প্রশ্নঃ প্রাচীন প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো।
************************************
§ প্রাচীন প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্যঃ
সুদূর অতীত থেকে শুরু করে ইতিহাসের লিখিত উপাদানের প্রাপ্তি কালের পূর্ব পর্যন্ত
সময়কালকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয়। মানুষ প্রথম থেকে বিভিন্ন ধরণের পাথরের হাতিয়ার
ব্যবহার করে খাদ্যের সংস্থান করত। তাই এই যুগকে প্রস্তর যুগ বলা হয়। বিভিন্ন প্রত্নতত্ত্ববিদগণ
পাথরে নির্মিত হাতিয়ারের ক্রমোন্নতি লক্ষ্য করে প্রস্তর যুগ কে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন
যথা - (১) প্রাচীন প্রস্তর যুগ (২) মধ্য প্রস্তর যুগ ও (৩) নব্য প্রস্তর যুগ।
§ সময়কালঃ
প্রাচীন প্রস্তর যুগের শুরু হয় আনুমানিক
২,৫০,০০০ বছর আগে এবং শেষ হয় ১০,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে।
§ হাতিয়ারঃ
এ
যুগের মানুষ বিভিন্ন ধরনের পাথর ও হাড়ের তৈরি হাতিয়ার ব্যবহার করত এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র
গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস করত। দক্ষিণ আফ্রিকার অস্ট্রালোপিথেকাস নামক মানব গোষ্ঠী সর্বপ্রথম
পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করতে শুরু করে। এই যুগের মানুষ প্রকৃতি থেকে যে আকারের পাথর
পেত , কোন আকার গত পরিবর্তন না করে সেটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো। তবে কোন কোন
ক্ষেত্রে পাথর ভেঙে ধারালো ও তীক্ষ্ণ করার চেষ্টা করত বলেও মনে করা হয়। তারা একই হাতিয়ার
দিয়ে মাংস কাটা , কাঠ কাটা , শিকার করা প্রভৃতি বিভিন্ন কাজ করতো। প্রথম দিকে এই সাধারণ
হাতিয়ার '' হাত কুঠার '' নামে পরিচিত। ক্রমে তারা পাথরের বল্লম , ছুরি , ছুঁচ , হারপুন
প্রভৃতি হাতিয়ার তৈরি করতে শুরু করে।এ যুগের হাতিয়ার হত অমসৃণ এবং বৃহদাকার। এ যুগের
শেষ দিকে মানুষ তির-ধনুক আবিষ্কার করে।
§ জীবিকাঃ
পশু
শিকার করে পশুর মাংস সংগ্রহ করাই ছিল প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষের প্রধান জীবিকা।
প্রথমদিকে ছোট আকারের প্রাণী শিকার করলেও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তারা দলবদ্ধ
হয়ে ম্যামথ , বাইসন , বলগা হরিণ প্রভৃতি বড়
পশুশিকারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। এছাড়া এ যুগের মানুষ বন জঙ্গলে ঘুরে গাছের ফল সংগ্রহ
করত , পাখির ডিম সংগ্রহ করত , মাছ ধরত - ইত্যাদি। আগুনের ব্যবহার জানতো না বলে তারা
কাঁচা মাংস খেত।
§ বাসস্থানঃ
আদিম
মানুষ প্রাচীন প্রস্তর যুগের প্রথম দিকে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করত। পরবর্তীকালে তারা
গুহার ভেতরে বা পাহাড়ের ঝুলন্ত পাথর এর নিচে বসবাস করত। আরো পরবর্তীকালে তারা গাছের
ডালপালা , লতাপাতা , পশুর চামড়া প্রভৃতি দিয়ে তাদের আস্তানা তৈরি করত। তারা গাছের
ছাল, চামড়া ধীরে ধীরে পরিধান করতে শেখে।
§ সমাজজীবন ও সামাজিক কাঠামোঃ
প্রাচীন
প্রস্তর যুগ থেকেই মানুষ দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে শুরু করে। দলবদ্ধভাবে বসবাস ও জীবিকা
নির্বাহের ফলে আদিম মানুষের মধ্যে সামাজিক ধারণা গড়ে উঠেছিল। কেউ কেউ মনে করেন যে
, এই যুগে আদিম মানুষের সমাজে পরিবারও গড়ে উঠেছিল।
§ মাতৃতান্ত্রিক সমাজঃ
এই
যুগের সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক। পরিবার ও সমাজ জীবনে পুরুষদের তুলনায় নারীদের প্রাধান্য
বেশি ছিল। নারীদের এই প্রাধান্য অন্তত নব্য প্রস্তর যুগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
§ অস্তিত্বের নিদর্শনঃ
আফ্রিকার
গ্রে রিফট উপত্যকায় , ইউরোপের কিছু অঞ্চলে , ভারতের পাঞ্জাবের সোয়ান নদী উপত্যকা ও
মাদ্রাজে প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষের অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। আশ্চর্যের বিষয়
যে , এই যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মানুষগুলি আলাদা হলেও তাদের তৈরি হাতিয়ার গুলিতে
আশ্চর্য মিল পাওয়া যায়।
§ গুহাচিত্রঃ
আদিম
মানুষ পশুর হাড় ও শিঙ দিয়ে গুহার দেওয়ালে ছবি আঁকতে শিখেছিল। তাদের এই গুহা চিত্রের
প্রধান বিষয় ছিল শিকার। ফ্রান্স , স্পেন ,
ইতালি প্রভৃতি দেশে এ ধরনের গুহাচিত্রের নিদর্শন মিলেছে। গুহাচিত্রগুলির মধ্যে
শিকারের দৃশ্য ছাড়াও ম্যামথের শুঁড় , হরিণের আঁকাবাঁকা শিঙ প্রভৃতি বিষয়ে অধিক প্রাধান্য
পেত। গুহার অনেকটা ভিতরের দেয়ালের গায়ে গুহাচিত্র গুলি আঁকা হত। গুহার ভিতরে ছবি
আঁকার কারণ হিসাবে ঐতিহাসিকেরা তাদের অলৌকিকতায় বিশ্বাসকে দায়ী করেছেন। পন্ডিতদের
মতে, অদৃশ্য শক্তিকে তুষ্ট করে শিকারে সফল হওয়ার জন্যই তারা এভাবে ছবি আঁকতো।
§ ভাষার উদ্ভবঃ
ঐতিহাসিকদের
অনুমান পুরাতন প্রস্তর যুগেই ভাষার উদ্ভব ঘটেছিল। ক্ল্যানগুলির নিজস্ব ভাষা ছিল। একাধিক
ক্ল্যানের আলাদা আলাদা ভাষার দরুন ভাষায় বৈচিত্র্য এসেছিল। দলবদ্ধভাবে শিকার যাত্রার
সময় বা মনের বিভিন্ন ভাব প্রকাশের সময় বিভিন্ন সাংকেতিক শব্দের ব্যবহার থেকেই আদিম
ভাষার উদ্ভব ঘটে বলা চলে।
§ আগুনের ব্যবহারঃ
পুরাতন
পাথরের যুগে মানুষ নিজেরা কৃত্রিমভাবে আগুন জ্বালাতে শেখেনি। কিন্তু প্রাকৃতিক ভাবে
বা দুর্বিপাকের কারণে জ্বলে ওঠা আগুনকে অনেকদিন ধরে জ্বালিয়ে রাখতে শিখিয়েছিল। এই
আগুনকে গুহামুখে জ্বালিয়ে রেখে তারা হিংস্র জন্তু জানোয়ারদের তাড়ানোর ব্যবস্থা করতো।
এছাড়া আগুন জ্বালিয়ে তারা তুষার যুগের শীতের তীব্রতা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পেরেছিল।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই
আমাদের প্রতিশ্রুতি
6295916282; 7076398606
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।