প্রশ্নঃপশ্চিমবঙ্গে পর্যটন শিল্পের উন্নতিতে WBTDC-এর অবদানগুলি সবিস্তারে উল্লেখ কর।

Nil's Niva
0

প্রশ্নঃ পশ্চিমবঙ্গে পর্যটন শিল্পের উন্নতিতে WBTDC-এর অবদানগুলি সবিস্তারে উল্লেখ কর।   

পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন শিল্পের সামগ্রিক মানোন্নয়ন এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম (West Bengal Tourism Development Corporation - WBTDC) একটি নোডাল এজেন্সি (Nodal Agency) বা কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে কাজ করে। ১৯৭৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন বিভাগের অধীনে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রধান লক্ষ্য হলো রাজ্যের পর্যটন আকর্ষণগুলিকে উন্নত করা, প্রচার করা এবং পর্যটকদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।

v পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন শিল্পের উন্নতিতে WBTDC-এর অবদানঃ

১. পরিকাঠামো উন্নয়ন ও আবাসন ব্যবস্থার প্রসারঃ পর্যটকদের জন্য নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত আবাসন ব্যবস্থার অভাব পূরণে WBTDC অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। তারা রাজ্য জুড়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রে নিজস্ব পর্যটন সম্পত্তি তৈরি ও পরিচালনা করে। দিঘা, বকখালি, শান্তিনিকেতন, দার্জিলিং, কালিম্পং, এবং ডুয়ার্সের মতো প্রায় ৩৮টিরও বেশি স্থানে তাদের লজ বা রিসর্ট রয়েছে, যা বেসরকারি আবাসন ব্যবস্থার পাশাপাশি একটি স্থিতিশীল বিকল্প প্রদান করে।

২. সংগঠিত প্যাকেজ ট্যুর ও সার্কিট ট্যুরিজমঃ পর্যটকদের ভ্রমণ সহজ এবং ঝামেলামুক্ত করার জন্য WBTDC বিভিন্ন আকর্ষণীয় প্যাকেজ ট্যুর চালু করেছে। তারা রাজ্যের বৈচিত্র্যকে কাজে লাগিয়ে থিম-ভিত্তিক ট্যুর সার্কিট তৈরি করেছে, যেমন—হিমালয়ান সার্কিট, ওয়াইল্ডলাইফ সার্কিট, হেরিটেজ সার্কিট এবং রিভারিন সার্কিট। এই প্যাকেজগুলো বিশেষত নতুন পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ পরিকল্পনাকে সহজ করে তোলে।

৩. নতুন গন্তব্যের আবিষ্কার ও উন্নয়নঃ WBTDC শুধুমাত্র পরিচিত পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে মনোনিবেশ না করে, বরং রাজ্যের অপ্রচলিত ও কম-আলোচিত এলাকাগুলিকেও পর্যটন মানচিত্রে নিয়ে আসছে। এর মধ্যে ইকো-ট্যুরিজম গন্তব্যগুলি প্রধান। গজলডোবায় তিস্তা সুন্দরী পর্যটন সম্পত্তি বা সুন্দরবনের পরিবেশ-বান্ধব ট্যুরিজম বিকাশে তাদের উদ্যোগ রাজ্যের পর্যটন বৈচিত্র্য বাড়িয়েছে।

৪. সাংস্কৃতিক ও উৎসব পর্যটনের প্রচারঃ পশ্চিমবঙ্গের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং উৎসবকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে WBTDC সক্রিয় ভূমিকা নেয়। বিশেষত দুর্গাপূজার সময় আয়োজিত পূজা পরিক্রমা ট্যুর এর মাধ্যমে তারা কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ঐতিহ্যবাহী ঠাকুরদালানগুলিতে পর্যটকদের নিয়ে যায়। এটি রাজ্যের প্রধান উৎসবকে আন্তর্জাতিক পর্যটন পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছে।

৫. প্রচার ও বিপণন কৌশলঃ রাজ্যের পর্যটন আকর্ষণগুলি প্রচারের জন্য WBTDC একটি কার্যকর বিপণন কৌশল অবলম্বন করে। তারা দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন পর্যটন মেলা এবং প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে "Experience Bengal" ব্র্যান্ডকে জনপ্রিয় করে তুলেছে, যার ফলে রাজ্যের পর্যটন আকর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

৬. স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদানঃ WBTDC-এর পর্যটন সম্পত্তিগুলির বেশিরভাগ কর্মী স্থানীয় হওয়ায় এবং তারা স্থানীয় সরবরাহকারীদের থেকে পণ্য ও পরিষেবা নেওয়ায়, এটি সরাসরি স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ট্যুরিস্ট লজগুলো ওই এলাকায় ছোট ব্যবসা ও হস্তশিল্পকে উৎসাহ দেয়, যা আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বৈষম্য কমাতে সাহায্য করে।

৭. উন্নত পরিবহন ও যোগাযোগঃ পর্যটকদের সুবিধার জন্য WBTDC নিজস্ব পরিবহন পরিষেবা পরিচালনা করে। এর মাধ্যমে রাজ্যের প্রধান শহর এবং পর্যটন গন্তব্যগুলির মধ্যে বাস ও অন্যান্য যানবাহন পরিষেবা প্রদান করা হয়। এটি প্রত্যন্ত এলাকার সঙ্গে পর্যটন কেন্দ্রগুলির যোগাযোগ উন্নত করে এবং পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে।

৮. সরকারি নীতি বাস্তবায়ন ও সহায়ক সংস্থাঃ পর্যটন বিভাগ কর্তৃক প্রণীত নীতিগুলি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করার প্রধান দায়িত্ব WBTDC পালন করে। নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকারের দেওয়া উৎসাহ ভাতা এবং বিভিন্ন সুবিধাগুলি সঠিক উপায়ে তাদের কাছে পৌঁছে দিতে WBTDC সহায়তা করে, যা সামগ্রিকভাবে রাজ্যের পর্যটন শিল্পকে আরও স্থিতিশীল ও আকর্ষণীয় করে তোলে।


জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore