প্রশ্নঃ সমাজের সংজ্ঞা দাও। সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা
করো।
v সমাজের সংজ্ঞাঃ
মরিস জিনসবার্গ-এর অভিমত অনুসারে, মানুষের সাথে মানুষের প্রত্যক্ষ বা
পরোক্ষ সংগঠিত বা অসংগঠিত, সচেতন বা অচেতন, সহযোগিতা বা বিরুদ্ধতামূলক সমস্ত সম্পর্কই
হল সমাজ।
P. Gisbert তাঁর 'Fundamentals of Sociology' শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন,
সমাজ হল সামাজিক সম্পর্কের এক জটিল বন্ধন যার দ্বারা প্রত্যেকে পরস্পরের সাথে যুক্ত
থাকে।
N.S.Timasheff তাঁর 'Sociological Theory' গ্রন্থে বলেছেন গোষ্ঠী সদস্যদের
সম্পর্কই হল সমাজ।
টমাস হবস্ -এর সংজ্ঞা অনুসারে, সমাজ হল মানুষের সুরক্ষার উপায় যা
সে গড়ে তোলে তার প্রতিবন্ধকতা দূর করার অভ্যাস থেকে।
উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলি থেকে খুব সহজেই বলা
যায়, সমাজ হল গোষ্ঠী মধ্যস্থিত ব্যক্তির মিথষ্ক্রিয়ার ফলে গড়ে ওঠা সামাজিক সম্পর্কের
এক জটিল জটাজাল, যা বিমূর্ত প্রকৃতির। অতএব গোষ্ঠী মধ্যস্থিত বিভিন্ন আচার-আচরণের সমন্বয়ের
ফলে যে সুসংবদ্ধ সামাজিক সম্পর্কের জাল গড়ে ওঠে, তার দ্বারা যে কাঠামো সৃষ্টি হয়, সেই
গঠিত কাঠামোকে সমাজ বলে। সমাজের মূল প্রতিষ্ঠানসমূহ যথা- ধর্ম, শিক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতির
মধ্যে পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণ করলে সমাজের স্বরূপ সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা
যায়। সমাজের রীতিনীতি, নিয়ম-কানুন ও আচার-আচরণ এমন গভীরভাবে নির্ভরশীল ও সম্পর্কযুক্ত
যে, যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা সহজসাধ্য।
v সমাজের বৈশিষ্ট্যঃ
১. পারস্পরিক নির্ভরশীলতাঃ সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর সদস্যদের
মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা। সমাজের প্রতিটি সদস্য তার প্রয়োজনের জন্য অন্যের উপর
নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতা অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং মানসিক হতে পারে। যেমন, একজন কৃষক
তার উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে অন্য পেশার মানুষের তৈরি জিনিসপত্র কেনেন। শিক্ষক তার জ্ঞান
বিতরণ করেন, আবার ডাক্তার তার সেবা দেন। এই পারস্পরিক নির্ভরশীলতা সমাজের বন্ধনকে দৃঢ়
করে।
২. সাধারণ সংস্কৃতি
ও মূল্যবোধঃ একটি সমাজের সদস্যদের
মধ্যে কিছু সাধারণ সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ থাকে, যা তাদের জীবনধারাকে প্রভাবিত করে। ভাষা,
রীতিনীতি, ধর্ম, বিশ্বাস, পোশাক, খাদ্য এবং ঐতিহ্য—এগুলো সংস্কৃতির অংশ। এই সাধারণ
সংস্কৃতিই একটি সমাজকে অন্য সমাজ থেকে আলাদা করে তোলে। একই সংস্কৃতির মানুষ সহজেই একে
অপরের সঙ্গে মিশতে পারে এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া তৈরি হয়।
৩. সামাজিক সম্পর্ক
ও সহযোগিতাঃ সমাজ হলো সম্পর্কের
জাল। এখানে মানুষ একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সম্পর্কে আবদ্ধ হয়, যেমন—পরিবার,
বন্ধু, প্রতিবেশী এবং সহকর্মী। এই সম্পর্কগুলো সমাজের সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা ও সংহতি
বজায় রাখতে সাহায্য করে। মানুষ একসঙ্গে কাজ করে, একে অপরের বিপদে পাশে দাঁড়ায় এবং
সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে।
৪. সামাজিক স্তরবিন্যাসঃ প্রত্যেক সমাজেই এক ধরনের স্তরবিন্যাস বা শ্রেণিবিন্যাস
দেখা যায়। এই স্তরবিন্যাস পেশা, অর্থনৈতিক অবস্থা, শিক্ষা বা সামাজিক মর্যাদার ওপর
ভিত্তি করে তৈরি হয়। সমাজে কিছু মানুষ উচ্চ অবস্থানে থাকে, আবার কিছু মানুষ নিম্ন
অবস্থানে থাকে। এই স্তরবিন্যাস সমাজের কাঠামোকে প্রভাবিত করে এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে
সুযোগ ও সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে তার প্রভাব দেখা যায়।
৫. সামাজিক নিয়ন্ত্রণঃ সমাজ তার সদস্যদের আচরণকে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখার
জন্য সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যবহার করে। এই নিয়ন্ত্রণ দুই ধরনের হতে পারে:
আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক। আনুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ হলো আইন, আদালত, পুলিশ ইত্যাদি,
যা লিখিত নিয়ম মেনে চলে। অন্যদিকে, অনানুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ হলো সমাজের রীতিনীতি,
প্রথা, লোকলজ্জা বা সামাজিক চাপ, যা লিখিত হয় না কিন্তু সমাজের সদস্যরা মেনে চলে।
৬. পরিবর্তনশীলতাঃ সমাজ কোনো স্থির বা অপরিবর্তনীয় ব্যবস্থা নয়। এটি অবিরত
পরিবর্তনশীল। নতুন প্রযুক্তি, নতুন ধারণা এবং বিভিন্ন বাহ্যিক শক্তির প্রভাবে সমাজ
প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবে বর্তমান সমাজের
রীতিনীতি ও জীবনধারা অতীতের চেয়ে অনেক আলাদা। এই পরিবর্তনশীলতা সমাজের প্রাণবন্ততা
ও গতিশীলতা বজায় রাখে।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।