প্রশ্নঃ আদিবাসী কী? ভৌগলিক বন্টনের ভিত্তিতে ভারতীয় আদিবাসী
গোষ্ঠীগুলির পরিচয় দাও।
§ আদিবাসীঃ
আদিবাসী শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল
"আদি" অর্থাৎ পুরাতন বা প্রথম এবং "বাসী" অর্থাৎ বাসিন্দা। সুতরাং,
আদিবাসী বলতে কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী প্রাচীনতম জনগোষ্ঠীকে বোঝায়, যারা
সেই অঞ্চলের ভূমিপুত্র এবং যাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও জীবনযাপন পদ্ধতি অন্যদের থেকে
স্বতন্ত্র।
সহজ ভাষায়, আদিবাসী হল সেইসব সম্প্রদায়
যারা কোনো একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করে আসছে এবং যাদের নিজস্ব সামাজিক,
সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক রীতিনীতি রয়েছে যা মূলধারার সমাজ থেকে আলাদা।
ভারতের প্রেক্ষাপটে, আদিবাসীরা হলেন সেইসব
জনগোষ্ঠী যারা ঐতিহাসিক ভাবে এই দেশের বিভিন্ন বনভূমি, পাহাড় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে
বসবাস করে এসেছেন এবং যাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। ভারতীয় সংবিধানে
তাদের 'তফসিলি উপজাতি' (Scheduled Tribes) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
§ দ্বিতীয় অংশঃ
ভারতের আদিবাসী গোষ্ঠীগুলি ভৌগোলিক বন্টনের
ভিত্তিতে বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তৃত। তাদের পরিচয় নিচে দেওয়া হলো:
১.
উত্তর-পূর্বাঞ্চল: এই অঞ্চলে প্রায়
১৬০টিরও বেশি বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠী বাস করে। এই অঞ্চলের প্রধান রাজ্যগুলি হলো অরুণাচল
প্রদেশ, আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা। এই অঞ্চলের কিছু
প্রধান আদিবাসী গোষ্ঠী হলো:
অরুণাচল প্রদেশ: আদি, আপাটানি, গালো, মিশমি, মোনপা ইত্যাদি।
আসাম: বোড়ো, ডিমাসা, কার্বি, মিছিং, রাভা, হাজং ইত্যাদি।
মেঘালয়: খাসি, গারো, জৈন্তিয়া ইত্যাদি। এই রাজ্যে মাতৃতান্ত্রিক
সমাজ ব্যবস্থা প্রচলিত।
মণিপুর: মেইতেই, বিভিন্ন নাগা গোষ্ঠী (যেমন - তাংখুল, মাও, আঙ্গামি),
কুকি ইত্যাদি।
মিজোরাম: লুসাই, পাউই, হমার, রালতে ইত্যাদি।
নাগাল্যান্ড: বিভিন্ন নাগা গোষ্ঠী (যেমন - আঙ্গামি, আও, কোন্যাক, লোথা,
সেমা) ইত্যাদি।
ত্রিপুরা: ত্রিপুরী, রিয়াং, চাকমা, জমাতিয়া, হলাম ইত্যাদি।
এই অঞ্চলের আদিবাসীদের মধ্যে স্বতন্ত্র
সংস্কৃতি, ভাষা এবং সামাজিক রীতিনীতি লক্ষ্য করা যায়।
২.
মধ্য ও পূর্বাঞ্চল: এই অঞ্চলে ভারতের
আদিবাসী জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বাস করে। এই অঞ্চলের প্রধান রাজ্যগুলি হলো ঝাড়খণ্ড,
ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ। এই অঞ্চলের কিছু প্রধান আদিবাসী গোষ্ঠী
হলো:
ঝাড়খণ্ড: সাঁওতাল, মুন্ডা, ওরাওঁ, হো, খারিয়া ইত্যাদি।
ছত্তিশগড়: গোণ্ড, বাইগা, হালবা, ভাত্রা, মুড়িয়া, মারিয়া ইত্যাদি।
মধ্যপ্রদেশ: ভিল, গোণ্ড, বাইগা, ভারিয়া, কোল, কোরকু, সাহারিয়া ইত্যাদি।
ওড়িশা: সাঁওতাল, খণ্ড, ওরাওঁ, মুন্ডা, কোল, ভুইয়া, বোন্ডা,
জুয়াং ইত্যাদি।
পশ্চিমবঙ্গ: সাঁওতাল, ওরাওঁ, মুন্ডা, ভূমিজ, লোধা, শবর, রাভা ইত্যাদি।
এই অঞ্চলের আদিবাসী সংস্কৃতিতে স্থানীয়
ঐতিহ্য ও প্রকৃতির প্রভাব স্পষ্ট।
৩.পশ্চিমাঞ্চল: এই অঞ্চলে প্রধানত রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র এবং কেন্দ্রশাসিত
অঞ্চল দাদরা ও নগর হাভেলি অন্তর্ভুক্ত। এই অঞ্চলের কিছু প্রধান আদিবাসী গোষ্ঠী হলো:
রাজস্থান: ভিল, মীনা, গারাসিয়া, সাহারিয়া, ডামোর ইত্যাদি।
গুজরাট: ভিল, ধোডিয়া, গামিত, কোকনা, বারদা ইত্যাদি।
মহারাষ্ট্র: ভিল, গোণ্ড, ওয়ারলি, কোলি, কাটকারি, থাকুর ইত্যাদি।
দাদরা ও নগর হাভেলি: ভিলি, কোলি, ধোডিয়া ইত্যাদি।
এই অঞ্চলের আদিবাসীদের সংস্কৃতিতে স্থানীয়
ভূখণ্ড ও জলবায়ুর প্রভাব দেখা যায়।
৪.দক্ষিণ
ভারত: এই অঞ্চলে প্রধানত তামিলনাড়ু,
কেরালা, কর্ণাটক এবং অন্ধ্রপ্রদেশ অন্তর্ভুক্ত। এই অঞ্চলের কিছু প্রধান আদিবাসী গোষ্ঠী
হলো:
তামিলনাড়ু: তোডা, কোটা, ইরুলা, বাডাগা, কুরুম্বা, মালয়ালি ইত্যাদি।
কেরালা: পানিয়ান, ইরুলা, কাদার, কুরুম্বা, মুথুভান ইত্যাদি।
কর্ণাটক: গোণ্ড, ভিল, ইরুলিগা, কোরাগা, ইয়েরাভা, সোলিগা ইত্যাদি।
আন্ধ্রপ্রদেশ: চেনচু, কোন্ডা রেড্ডি, সাভারা, ইয়েনাডি ইত্যাদি।
এই অঞ্চলের আদিবাসীদের সংস্কৃতিতে দ্রাবিড়
সংস্কৃতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
৫.দ্বীপাঞ্চল: আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং লাক্ষাদ্বীপের আদিবাসী
গোষ্ঠীগুলি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ: জারোয়া, ওঙ্গে, সেন্টিনেলিজ, গ্রেট আন্দামানিজ, নিকোবরিজ,
শম্পেন ইত্যাদি। এদের জীবনযাপন পদ্ধতি মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
লাক্ষাদ্বীপ: এখানে মূলত মালয়ালি সংস্কৃতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আদিবাসী
গোষ্ঠী দেখা যায়।
এইভাবে, ভৌগোলিক বন্টনের ভিত্তিতে ভারতের
আদিবাসী গোষ্ঠীগুলি তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং জীবনযাপন পদ্ধতির মাধ্যমে দেশের
বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেণ্টার
তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গরে তুলব আমরা,এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
6295916282; 7076398606
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।