentation)

উপস্থাপন হলো শ্রেণিকক্ষে নির্ধারিত পাঠের বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তুলে ধরা এবং প্রয়োজনীয় আলোচনা ও বিভিন্ন পদ্ধতি/কৌশল অবলম্বন করে শিক্ষার্থিদেরকে শিখনফল অর্জনে সহায়তা করা।

 

বক্তৃতা, আলোচনা, ফোকাসড গ্রুপ ডিসকাশন, একক কাজ, জোড়ায় কাজ, দলীয় কাজ, ভূমিকাভিনয়, মাইন্ড ম্যাপিং ইত্যাদি পাঠ উপস্থাপনের একেকটি কৌশল হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

৩. মূল্যায়ন (assessment)

মূল্যায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত শিখনফল অর্জন করতে সক্ষম হলো কি না তা যাচাই করা হয়। মূল্যায়নকে প্রয়োগ বা অ্যাপলিকেশন বলা হয়ে থাকে কখনো কখনো।

জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore