প্রশ্নঃ ডুর্খেইমের আত্মহত্যা তত্ত্বটি( Durkheim’s theory of suicide.)

Nil's Niva
0

Q: What is Suicide? Critically analyze Durkheim’s theory of suicide.

Or, Analyze Durkheim’s theory of suicide with suitable examples.

v ডুর্খেইমের আত্মহত্যা তত্ত্বটিঃ

সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠায় যে কয়েকজন মুষ্টিমেয় সমাজবিজ্ঞানী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলো এমিল ডুর্খেইম । তিনিই প্রথম সমাজের বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা, পর্যালোচনা ও আলোচনার সূত্রপাত ঘটান যার মাধ্যমে সমাজ সম্পর্কে পঠন-পাঠনে অগ্রহী হন । হার্বার্ট স্পেন্সার ব্যক্তিকে সমাজ বিশ্লেষণের একক হিসেবে গুরুত্ব দিয়েছেন । কিন্তু ডুর্খেইম সমাজ-সংগঠনকেই একক ধরে সমাজ বিশ্লেষণ করেছেন । তাঁর মতে ব্যক্তির মাধ্যমে সমাজ গঠিত হলেও সমাজই ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত করে ।

ডুর্খেইম ১৮৫৮ সালে ফ্রান্সের লোরিন প্রদেশে এক ধর্মযাজক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । প্যারিসের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দর্শন, সাহিত্যে শিক্ষা লাভের পর তিনি সমাজবিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন । তিনি তাঁর সমাজ সম্পর্কিত ভাবনা-চিন্তা বিভিন্ন গ্রন্থে মাধ্যমে প্রকাশ করেন । ডুর্খেইম রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে The Division of Labor in Society, The Rules of Sociological Method, Suicide, Sociology and Philosophy, The Elementary forms of Religious life উল্লেখযোগ্য । ১৯০২ সালে তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন । সামাজিক ঘটনা, আত্মহত্যা, শ্রমবিভাজন, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব প্রদান করেছেন ।

v আত্মহত্যাঃ

এমিল ডুর্খেইমের মতে আত্মহত্যা একটি সামাজিক ঘটনা । তিনি সামাজিক সংহতি এবং সামাজিক সচেতনতার সাথে আত্মহত্যার সম্পর্ক নিরূপণ করেছেন । অভিজ্ঞতাভিত্তিক ও পরিসংখ্যানগত পদ্ধতির মাধ্যমে তিনি আত্মহত্যা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করেছেন । তিনি তাঁর Suicide গ্রন্থে আত্মহত্যার জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং ভৌগোলিক কারণসমূহকে যৌক্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করে সামাজিক কারণসমূহকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেন । তিনি আত্মহত্যাকে সামাজিক সংহতির সাথে সম্পর্কিত করেন । তিনি মূলত অন্যের যুক্তি খন্ডন করেন তারপর আলোচ্য বিষয়ে নিজের যুক্তি প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি আত্মহত্যাকে শ্রমবিভাজনের নেতিবাচক দিক হিসেবে ব্যাখ্যা করেন যা সামাজিক সংহতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ।

আত্মহত্যা প্রসঙ্গে এ্যারোন বলেন, আত্মহত্যা হলো আত্মহত্যাকারী কর্তৃক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইতিবাচক বা নেতিবাচক ঘটনা যা মৃত্যু ঘটায় । তাই বলা যায় আত্মহনন করা তথা নিজের জীবন নিজের দ্বারা নিঃশেষ হওয়া হলো আত্মহত্যা ।

আত্মহত্যা প্রসঙ্গে ডুর্খেইম বলেন, যারা সমাজের সাথে অতিমাত্রায় সম্পৃক্ত তারা আত্মহত্যা করে । আবার যারা সমাজ থেকে অতিমাত্রায় বিচ্ছিন্ন তারাও আত্মহত্যা করে । একারণে বিভিন্ন ধরনের আত্মহত্যার ধারণা তিনি দেন। তিনি প্রধানত তিন ধরনের আত্মহত্যার উল্লেখ করেছেন । এগুলো হল: ১. আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যা ২. পরার্থপর আত্মহত্যা ৩. নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা।

(১) আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যা: সমাজ বা গোষ্ঠীর সঙ্গে সংহতির অভাব দেখা দিলে এ ধরণের আত্মহত্যা ঘটে । সমাজ থেকে ব্যক্তি যখন নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করে তখন এ ধরনের আত্মহত্যা ঘটে । সচরাচর যে সকল সমাজে সামাজিক সংহতি কম থাকে সে সকল সমাজে আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি হয় । ডুর্খেইম পরিসংখ্যানের মাধ্যমে দেখান যে, বিবাহিতদের চেয়ে অবিবাহিতদের মধ্যে, মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের মধ্যে, গ্রামবাসীদের চেয়ে নগরবাসীদের মধ্যে এ ধরনের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি ।

(২) পরার্থপর আত্মহত্যা: আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যার বিপরীত ধারণা হলো পরার্থপর আত্মহত্যা । কারণ ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের অতিমাত্রায় সংহতির কারণে এ ধরণের আত্মহত্যা দেখা যায় । এ ধরনের আত্মহত্যায় ব্যক্তি নিজের জীবনকে প্রয়োজনের কাছে তুচ্ছ মনে করে । ফলে সমাজ তথা রাষ্ট্রের প্রয়োজনে মৃত্যু জেনেও কাজ করতে গিয়ে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে । সাধারণত যেকোনো দেশের স্বাধীনতা বা স্বাধীকার আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে । আবার যুদ্ধ ক্ষেত্রে সৈনিকগণ জীবন দান করেন, যা ঐ সমাজের সঙ্গে অতিমাত্রায় সংহতিকেই প্রকাশ করে ।

(৩) নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা: যখন সমাজে ব্যক্তির উপর মূল্যবোধের প্রভাব হারিয়ে ফেলে তখন তাকে নৈরাজ্যমূলক অবস্থা বলে । এ ধরনের পরিস্থিতি হলে ব্যক্তি তার নিজ নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী আচরণ করে যা সামাজিকভাবে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় যার প্রভাবে বা কারণে অনেকে আত্মহত্যা করে। এ রকম পরিস্থিতিতে আত্মহত্যা করাকেই নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা বলে । সাধারণত যেকোনো বিপ্লব বা দুর্যোগের পর এ ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে । যেমন ফরাসী বিপ্লব পরবর্তী সময়ের ফ্রান্সের সমাজ ব্যবস্থা, যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর এ ধরনের অবস্থা তৈরি হতে পারে ।

এ ছাড়া তিনি আরো এক ধরনের আত্মহত্যার কথা বলেন, তা হলো নিয়তিবাদী আত্মহত্যা । এ ধরনের আত্মহত্যার ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুনের অতিরিক্ত কড়াকড়ি আরোপ হয়ে থাকে । নিয়ম-কানুনের অতি কড়াকড়িতে মানুষের জীবন যখন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং নিজের জীবন হনন করে তখন তাকে নিয়তবাদী আত্মহত্যা বলে । যেমন দাস সমাজে দাসগণ অতিরিক্ত অত্যাচার নিপীড়নে আত্মহত্যা করে । অতিরিক্ত শাসনে কেউ আত্মহত্যা করতে পারে ।


জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore