প্রশ্নঃ রূপমূল বলতে কি বোঝ? রূপমূলের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা
করো।
v রূপমূলঃ
ভাষায় ব্যবহৃত অর্থপূর্ণ একক ধ্বনি
অথবা অর্থপূর্ণ ক্ষুদ্রতম ধ্বনিগুচ্ছকে রূপমূল বা রূপিম বলে। একটিমাত্র ধ্বনি যদি অর্থ
প্রকাশে সক্ষম হয়, তবে তা অবশ্যই ক্ষুদ্রতম হবে, ফলে রূপিমও হবে। যেমন: "এ আমার
ভাই।" এই বাক্যে 'এ' পদটি একটিমাত্র ধ্বনি নিয়েই গঠিত এবং অর্থপূর্ণ, তাই এটি
একটি রূপমূলের উদাহরণ। কিন্তু আগেই বলেছি এমন ধ্বনির সংখ্যা খুব কম। যে কোনো ভাষায়
যত রূপমূল দেখা যায়, তার অধিকাংশই একাধিক ধ্বনির সমষ্টি। উপরোক্ত উদাহরণে 'ভাই' শব্দটিও
একটি রূপমূল। কারণ এই শব্দটিকে ভাঙলে আর কোনো ক্ষুদ্রতম অর্থপূর্ণ একক পাওয়া যাচ্ছে
না। কিন্তু ওই উদাহরণে 'আমার' পদটিকে একটি রূপমূল বলা যাবে না। কারণ ওর মধ্যে দুটি
অংশ আছে, যথা: 'আমা’ (সর্বনাম) এবং 'র'(বিভক্তি)। অর্থাৎ দেখতে পাচ্ছি এখানে দুটি অর্থপূর্ণ
একক পাওয়া যাচ্ছে। তাই এই পদটি দুটি রূপমূলের সমষ্টি।
v রূপমূলের প্রধান শ্রেণীবিভাগঃ
১. মুক্ত রূপমূল/স্বচ্ছন্দ রূপমূলঃ যে রূপিমগুলি অন্য কোন ধ্বনিসমষ্টির সাথে যুক্ত না হয়েও
স্বাধীন ভাবে ব্যবহৃত হতে পারে বা যে রূপিমগুলির নিজস্ব অর্থ রয়েছে এবং ক্ষুদ্রতম অংশে
বিভাজ্য নয় যে রুপিমগুলি মুক্ত রূপিম। যেমন- হাতের লেখা। এখানে হাতের শব্দগুচ্ছে দুটি
রূপিম- 'হাত', 'এর'। 'হাত' হল মুক্ত রূপিম। তেমনি 'লেখা' হল মুক্তরূপিম কারন এগুলি
অন্য কোন ধ্বনিগুচ্ছের সাহায্য ছাড়াই ভাষায় ব্যবহৃত হতে পারে।
২. বদ্ধ রূপমূলঃ বদ্ধরূপিমের নিজস্ব অর্থ রয়েছে বটে কিন্তু ভাষায় এরা স্বতন্ত্রভাবে ব্যবহৃত
হতে পারে না। বরং এরা অন্য রূপিমের সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হয় এবং ভাষার অর্থ পরিবর্তন
ঘটায়। যেমন-হাতের লেখা। এখানে হাতের শব্দগুচ্ছে দুটি রূপিম- 'হাত', 'এর'। 'হাত' হল
মুক্ত রূপিম। কিন্তু 'এর' হল বদ্ধ রূপিম। কারন এগুলি অন্য কোন ধ্বনিগুচ্ছের সাহায্য
ছাড়াই ভাষায় ব্যবহৃত হতে পারে না।
৩. সহ রূপমূলঃ একাধিক রূপিম অনেক সময় সমান অর্থ প্রকাশ করে। তখন সেই রূপিমগুলিকে সহরূপিম
বলে। অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন রূপিম অর্থের দিক থেকে অভিন্ন হলে তাকে সহরূপিম বলে। যেমন-
গুলি, দের ইত্যাদি। এই দুটি রূপিম উচ্চারণগতভাবে আলাদা কিন্তু অর্থগত দিক থেকে সম।
কারণ দুটি রূপিম-ই বহুবচন বোধক।
৪. অনন্য রূপমূলঃ যে রূপিমগুলি সংশ্লিষ্ট ভাষায় বারবার ব্যবহৃত হয় না একবার মাত্র ব্যবহৃত হয়
এবং ব্যবহারের সময় অবশ্যই অন্য কোন রূপিমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হয় সেই রূপিমকে
অনোন্য রূপিম বলে। যেমন- মগডাল, মলমাস, এখানে 'মগ', বা 'মল' রূপিমগুলি নির্দিষ্ট রূপের
আগে ব্যবহৃত হতে দেখা যায় তাই মগ, মল হল অনন্যরূপিম।
৫. সমধ্বনি রূপমূলঃ কিছু কিছু রূপিম রয়েছে যেগুলি উচ্চারণগত দিক থেকে অভিন্ন কিন্তু অর্থগত দিক
থেকে ভিন্ন, এই রূপিমগুলিকে সমধ্বনি রূপিম বলে।
আমি তাকে
'চিনি'।
আমি চায়ে
'চিনি' খাই।
'চিনি' রূপিমটি উচ্চারণগত ভাবে অভিন্ন
হয়ে দু জায়গায় দুটি আলাদা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথমটির অর্থ 'পরিচিত' এবং দ্বিতীয়টির
অর্থ 'শর্করা'।
৬. শূন্যরূপমূলঃ যে রূপমূলগুলির শারীরিক অস্তিত্ব নেই অর্থাৎ চোখে দেখা না গেলেও তার অস্তিত্ব
অনুভব করা যায়, সে রূপমূলগুলিকে শূন্যরূপমূল বলে। যেমন- শূন্যবিভক্ত।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

