প্রশ্ন: বিস্মৃতির কারণগুলি আলোচনা করুন।
*****************************************
- বিস্মরণ বা বিস্মৃতির কারণ:
স্মৃতির অভাবই বিস্মরণ বা বিস্মৃতি। অধীত বিষয় যখন প্রয়োজনের সময় চেষ্টা সত্ত্বেও আমরা মনে করতে পারি না, আমরা বলি ভুলে গেছি অর্থাৎ বিস্মরণ হয়েছে। ভুলে যাওয়া নানা রকমের হতে পারে। শিশু বয়সের অনেক অভিজ্ঞতা আমরা মনে করতে পারি না। পরীক্ষার সময় কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা সত্ত্বেও মনে করতে পারি না। আবার কিছুক্ষণ পরেই হয়তো মনে পড়ে যায়। এ সবই হল বিস্মৃতি। স্মৃতির যে 4টি পর্যায়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার ভিত্তিতেও বিস্মৃতিকে ব্যাখ্যা করা যায়। স্মৃতির দ্বিতীয় পর্যায় অর্থাৎ সংরক্ষণের অভাবে আমরা ভুলে যাই। আবার সংরক্ষণ সত্ত্বেও যদি সময়মতো পুনরুদ্রেক বা প্রত্যভিজ্ঞার অভাব ঘটে তাকেও বিস্মৃতি বলা হয়।
বিস্মৃতির একাধিক কারণ আছে যার মতে পরীক্ষিত কয়েকটি কারণের উল্লেখ করা হল-
1. অন্তরায়: স্মৃতির পথে বাধাকেই অন্তরায় বলা হয়। কোনো কিছু মুখস্থ করার পর যদি অন্য কিছু মুখস্থ করার চেষ্টা করা হয় তাহলে প্রথমোক্ত বিষয়টির অংশবিশেষ ভুলে যাবার সম্ভাবনা দেখা দেয়। একে পশ্চাৎমুখী প্রতিরোধ বলা হয়। এর বিপরীত ঘটনায় দেখা যায়- প্রথম শিখনটি এত দৃঢ়ভাবে সংরক্ষিত হয় যে, দ্বিতীয় শিখন সংরক্ষণ সম্ভব হয় না। একে বলা হয় সম্মুখবর্তী অন্তরায়।
মুলার এবং পিলজেকার পরীক্ষা করে দেখান- যদি দুটি শিখনের মধ্যবর্তী সময় কিছু না করে, চুপচাপ অতিবাহিত করা হয় তাহলে পুনরুদ্রেকের পরিমাণ হয় 56%, আর যদি মধ্যবর্তী সময় কিছু কাজ করা হয় সেক্ষেত্রে পুনরুদ্রেকের পরিমাণ হয় 26%।
পশ্চাৎমুখী অন্তরায়ের পরিমাণ নির্ভর করে প্রথম ও দ্বিতীয় শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুর প্রকৃতির উপর। শিক্ষণীয় বিষয় দুটি যদি সমজাতীয় হয় তাহলে পশ্চাৎমুখী অন্তরায়ের পরিমাণ বেশি হয়। ইতিহাস বিষয় শেখার পর পুনরায় যদি ইতিহাস বিষয় শেখা হয় তাহলে পশ্চাৎমুখী অন্তরায়ের পরিমাণ অধিক হবে। আবার দুটি বিষয় যদি পৃথক হয় তাহলে পশ্চাৎমুখী অন্তরায়ের পরিমাণ কম হবে, যেমন-ইতিহাস শেখার পর যদি বিজ্ঞান পড়া হয়। শিখনীয় বিষয় দুটি যদি বিভিন্ন সংবেদনের মাধ্যমে শেখা হয় তাহলে পশ্চাৎমুখী অন্তরায় কম হয়। যেমন একটি বিষয় বই দেখে পড়া হল, অপর বিষয়টি টেপ থেকে শোনা হল। এক্ষেত্রে টেপ থেকে শোনা বিষয়টির পশ্চাৎমুখী প্রতিরোধ অধিক হবে। নিদ্রা পশ্চাৎমুখী অন্তরায়কে হ্রাস করে। Jenkins and Dallenback- এর পরীক্ষা থেকে জানা যায় যে, কোনো কিছু শেখার পর নিদ্রা গেলে পশ্চাৎমুখী অন্তরায় কম হয়।
বিষয়বস্তু অতিশিখন হলে পশ্চাৎমুখী অন্তরায় কম হয়। শিখন অভিজ্ঞতা যদি সুসংবদ্ধ হয় তাহলে পশ্চাৎমুখী অন্তরায় কম হয়। পশ্চাৎমুখী অন্তরায়ের কারণ হিসাবে দুটি মতবাদ আছে।
(ক) সংবদ্ধতা: কোনো কিছু শিখনের জন্য স্নায়ুতন্ত্রের সক্রিয়তা প্রয়োজন। যার জন্য সময় দিতে হবে। বিরতি না দিয়ে যদি শ্রমসাধ্য কিছু করা হয় সেক্ষেত্রে সংবদ্ধতার অন্তরায় হেতু বিস্মৃতি ঘটে। মুলার ও পিলজেকার এই মতবাদে বিশ্বাসী।
(খ) স্থানান্তর: অধীত বিষয়বস্তু দুটি পৃথকভাবে মস্তিষ্কে সংরক্ষিত হয়। দুটির অবস্থান এমনভাবে থাকে যে, একটিকে মনে করলে অপর কিছু অংশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলে আসে, যার ফলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। ফলে সংরক্ষণ বাধা পায় ও পুনরুদ্রেক হয় না। ডিক্যাম্প এই মতবাদ সমর্থন করেন।
2. অতিবাহিত সময়ের দরুন বিস্মৃতি: কোনো কিছু শেখা ও পুনরুদ্রেকের মধ্যে যত বেশি সময় অতিবাহিত হবে বিস্মৃতির পরিমাণ তত বৃদ্ধি পাবে।
3. ক্লান্তি: অসুস্থ দেহে বা মানসিকভাবে ক্লান্ত অবস্থায় যদি আমরা শিখি সেক্ষেত্রে শীঘ্র ভুলে যাবার সম্ভাবনা অধিক। ক্লান্তির সঙ্গে পশ্চাৎমুখী অন্তরায়ের একটা সম্পর্ক দেখা যায়। একনাগাড়ে পাঠ করলে পশ্চাৎমুখী অন্তরায়ের কারণে প্রথম পাঠের বিষয়টি পরবর্তী পাঠের অন্তরায় সৃষ্টি করে, ফলে পাঠটি দুর্বল হয় এবং আমরা ভুলে যাই। পাঠের মাঝে বিরতি দিলে ক্লান্তি অপসারণ হয় এবং অন্তরায়জনিত বাধা দূর হয় এবং বিস্মরণ কম হয়।
4. ইচ্ছাকৃত বিস্মরণ: ফ্রয়েড এবং তাঁর অনুগামীগণ বলেন-আমরা কিছু ভুলতে চাই বলে ভুলে যাই অর্থাৎ আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলে যাই। অপ্রিয়, বেদনাদায়ক, অভিজ্ঞতাগুলিকে আমরা মনে রাখতে চাই না। এগুলি অবচেতন মনে চলে যায় এবং অবদমিত অবস্থায় থাকে। তাই অনেকে একে অবদমনের কারণে ভুলে যাওয়া বলেন।
5. আবেগজনিত বাধা: রাগ, ভয়, ঘৃণা, দুশ্চিন্তা প্রভৃতি আবেগ তীব্রভাবে দেখা দিলে অধীত বিষয় বিস্মরণ ঘটে। পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীর এই ধরনের বিস্মরণ ঘটতে দেখা যায়।
6. পরিবেশ পরিবর্তন: অনেক সময় যে পরিবেশে বিষয়টি শেখা হয়েছে সেই পরিবেশ পরিবর্তনের ফলে আমরা ভুলে যাই। সেজন্য ভুলে যাওয়া কোনো বিষয়কে স্মৃতিতে নিয়ে আসার জন্য, যে পরিবেশে বিষয়টি শেখা হয়েছে সেই পরিবেশে নিয়ে আসা হয়।
7. নেশাকর বস্তু সেবন: মদ, গাঁজা, আফিম, কোকেন প্রভৃতি নেশাকর বস্তু অতিরিক্ত সেবন করলে বিস্মরণ ঘটে। সেজন্য হতাশাকে ভুলে যাবার জন্য অনেকে নেশার আশ্রয় নেয়।
৪. আঘাতজনিত বিস্মরণ: মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত লাগলে, প্রচণ্ড মানসিক শক্ বা কোনো মানসিক রোগে স্মৃতি সম্পূর্ণ লুপ্ত হয়ে যেতে পারে । অ্যালজাইমার কারণে স্মৃতি ক্রমশ লোপ পায়।
9. অনুষঙ্গের অভাব: যথাযথ অনুষঙ্গের অভাবে বিষয়বস্তুর অধীতি বিস্মরণের সম্ভাবনা থাকে।
10. বাচনিক অনুষঙ্গ: ওয়াটসন-এর মতে, ভাষার অভাবে অনেক সময় বিস্মরণ ঘটে। অতি শৈশবের ঘটনা যে আমরা বিস্মৃত হই তা এই বাচনিক অনুষঙ্গের অভাবে।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।