প্রশ্নঃ নমুনায়ন কী? নমুনায়ন উদ্দেশ্যগুলি কী কী লেখো?

Nil's Niva
0

প্রশ্নঃ নমুনায়ন কী? নমুনায়ন উদ্দেশ্যগুলি কী কী লেখো?

v নমুনায়নঃ

নমুনায়ন হলো এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সমগ্রকের ভিতর থেকে কিছু সংখ্যক একক বেছে নেওয়া হয়। যে পদ্ধতির সাহায্যে নমুনা নির্বাচন করা হয় সে পদ্ধতিকে বলে নমুনায়ন পদ্ধতি আর নির্বাচিত দলকে বলা হয় নমুনা দল। গবেষণার উদ্দেশ্য, তথ্যের প্রকৃতি, সময় ও গবেষণার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের দিকে নজর রেখে নমুনায়ন পদ্ধতিগুলো থেকে যে-কোনো একটি গবেষক বেছে নিতে পারেন।

গবেষণার সুবিধার্থে এবং নিরপেক্ষ, সঠিক, প্রতিনিধিমূলক নমুনাদল গঠনে যাতে কোনোপ্রকার বিঘ্নের সৃষ্টি না হয় সে জন্য পরিসংখ্যানবিদরা নমুনায়নের বিভিন্ন প্রকার পদ্ধতি প্রবর্তন করেছেন।

v নমুনায়নের প্রধান উদ্দেশ্যঃ

নমুনায়ন পদ্ধতি ব্যবহারের পেছনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য রয়েছে। একটি গবেষণাকে সফল এবং কার্যকর করে তোলার জন্য এই উদ্দেশ্যগুলি অপরিহার্য। সেগুলি নিচে আলোচনা করা হলো:

১. সময় সাশ্রয়ঃ যেকোনো গবেষণার ক্ষেত্রে সময় একটি অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। যদি কোনো বড় জনগোষ্ঠী, যেমন একটি দেশের সমস্ত ভোটারের মতামত জানতে চাওয়া হয়, তবে প্রত্যেকের কাছে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব এবং সময়সাপেক্ষ। এর পরিবর্তে, যদি একটি প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা বেছে নিয়ে তাদের মতামত সংগ্রহ করা হয়, তবে অনেক কম সময়ে কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। এর ফলে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সহজ হয়।

২. অর্থ সাশ্রয়ঃ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ওপর গবেষণা চালানোর জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। প্রশ্নপত্র ছাপা, তথ্য সংগ্রহকারীদের বেতন, যাতায়াত খরচ এবং অথ্য বিশ্লেষণের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের দরকার হয়। নমুনায়নের মাধ্যমে যেহেতু অল্প সংখ্যক উত্তরদাতার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, তাই গবেষণার মোট খরচ কমে আসে। সীমিত বাজেটের মধ্যে গবেষণা পরিচালনার জন্য নমুনায়ন একটি আদর্শ পদ্ধতি।

৩. শ্রমের সাশ্রয়ঃ সমগ্র জনগোষ্ঠীর ওপর সমীক্ষা চালাতে গেলে বহুসংখ্যক তথ্য সংগ্রহকারী এবং গবেষকের প্রয়োজন হয়। নমুনায়ন পদ্ধতিতে যেহেতু গবেষণার পরিধি ছোট থাকে, তাই কম লোকবল দিয়েই কাজটি সম্পন্ন করা যায়। এর ফলে গবেষকদের পক্ষে তথ্য সংগ্রহকারীদের সঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং পুরো প্রক্রিয়াটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়।

৪. তথ্যের নির্ভুলতা বৃদ্ধিঃ অনেকের কাছে বিষয়টি আশ্চর্যজনক মনে হলেও, অনেক ক্ষেত্রে সমগ্র জনগোষ্ঠীর ওপর সমীক্ষার চেয়ে নমুনায়নের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বেশি নির্ভুল হয়। কারণ, ছোট নমুনার ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহকারীরা প্রতিটি উত্তরদাতার কাছ থেকে মনোযোগ সহকারে এবং বিস্তারিতভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। অন্যদিকে, বড় আকারের সমীক্ষায় ক্লান্তিকর ও একঘেয়ে কাজের কারণে তথ্যে ভুল হওয়ার  সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সঠিক পদ্ধতিতে নমুনায়ন করা হলে নমুনার ফলাফল সমগ্র জনগোষ্ঠীর ফলাফলের খুব কাছাকাছি আসে।

৫. বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে অপরিহার্যতাঃ কিছু ক্ষেত্রে সমগ্র জনগোষ্ঠীর ওপর সমীক্ষা চালানো শুধু কঠিনই নয়, অসম্ভবও বটে। যেমন, একটি কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের মান পরীক্ষা করা সম্ভব নয়, কারণ পরীক্ষা করতে গেলে পণ্যগুলি নষ্ট হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে, উৎপাদিত পণ্যের একটি নমুনা পরীক্ষা করেই পুরো লটের মান সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একইভাবে, কোনো একটি দেশের সব মাছের গড় ওজন নির্ণয় করাও অসম্ভব। তাই নমুনায়নই একমাত্র উপায়।

৬. বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহঃ নমুনার আকার ছোট হওয়ায় গবেষকরা প্রতিটি এককের ওপর গভীরভাবে মনোনিবেশ করতে পারেন। এর ফলে একটি নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে অনেক বিস্তারিত এবং গভীর তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়, যা সমগ্র জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো সমীক্ষায় সম্ভব হয় না।

উপসংহারঃ সুতরাং, নমুনায়ন কেবল সময়, অর্থ এবং শ্রম বাঁচায় না, বরং গবেষণার মান উন্নত করতেও সহায়তা করে। সঠিক এবং প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল নির্ভরযোগ্য হয় এবং এর ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক, অর্থনৈতিক বা ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। এক কথায়, আধুনিক গবেষণা এবং ডেটা-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নমুনায়ন একটি অপরিহার্য বৈজ্ঞানিক হাতিয়ার।


জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore