প্রশ্ন- রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো।
উত্তরঃ ভারতীয় শাসনতন্ত্রের 153নং ধারা অনুযায়ী প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে একজন করে রাজ্যপাল প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে অবস্থান করবেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী এই রাজ্যপাল হলেন নিয়মতান্ত্রিক প্রধান। প্রকৃত ক্ষমতা মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীপরিষদের হাতে কুক্ষিগত থাকে। অধ্যাপক জোহারি বলেছেন, রাজ্যপাল হলেন রাজ্যের ও কেন্দ্রের প্রতিনিধি এবং কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম। সংবিধান অনুযায়ী ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতি দ্বারা মনোনীত হন। রাষ্ট্রপতি অবশ্য এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেন। রাজ্যপালের 5 বছরের মেয়াদের কার্যকালে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাষ্ট্রপতি তাঁকে পদচ্যুত বা স্থানান্তরিত করতে পারেন। ভারতীয় শাসনতন্ত্রে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য রাজ্যপালের পদটি সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যপাল শাসন সংক্রান্ত, আইন সংক্রান্ত, আর্থিক সংক্রান্ত, বিচার সংক্রান্ত এবং স্বেচ্ছাধীন কিছু ক্ষমতা ভোগ করেন।
রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলি-
রাজ্যপাল রাজ্যের শাসনবিভাগীয় প্রধান। রাজ্যের শাসনকার্য তাঁর নামে পরিচালিত হয়। বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যপালের ব্যাপক ক্ষমতা বর্তমান ১. শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা, ২. আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা, ৩. অর্থসংক্রান্ত ক্ষমতা, ৪. বিচার-সংক্রান্ত ক্ষমতা এবং ৫. স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা।
১. শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা- [A] সংবিধান অনুসারে রাজ্যের শাসন সম্পর্কিত সকল ক্ষমতা রাজ্যপালের ওপর ন্যস্ত থাকে। তিনি নিজেও বা অধীনস্থ কর্মচারীদের মাধ্যমে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন (154 ধারা)। [B] রাজ্যপালকে সংবিধান অনুসারে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হয়। [C] রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য রাজ্যপালকে প্রয়োজনীয় নিয়ম পদ্ধতি প্রণয়ন করতে হয়। [D] রাজ্যের তালিকাভুক্ত সকল বিষয়েই তাঁর শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতা প্রযোজ্য।
2. আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা- [A] রাজ্যপাল রাজ্যের আইনসভার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। রাজ্যপাল এবং একটি বা দুটি কক্ষ নিয়ে রাজ্যের আইনসভা গঠিত হয়। [B] রাজ্যপাল রাজ্য আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করতে এবং স্থগিত রাখতে পারেন। [C] প্রয়োজনবোধে তিনি নির্দিষ্ট কার্যকাল অতিক্রান্ত হওয়ার আগে বিধানসভাকে ভেঙে দিতে পারেন। [D] রাজ্যপাল রাজ্য আইনসভায় ভাষণ দিতে পারেন অথবা বাণী প্রেরণ করতে পারেন।
3. অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা- প্রত্যেক আর্থিক বছর সম্পর্কে রাজ্যপালের বিশেষ দায়িত্ব আছে। [A] প্রত্যেক আর্থিক বছরের জন্য রাজ্যসরকারের আনুমানিক আয়ব্যয়ের একটি বিবরণী বা বাজেট বিধানসভায় পেশ করতে হয় (202 ধারা)। সাধারণত রাজ্যপালের পক্ষে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীই এই দায়িত্ব সম্পাদন করেন। [B] রাজ্যপালের সুপারিশ ছাড়া কোনো ব্যয় বরাদ্দের দাবি উত্থাপন করা যায় না। [C] তাঁর অনুমতি ছাড়া কোনো অর্থবিল বিধানসভায় পেশ করা যায় না (205 ও 207 ধারা)। [D] রাজ্যপালের তত্ত্বাবধানে রাজ্যের জরুরি তহবিল থাকে। আকস্মিক কোনো ব্যয় নির্বাহের জন্য রাজ্য আইনসভার অনুমোদন সাপেক্ষে তিনি এই তহবিল থেকে অগ্রিম অর্থ মঞ্জুর করতে পারেন।
৪. বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা- রাজ্যের হাইকোর্ট ছাড়া অন্যান্য অধস্তন সকল আদালতের বিচারপতিদের রাজ্যপাল নিযুক্ত করেন। এঁদের নিয়োগ ও পদোন্নতির ব্যাপারে তিনি উচ্চ আদালতের সঙ্গে পরামর্শ করেন। রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়ে আইন অমান্যজনিত অপরাধের জন্য দণ্ডিত ব্যক্তিকে রাজ্যপাল ক্ষমা করতে পারেন কিংবা দন্ডাদেশ লাঘব করতে পারেন। তা ছাড়া তিনি দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখতে পারেন বা একপ্রকার দণ্ডের পরিবর্তে অন্যপ্রকার দণ্ডের ব্যবস্থা করতে পারেন। (161 ধারা)। তবে মৃত্যুদণ্ডাদেশের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখতে পারলেও ক্ষমা প্রদর্শন করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অন্যান্য ক্ষমতা আছে।
৫. স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা- উপরিউক্ত ক্ষমতাগুলি প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক শাসক প্রধান হিসেবে রাজ্যপাল রাজ্যের মন্ত্রিসভার পরামর্শ মেনে চলেন। কিন্তু রাজ্যপালের কিছু স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাও আছে। সংবিধানের 163 ধারায় স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার পরামর্শ মেনে চলতে বাধ্য নন। সংবিধান অনুসারে নিম্নলিখিত কয়েকটি ক্ষেত্রে রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা আছে- [A] অসমের স্বশাসিত উপজাতি অঞ্চলে খনিজসমূহের উপস্বত্ব বা 'রয়্যালটি' সম্পর্কে জেলা-পরিষদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের কোনো বিরোধ বাধলে, তার মীমাংসার ক্ষেত্রে অসমের রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা আছে। [B] রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে অসমের উপজাতি এলাকার শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে অসমের রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা আছে। [C] রাষ্ট্রপতি যদি কোনো রাজ্যের রাজ্যপালকে পার্শ্ববর্তী কোনো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের শাসক নিযুক্ত করেন, তাহলে তিনি ওই অঞ্চলের শাসনকার্য পরিচালনার ব্যাপারে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন (239(2) ধারা)। [D] গুজরাট ও মহারাষ্ট্র রাজ্য দুটির কোনো অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট রাজ্য দুটিতে রাজ্যপালকে বিশেষ দায়িত্ব দিতে পারেন [371(2) ধারা]। এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করেন।
রাজ্যপালের পদমর্যাদা-
শাসনতন্ত্র অনুযায়ী রাজ্যপালই হলেন রাজ্যের শাসনকর্তা। প্রয়োজন হলে তিনি মন্ত্রীসভার পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন, আবার নাও পারেন। শাসনতন্ত্রের 164-র 9নং ধারা অনুযায়ী রাজ্যপাল নিজে অথবা তাঁর কর্মচারীদের মাধ্যমে রাজ্যের শাসনক্ষমতা প্রয়োগ করেন। তা ছাড়া 1976 সালের 42তম সংশোধনে রাষ্ট্রপতিকে মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুযায়ী চলতে বাধ্য করা হলেও রাজ্যপালের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়নি।
সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপাল কিছু স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ভোগ করেন। শাসনতন্ত্রের 163-র ১নং ধারায় বলা হয়েছে, যে সকল ক্ষেত্রে রাজ্যপাল স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করবে, সেইসব ক্ষেত্র ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে সাহায্য ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন একটি মন্ত্রীপরিষদ থাকবে। রাজ্যপাল কোনো বিশেষ ক্ষমতাকে তাঁর স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা হিসেবে সিদ্ধান্ত নিলে সাংবিধানিকভাবে তার বিরোধিতা করা যাবে না। একদিকে 167নং ধারা অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রীসভা কর্তৃক গৃহীত যে-কোনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত রাজ্যপালকে অবহিত করবে। আবার রাজ্যপাল স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার আড়ালে সহজেই মন্ত্রীসভার পরামর্শ ছাড়া কাজ করতে পারবেন। রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর নিয়োগ, অপসারণ, বিধানসভা ভেঙে দেওয়া, রাজ্যের শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
6295916282; 7076398606
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।