জনসংখ্যা অধ্যায়ন কি?জনসংখ্যা অধ্যায়ন গুরুত্ব আলোচনা করো ।

Nil's Niva
0

প্রশ্নঃ জনসংখ্যা অধ্যায়ন কি?জনসংখ্যা অধ্যায়ন গুরুত্ব আলোচনা করো ।

§  জনসংখ্যা অধ্যয়ন:

জনসংখ্যা অধ্যয়ন বা জনসংখ্যাতত্ত্ব (Demography) হলো মানব জনসংখ্যার বৈজ্ঞানিক ও পরিসংখ্যানগত অধ্যয়ন। এটি একটি আন্তঃবিষয়ক ক্ষেত্র যা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতির (যেমন: আদমশুমারি, নিবন্ধন পদ্ধতি, স্যাম্পলিং) মাধ্যমে প্রাপ্ত ডেটা বিশ্লেষণ করে জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ, প্রবণতা এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা দেয়।

সহজ কথায়, জনসংখ্যা অধ্যয়ন হলো কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের মানুষের সংখ্যা, তাদের বন্টন, ঘনত্ব, গঠন, এবং সময়ের সাথে সাথে এই বৈশিষ্ট্যগুলোর পরিবর্তন নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ। এটি জন্মহার, মৃত্যুহার, অভিবাসন, বয়স, লিঙ্গ, জাতি, আয়, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, বৈবাহিক অবস্থা ইত্যাদি বিভিন্ন উপাদানের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়।

§  জনসংখ্যা অধ্যয়নের গুরুত্ব:

জনসংখ্যা অধ্যয়ন শুধুমাত্র পরিসংখ্যানগত তথ্য সংগ্রহ করে না, বরং এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে নীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। এর গুরুত্বগুলি নিচে আলোচনা করা হলো:

§  ১. সম্পদ বন্টন ও পরিকল্পনা প্রণয়ন

জনসংখ্যা অধ্যয়নের মাধ্যমে একটি দেশের মোট জনশক্তি এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবার মোট পরিমাণ অনুমান করা যায়। এই তথ্যগুলি সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর উপর ভিত্তি করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন, খাদ্য সরবরাহ এবং অন্যান্য মৌলিক পরিষেবাগুলির জন্য সঠিক বাজেট ও পরিকল্পনা তৈরি করা সম্ভব হয়। যেমন: যদি কোনো দেশে শিশুদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তাহলে শিশু শিক্ষার খাতে আরও বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।

§  ২. অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি:

জনসংখ্যার বয়স কাঠামো, কর্মক্ষম জনসংখ্যা এবং নির্ভরশীল জনসংখ্যার অনুপাত একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরাসরি প্রভাব ফেলে। জনসংখ্যা অধ্যয়নের মাধ্যমে এই প্রবণতাগুলি বোঝা যায়, যা দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক কৌশল নির্ধারণে সাহায্য করে। যদি একটি দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যা বেশি হয়, তাহলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত হতে পারে, যা 'জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ' নামে পরিচিত।

§  ৩. সামাজিক নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়ন:

জনসংখ্যা অধ্যয়ন সামাজিক পরিবর্তনের ধারাগুলি চিহ্নিত করতে সাহায্য করে, যেমন: পরিবারের আকার পরিবর্তন, নগরায়নের প্রবণতা, লিঙ্গ অনুপাত এবং জাতিগত বিভাজন। এই তথ্যগুলির সাহায্যে সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচি, যেমন - পরিবার পরিকল্পনা, প্রবীণদের জন্য পেনশন, নারী ক্ষমতায়ন ইত্যাদি সঠিকভাবে ডিজাইন ও বাস্তবায়ন করা যায়।

§  ৪. স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনা:

একটি অঞ্চলের জনসংখ্যার বয়স কাঠামো, রোগাক্রান্তের হার, জন্ম ও মৃত্যুর হার ইত্যাদি তথ্য স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনসংখ্যা অধ্যয়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো, হাসপাতালের সংখ্যা, ডাক্তার ও নার্সের প্রয়োজনীয়তা এবং বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করা যায়।

§  ৫. পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন:

জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং ঘনত্বের সাথে পরিবেশের উপর এর প্রভাব নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। জনসংখ্যা অধ্যয়নের মাধ্যমে বোঝা যায় যে অতিরিক্ত জনসংখ্যা কীভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে (যেমন: জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড়, জলবায়ু দূষণ)। এর ফলে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য কার্যকর নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করা সম্ভব হয়।

§  ৬. কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শ্রমবাজার বিশ্লেষণ:

জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং বয়স কাঠামো শ্রমবাজারকে প্রভাবিত করে। জনসংখ্যা অধ্যয়ন একটি দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার আকার, দক্ষতা এবং ভবিষ্যৎ চাহিদার পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করে। এটি সরকার ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শ্রমিকদের দক্ষতার উন্নয়নে সঠিক পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে।

§  ৭. শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকল্পনা

শিক্ষার চাহিদা সরাসরি জনসংখ্যার বয়স কাঠামোর উপর নির্ভরশীল। জনসংখ্যা অধ্যয়নের মাধ্যমে বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা, শিক্ষক নিয়োগ, পাঠ্যক্রম উন্নয়ন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির হার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

§  ৮. অভিবাসন ও এর প্রভাব বোঝা:

অভিবাসন (Migration) জনসংখ্যা পরিবর্তনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জনসংখ্যা অধ্যয়ন দেশের ভেতরে বা বাইরে মানুষের গতিবিধি, এর কারণ এবং ফলাফল বিশ্লেষণ করে। এটি অভিবাসন নীতি প্রণয়ন এবং অভিবাসীদের সমাজে একীভূত করার কৌশল নির্ধারণে সহায়তা করে।

জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore