Q: Define Unemployment and explain its
various types. Analyze the deep rooted causes and consequences of unemployment
in India.
প্রশ্নঃ বেকারত্বের সংজ্ঞা দাও এবং এর বিভিন্ন প্রকার ব্যাখ্যা
করো। ভারতে বেকারত্বের কারণ এবং পরিণতি বিশ্লেষণ করো।
বর্তমান সমাজ ও অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে
বেকারত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুমাত্রিক সমস্যা। সাধারণভাবে, বেকারত্ব বলতে এমন
একটি পরিস্থিতিকে বোঝায় যখন কোনো ব্যক্তি কাজ করার সক্ষমতা রাখে, প্রচলিত মজুরির হারে
কাজ করতে ইচ্ছুক থাকে এবং সক্রিয়ভাবে কাজের সন্ধান করে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সে কোনো
আয়-সৃষ্টিকারী কর্মসংস্থান খুঁজে পায় না। এই সংজ্ঞায় মূলত কর্মক্ষম এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে
কর্মহীনদেরকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যারা স্বেচ্ছায় কাজ করতে চায় না অথবা যারা পঙ্গু
বা অক্ষম, তাদের কর্মহীনতাকে বেকারত্ব হিসেবে গণ্য করা হয় না। তবে, সমাজতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ
থেকে, বেকারত্ব হলো একটি সামাজিক ব্যাধি বা কাঠামোগত সমস্যা, যা অর্থনৈতিক সংকটের ফলস্বরূপ
তৈরি হয় এবং এর ফলে ব্যক্তি সামাজিক মর্যাদা হারায়, মানসিক হতাশায় ভোগে এবং সমাজে
অপরাধ বা অন্যান্য সামাজিক সমস্যার জন্ম দিতে পারে। বেকারত্ব একটি দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক
উন্নয়নে চরম বাধা সৃষ্টি করে।
বেকারত্বের শ্রেণিবিভাগঃ
১. মরশুমি বেকারত্বঃ মরশুমি বেকারত্ব হলো এমন এক ধরনের কর্মহীনতা যা বছরে
একটি নির্দিষ্ট ঋতু বা মরশুমের কাজের প্রাপ্যতার ওপর নির্ভর করে। যেসব শিল্প বা কাজ
মূলত ঋতুভিত্তিক, সেগুলিতে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে কর্মীদের ব্যাপক চাহিদা থাকে,
কিন্তু বাকি সময়ে তারা কর্মহীন হয়ে পড়ে। এই ধরনের বেকারত্ব সাধারণত কৃষি, পর্যটন
শিল্প, চিনি কারখানা, বরফ বা আইসক্রিম তৈরির কারখানা এবং নির্মাণ ক্ষেত্রের মতো শিল্পগুলিতে
দেখা যায়।
২. বাণিজ্যচক্রজনিত বেকারত্বঃ বাণিজ্যচক্রজনিত বেকারত্ব হলো অর্থনীতির সামগ্রিক ওঠানামার
কারণে সৃষ্ট বেকারত্ব। যখন অর্থনীতিতে মন্দা বা অবনতি দেখা দেয়, তখন এই ধরনের বেকারত্ব
বৃদ্ধি পায়। পুঁজিবাদী অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বাণিজ্য চক্র। এই চক্রের মন্দা
বা নিম্নগতির সময়ে সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস পায়। ফলে, উৎপাদকরা উৎপাদন কমিয়ে দেয়,
নতুন বিনিয়োগ স্থগিত রাখে এবং ফলস্বরূপ কর্মীদের ছাঁটাই করে বা নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখে।
এই বেকারত্ব হলো অনিচ্ছাকৃত বেকারত্বের একটি প্রধান রূপ। যখন অর্থনীতি আবার পুনরুদ্ধার
বা সমৃদ্ধির পথে ফেরে, তখন উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়,
ফলে এই বেকারত্ব হ্রাস পায়।
৩. সংঘাতজনিত বেকারত্বঃ সংঘাতজনিত বেকারত্ব হলো অস্থায়ী প্রকৃতির বেকারত্ব,
যা সাধারণত এক চাকরি ছেড়ে অন্য চাকরিতে যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে অথবা নতুন করে শ্রমবাজারে
প্রবেশের পর কাজ খোঁজার সময়কালে সৃষ্টি হয়। এই বেকারত্বকে অনেক সময় সন্ধানজনিত বেকারত্বও
বলা হয়। এটি অর্থনীতির একটি স্বাভাবিক অংশ এবং সাধারণত এর মেয়াদ স্বল্প হয়। উদাহরণস্বরূপ,
একজন সদ্য স্নাতক যখন প্রথম চাকরি খুঁজছেন, অথবা একজন অভিজ্ঞ কর্মী যখন আরও ভালো সুযোগের
সন্ধানে বর্তমান কাজ ছেড়ে দিয়েছেন এবং নতুন চাকরির জন্য অপেক্ষা করছেন, তখন এই বেকারত্ব
দেখা দেয়।
৪. কাঠামোগত বা প্রযুক্তিগত বেকারত্বঃ কাঠামোগত বেকারত্ব হলো দীর্ঘমেয়াদী বেকারত্ব, যা অর্থনীতি
বা শিল্পের কাঠামোগত পরিবর্তনের কারণে ঘটে। কর্মীদের বিদ্যমান দক্ষতা এবং শ্রমবাজারে
উপলব্ধ চাকরির প্রয়োজনীয় দক্ষতার মধ্যে যখন অসামঞ্জস্য সৃষ্টি হয়, তখন এই বেকারত্ব
দেখা দেয়। প্রযুক্তিগত বেকারত্ব কাঠামোগত বেকারত্বেরই একটি উপশাখা, যা নতুন প্রযুক্তির
ব্যবহারের কারণে সৃষ্টি হয়।
৫. প্রচ্ছন্ন বেকারত্বঃ প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব
বলতে এমন একটি পরিস্থিতিকে বোঝায়, যেখানে আপাতদৃষ্টিতে কর্মে নিযুক্ত বলে মনে হলেও,
প্রকৃতপক্ষে সেই কাজ থেকে তাদের সরিয়ে নিলেও মোট উৎপাদনে কোনো পরিবর্তন আসে না। অর্থাৎ,
প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সংখ্যক শ্রমিক একই কাজে নিয়োজিত থাকে।
ভারতে বেকারত্বের মূল কারণসমূহঃ ভারতে বেকারত্বের প্রধান কারণগুলি
বহুমুখী, যার মধ্যে অর্থনৈতিক, জনসংখ্যাগত এবং শিক্ষাগত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত:
১. দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধিঃ ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যা শ্রমশক্তির ক্রমাগত সরবরাহ
বাড়াচ্ছে। কিন্তু এই বিশাল সংখ্যক শ্রমিকের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরি করা দেশের
অর্থনীতির পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। চাকরির তুলনায় চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায়
বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২. ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থাঃ ভারতের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা মূলত তাত্ত্বিক জ্ঞাননির্ভর
এবং এটি শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা-ভিত্তিক নয়। এর ফলে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ
যুবক ডিগ্রি নিয়ে বের হলেও, তাদের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক বা প্রযুক্তিগত দক্ষতার
অভাব থাকে, যা কাঠামোগত বেকারত্ব সৃষ্টি করে।
৩. কৃষি অর্থনীতির সমস্যাঃ ভারতের অর্থনীতির একটি বড় অংশ এখনো কৃষিনির্ভর। কিন্তু
কৃষি খাতে প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। তাছাড়া, কৃষিতে উন্নতির ধীর গতি
এবং মরশুমি কাজের কারণে বিশাল সংখ্যক শ্রমিক বছরের একটি বড় সময় বেকার থাকে।
৪. শিল্পের ধীর বৃদ্ধিঃ শিল্পক্ষেত্র, বিশেষত উৎপাদন ক্ষেত্র কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে
প্রত্যাশিত গতিতে এগোতে পারেনি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (MSME)-এর বিকাশে বাধা, পুঁজির
অভাব এবং পরিকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে এই ক্ষেত্রে বিশাল সংখ্যক বেকারদের চাকরি দিতে
ব্যর্থ হচ্ছে।
৫. পরিকাঠামোগত দুর্বলতাঃ পরিবহন, বিদ্যুৎ, এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো মৌলিক পরিকাঠামোর
দুর্বলতা শিল্প ও ব্যবসার বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে, যা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে
ব্যাহত করে।
বেকারত্বের পরিণতিঃ ভারতে বেকারত্বের পরিণতিগুলি কেবল
ব্যক্তিগত নয়, বরং তা সমাজের সামগ্রিক কাঠামো ও অর্থনীতির ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে।
১. অর্থনৈতিক পরিণতিঃ বেকারত্বের কারণে মানবসম্পদ অব্যবহৃত থেকে যায়, যা দেশের
মোট উৎপাদন (GDP) এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে হ্রাস করে। এটি দেশের সম্পদের অপচয়। কর্মক্ষম
ব্যক্তিরা কাজ না পাওয়ায় দেশের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা কমতে থাকে। কর্মসংস্থানের অভাবে
ব্যক্তি ও পরিবারের আয় কমে যায়, যা দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
২. সামাজিক পরিণতিঃ দীর্ঘমেয়াদী বেকারত্ব যুবক-যুবতীদের মধ্যে তীব্র হতাশা, মানসিক চাপ এবং আত্মমর্যাদার
অভাব সৃষ্টি করে। কর্মহীনতার কারণে অনেকে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের দিকে ঝুঁকে পড়ে,
ফলে সমাজে চুরি, ডাকাতি এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পায়।
৩. রাজনৈতিক পরিণতিঃ ব্যাপক বেকারত্ব সরকারের উপর জনগণের আস্থা হ্রাস করে
এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিক্ষোভ ও সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে। সরকারের নীতি ও পরিকল্পনার
বিরুদ্ধে জন অসন্তোষ বাড়তে থাকে।
উপসংহারে বলা যায়, ভারতে বেকারত্ব একটি
জটিল সমস্যা যা জনসংখ্যার চাপ, কাঠামোগত দুর্বলতা এবং শিক্ষাগত অসামঞ্জস্যের ফল। এই
সমস্যার সমাধান করতে হলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা-ভিত্তিক শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শ্রমশক্তির গুণগত মান বৃদ্ধি এবং শিল্প ও পরিকাঠামো খাতে ব্যাপক
সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা অপরিহার্য।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।