হর্ষের সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ও তার প্রশাসনিক ব্যবস্থা আলোচনা করো।

Nil's Niva
0

প্রশ্ন- হর্ষের সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ও তার প্রশাসনিক ব্যবস্থা আলোচনা করো। 

উত্তর-  গুপ্ত সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তূপের ওপর উত্তর ভারতে যে আঞ্চলিক শক্তিগুলির উত্থান ঘটে, তার মধ্যে থানেশ্বরের পুষ্যভূতি বংশ ছিল অন্যতম। বাণভট্ট বলেছেন, পূর্ব পাঞ্জাবের থানেশ্বর অঞ্চলে পুষ্যভূতি নামে এক ব্যক্তি পুষ্যভূতি বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। এই বংশের নামের শেষে 'বর্ধন' শব্দটি যুক্ত ছিল। রাজকীয় শিলমোহর ও লেখমালাগুলিতে এই বংশের যে কয়েকজন রাজার নাম বংশপরম্পরায় পাওয়া গেছে, তাঁরা হলেন-মহারাজা নরবর্ধন, মহারাজা রাজ্যবর্ধন, মহারাজা আদিত্যবর্ধন, পরমভট্টারক, মহারাজাধিরাজ, প্রভাকরবর্ধন। বাণভট্ট অবশ্য প্রভাকরবর্ধনের সময় থেকেই তার বিবরণ শুরু করেছেন। বাণভট্টের মতে, প্রভাকরবর্ধনের তিন পুত্র ছিল-রাজ্যবর্ধন, হর্ষবর্ধন ও কৃষ্ণ এবং রাজ্যশ্রী ছিলেন তাঁর একমাত্র কন্যা। এই বংশের প্রথম তিন রাজার সম্বন্ধে তেমন কিছু জানা যায় না এবং তাঁদের মহারাজা উপাধি থেকে অনুমিত হয়, তাঁরা গুপ্তদের অধীনে সামন্ত নৃপতি ছিলেন। 

              বর্ধন বংশের চতুর্থ রাজা প্রভাকরবর্ধনের সময় থেকে বর্ধন বংশর অগ্রগতির সূচনা হয়। ড. বৈজ্যনাথ শর্মা বলেছেন, প্রভাকরবর্ধন হলেন পুষ্যভূতি বংশের প্রথম শাসক, যিনি পূর্ণ স্বাধীন মর্যাদায় পুষ্যভূতি বংশের শাসন কৃতিত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এবং হর্ষবর্ধনের জন্য এক বিশাল রাজ্য দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন। বাণভট্টের 'হর্ষচরিত' অনুযায়ী প্রভাকরবর্ধন হুনদের বিরুদ্ধে ও সিন্ধু, গুর্জর, লাট ও মালবদের বিরুদ্ধে সাফল্য অর্জন করেছিলেন। অবশ্য বাণের এই বক্তব্য অতিরঞ্জিত বলে মনে হয়। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন, প্রভাকরবর্ধন বাণভট্ট উল্লিখিত সমস্ত রাজ্যে, বিশেষত সিন্ধু ও লাটের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পাঠিয়েছিলেন তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি কন্যা রাজ্যশ্রীর সঙ্গে মৌখরীরাজ গ্রহবর্মনের বিবাহ দেন। 605 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ হুনদের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় তাঁর মৃত্যু হয়। প্রভাকরবর্ধনের পর তার পুত্র রাজ্যবর্ধন সিংহাসনে বসেন। তিনি ভগ্নিপতি গ্রহবর্মনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ও ভগ্নি রাজ্যশ্রীকে উদ্ধারের লক্ষ্যে মালবরাজ দেবগুপ্তের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। তিনি দেবগুপ্তকে পরাজিত করলেও দেবগুপ্তের মিত্র গৌড়রাজ শশাঙ্কের হাতে নিহত হন।

  • হর্ষবর্ধনের শাসনব্যবস্থা: 

              রাজা হর্ষবর্ধন ছিলেন তাঁর প্রশাসনের ভরকেন্দ্র। হিউয়েন সাঙের বিবরণ অনুযায়ী প্রশাসনিক কাজকর্মে হর্ষবর্ধন অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। তাঁর শাসনব্যবস্থাকে প্রজাহিতৈষী স্বৈরাচার বলা যায়। একটি সুগঠিত মন্ত্রীপরিষদ শাসনকার্যে রাজাকে সাহায্য করতেন। রাজধানীতে একটি সচিবালয় থাকত। বাণভট্ট বলেছেন, বিদেশ বা যুদ্ধমন্ত্রী হলেন অগন্তী, প্রধান সেনাপতি সিংহনন্দ, অশ্বারোহী বাহিনীর প্রধান কুন্তল এবং হস্তিবাহিনীর প্রধান হলেন স্কন্দগুপ্ত। মধুবন তাম্রপত্রে স্কন্দগুপ্তকে 'মহাপরমতর মহাসামন্ত' এবং ঈশ্বরগুপ্তকে 'নথী সংরক্ষণকারী' বলা হয়েছে। এ ছাড়া কুমারমাত্র, উপরিক, বিষয়পতি প্রমুখ কর্মচারীর উল্লেখ রয়েছে।

              ভূমিদান সংক্রান্ত লেখ থেকে জানা যায়, বহুক্ষেত্রেই কর্মচারীদের বেতনের পরিবর্তে জমিদান করা হত। শাসনকার্যের সুবিধার্থে হর্ষ তার সাম্রাজ্যকে কয়েকটি ভুক্তি বা প্রদেশে বিভক্ত করেন। ভক্তিগুলিকে বিষয় বা জেলাগুলিকে কতকগুলো গ্রামে ভাগ করা হয়। হর্ষবর্ধনের মধুবন ও বাঁশঘেরা তাম্রপট্টে অহিচ্ছত্র ভুক্তির উল্লেখ আছে। প্রাদেশিক শাসনকর্তার উপাধি ছিল 'লোকপাল'। গ্রামের শাসনভার গ্রামিকের ওপর ন্যস্ত ছিল। গ্রামিক 'অক্ষপটলিক' নামেও অভিহিত হতেন। পদাতিক হস্তী ও অশ্বারোহী নিয়ে তাঁর বাহিনী গঠিত হয়েছিল। 

              হর্ষের শাসনব্যবস্থায় তিন ধরনের করের উল্লেখ পাওয়া যায়-ভাগ, হিরণ্য ও বলি। ভাগ হল শস্যে প্রদত্ত ভূমিরাজস্ব। হিরণ্য হল কৃষক ও বণিকদের দেওয়া নগদ কর। বলি কী ধরনের রাজস্ব ছিল তা বলা কঠিন। কৃষি উৎপাদনে রাজা  1/6  অংশ পেতেন। হিউয়েন-সাঙ বলেছেন হর্ষবর্ধনের সময় অপরাধীর সংখ্যা যেমন কম ছিল তেমনি শাস্তিও কঠোর ছিল না। বিচারবিভাগের সঙ্গে যুক্ত কর্মচারীরা 'প্রমতার' নামে পরিচিত। দস্যুদের ধরার কাজে যুক্ত ছিলেন দুঃসাধ্যসাধনিক। হর্ষবর্ধন ছিলেন দানশীল। প্রতি 5 বছর অন্তর প্রয়াগের মেলায় তিনি প্রভূত অর্থ এমনকি নিজের পরণের মূল্যবান বস্ত্রও দান করতেন। হর্ষবর্ধনের শাসনব্যবস্থা ছিল সামন্ততান্ত্রিক ও বিকেন্দ্রীভূত। অত্যধিক ভূমিদান সামন্ততান্ত্রিক প্রবণতাকে বৃদ্ধি করেছিল। এই শাসনব্যবস্থাকে একটি উদারতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র বলা যেতে পারে। এই শাসনব্যবস্থার সাফল্য হর্ষের ব্যক্তিত্ব ও যোগ্যতার ওপরেই বেশিরভাগ নির্ভরশীল ছিল। হিউয়েন-সাঙ হর্ষবর্ধনের শাসনব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।



জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore