১.সমাজতত্ত্বের সঙ্গে নৃতত্ত্বের সম্পর্ক আলোচনা করো।
অথবা
সমাজতত্ত্বের সঙ্গে সামাজিক নৃতত্ত্বের সম্পর্ক আলোচনা করো।
v নৃতত্ত্ব
ও সমাজতত্ত্বের সম্পর্কঃ
নৃতত্ত্বের ইংরেজী প্রতিশব্দ হল Anthropology। এই ইংরেজী শব্দটি সৃষ্টি হয়েছে
দুটি গ্রীক শব্দ- Anthropos এবং Logos এর সমাহারে। Anthropos শব্দটির অর্থ Man বা মানুষ
এবং Logos শব্দটির অর্থ হল Study বা আলোচনা। সুতরাং ব্যুৎপত্তিগত অর্থে নৃতত্ত্বের
অর্থ হল মানুষের বা মানবজাতির আলোচনা। নৃবিদ্যার আলোচনার বিষয়বস্তু হল আদিম মানুষের
শারীরতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব প্রভৃতি। অনুরূপভাবে মানবজাতিতত্ত্ব
(Ethonology) হল নৃবিদ্যার গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। অর্থাৎ নৃতত্ত্বের আলোচনাক্ষেত্রের
পরিধি বিশেষভাবে প্রসারিত। নৃতত্ত্ব আবার তিনভাগে বিভক্ত-(ক) শারীরিক নৃতত্ত্ব (খ) সাংস্কৃতির নৃতত্ত্ব (গ) সামাজিক নৃতত্ত্ব ।
সমাজতত্ত্ব হল সমাজের বিজ্ঞানভিত্তিক চর্চা। Kinsley Davis-এর অভিমত
অনুসারে, সমাজবিজ্ঞান হল সমাজের সাধারণ বিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞান যেখানে সমাজকে নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ
করে, নৃতত্ত্ব সেখানে সমাজস্থ মানুষকে নিয়ে আলোচনা করে। অতএব উভয় শাস্ত্রের বিষয়গত
পারস্পরিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। সেই কারণে সমাজতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের মধ্যে মৌলিক কোনও পার্থক্য
পরিলক্ষিত হয় না। বরং Tom Bottomore-এর অভিমত অনুসারে শাস্ত্র দুটির মধ্যে পারস্পরিক
সম্পর্ক অতিমাত্রায় দেখা যায়। সমাজতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের সম্পর্ক নিরূপণের ক্ষেত্রে আমেরিকান
নৃতত্ত্ববিদ্ A.L. Kroeber বলেছিলেন, সমাজতত্ত্ব ও নৃতত্ত্ব দুটি যমজ বোন
(Twin sister)।
সমাজতত্ত্বের ন্যায় নৃতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়গুলি অত্যন্ত ব্যাপক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ।
প্রত্নতত্ত্ব ও ভাষাতত্ত্ব ইত্যাদি হল মানুষের শারীরিক গঠন ও আকৃতি সম্পর্কিত চর্চা।
জীবনপ্রণালী সম্বন্ধীয় কোনও বিষয়ই নৃতত্ত্বের আলোচনার বহির্ভূত নয়। এদিক থেকে বিচার
করলে সমাজতত্ত্বের বিষয়বস্তু প্রায় সমগোত্রীয়। বিশেষ করে নৃতত্ত্বের যে শাখা জীবনপ্রণালী
নিয়ে আলোচনা করে তার সাথে সমাজতত্ত্বের আলোচনার মিল এত বেশি যে দুটি বিষয়ের মধ্যে ভেদরেখা
টানা খুবই কঠিন। এতদসত্ত্বেও এই দুটি বিষয়ের পরিধিগত, পদ্ধতিগত এবং দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য
আছে যেগুলির দ্বারা এদের মধ্যে ভেদরেখা টানা যেতে পারে-
প্রথমত, অক্ষর-পরিচয়হীন
আদি মনুষ্য সমাজের মধ্যে নৃতত্ত্ববিদরা তাদের আলোচনা ও গবেষণা সীমাবদ্ধ রেখেছেন। অপরপক্ষে
শিক্ষিত ও সুসভ্য সমাজ সম্বন্ধে আলোচনা ও গবেষণা করা সমাজতাত্ত্বিকদের দায়িত্ব।
দ্বিতীয়ত, অনুশীলন
পদ্ধতির ক্ষেত্রে এই দুই বিদ্যার মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নৃতত্ত্ববিদরা মূলতঃ
প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ এবং তথ্য সংগ্রহের দ্বারা গবেষণাকার্য চালান। সুতরাং নৃতত্ত্ববিদদের
গবেষণা পদ্ধতিকে clinical বলে বর্ণনা করা হয়। সমাজতত্ত্ববিদ পরিসংখ্যান ও প্রশ্নমালার
উপর বেশি নির্ভর করে। তাই তার গবেষণা অনেক বেশী নিয়মমাফিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়।
তৃতীয়ত, নৃতত্ত্ববিদ
জোট সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের গবেষণাকার্য নিবদ্ধ রাখেন। কিন্তু সমাজতত্ত্ববিদদের পক্ষে
বৃহদায়তন নৈর্ব্যক্তিক সামাজিক ব্যবস্থা বা সংগঠন আলোচনা করা সহজ। অদূর ভবিষ্যতে যখন
নিরক্ষর আদিম অধিবাসীরা সুসভ্য সমাজের সংস্পর্শে এসে তাদের নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য হারাবে
তখন নৃতত্ত্ব ও সমাজতত্ত্বের মধ্যে বর্তমান ভেদরেখা বিলীন হয়ে যাবে। এখনও অনেক বিষয়ে
এই দুটি বিদ্যার মধ্যে প্রায় একইরকম গবেষণা কার্য চালানো হয়। যেমন উদাহরণস্বরূপ বলা
যায়, বিবাহ, পরিবার, বংশ, আত্মীয়তা সম্পর্ক প্রভৃতি।
সুতরাং উভয় বিদ্যার মধ্যে অধিক সামঞ্জস্য থাকা সত্ত্বেও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে
সমাজতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বিষয়বস্তু ও আলোচ্য পরিধি স্বতন্ত্র এবং আলাদা। যারফলে দুটি
বিদ্যার স্বতন্ত্রতা সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। কারণ নৃতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় হল ব্যক্তি
আর সমাজতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় হল মূলত সমাজ।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

