নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা আলোচনা করো

Nil's Niva
0

 

প্রশ্নঃ নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা আলোচনা করো।

আমাদের সমাজের সর্বক্ষেত্রে নারীদের পদচারণায় মুখরিত। নারীরা হচ্ছে আমাদের সমাজকে সুন্দরভাবে বিনির্মাণের হাতিয়ার। একজন নারী কখনো মা, আবার বোন, স্ত্রী, মেয়েসহ নানা সামাজিক অত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ থাকেন। নারীরা সমাজকে উপহার দেন আগামী বিনির্মাণের হাতিয়ার। একজন নারী তার সন্তানকে সমাজের সর্বত্র শেখরে পৌছে দিতে মায়ের ভূমিকা পালন করেন। যে তার সন্তান দেশের সেরা সন্তান হয়ে দেশের ও তার পরিবারের সম্মান বৃদ্ধি করতে পারে। নারীরা আমাদের সমাজের সকল স্থরে সাহসী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

অসংখ্য গুণী নারী আমাদের সমাজকে উপহার দিয়েছেন সুখী-সমৃদ্ধশীল ভারত গড়ার হাজার সন্তানকে। আর আজ তারা দেশে ও দেশের বাহিরে সুনামের সহিত কাজ করে যাচ্ছেন। গণতন্ত্রের সংগ্রাম, সামাজিক সংস্কার, স্বাধিকারের আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের অনন্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন আমাদের নারীরা। নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ সম্পর্ক, নারীর সমমর্যাদা, গণতান্ত্রিক, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নানা প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নিরন্তর কাজ করে চলেছে আমাদের নারীরা। দেশের আর্থসামাজিক সমস্যা সমাধানের দাবি, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও নারীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সনদ, নারী উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়নের দাবিতে সর্বদা সচেষ্ট আমাদের নারী।

নারীদের কর্মপ্রচেষ্টা এবং নারীর জন্য নিরাপদ ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের খবর শুরু থেকে এ দেশের গণমাধ্যম আন্তরিকতার সঙ্গে তুলে ধরে আসছে। ভুল-ত্রুটি দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরে শুধু নয়, সঠিক দিকনির্দেশনার কাজটিও দায়িত্বের সঙ্গে করে গেছে গণমাধ্যম। ভারতবর্ষের নারী আন্দোলনের যা কিছু অর্জন, তার অনেকটাই গণমাধ্যমে কর্মরত নারী-পুরুষ সংবাদকর্মীদের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য সম্ভব হয়েছে। তারা সহযোদ্ধার ভূমিকাই পালন করে এসেছেন। মনে রাখা প্রয়োজন, শুধু এ দেশের নারী আন্দোলনকে শক্তিশালী করা নয়, নির্যাতনের শিকার নারীদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায়ও গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে অগ্রগতির যে জায়গায় যাওয়ার স্বপ্ন আমরা দেখছি, সেখানে অধিক হারে ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নারীদের এগিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি মাত্র। অন্যান্য পেশার মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশা বলতে আমরা নারী সাংবাদিকদেরও বুঝি। সব ক্ষেত্রেই ক্রমাগত পিতৃতন্ত্রকে মোকাবেলা করে তারা এগিয়ে চলছে। যে সমাজে পিতৃতন্ত্র নারীকে পেছন থেকে টানছে সেখানে আজকের ভারতবর্ষে গ্রামে-গঞ্জে নারীরা নতুন একটি পরিচয়, নতুন একটি সত্তা নিয়ে দাঁড়াচ্ছে, যার অন্যতম ক্ষেত্রটি হচ্ছে সাংবাদিকতা। স্বাধীনতার চার দশক ধরে ভারতবর্ষের শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারী সাংবাদিকরা সাহসের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

সংখ্যায় কম হলেও সে সময় নারী সাংবাদিকরা দক্ষতা ও সাহসের সঙ্গে কাজ করে গেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এ ক্ষেত্রে নারীর অগ্রসরতা আজ প্রবলভাবে দৃশ্যমান। নারী সাংবাদিকদের এ পরিসর আরও প্রশস্ত করা জরুরি এবং তাদের জন্য নিরাপদ একটি কর্মস্থল তৈরি করা অপরিহার্য, যেখানে দাঁড়িয়ে তারা সাহসের সঙ্গে সমাজ ও রাষ্ট্র উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। সমাজের অন্যায্যতা-বৈষম্য গণমাধ্যমে তুলে ধরা নারী সাংবাদিকরা কর্মক্ষেত্রে প্রতিদিন কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন তাও আমরা আন্তরিকভাবে জানতে চেষ্টা করি। ১৯৯৫ সালে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বিশ্বনারী সম্মেলনে গৃহীত বেইজিং কর্মপরিকল্পনায় নারীর ক্ষমতায়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে গণমাধ্যম ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। গণমাধ্যম যে গতিতে প্রসারিত হচ্ছে, যে দ্রুততায় প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে শক্তিময়তার পরিচয় দিচ্ছে, তা দেখে মনে হয় সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতা ও মানবিক সংস্কৃতি প্রসারের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রতিদিনই বাড়ছে। কিন্তু বাস্তবতা হল গণমাধ্যমের কাছে আমাদের যে প্রত্যাশা তার অনেকটাই পূরণ হয় না কাঠামোর মধ্যেই নারীবান্ধব সংস্কৃতির অনুপস্থিতির কারণে। তারপরও গণমাধ্যমের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা সমাজের সব অসঙ্গতি, নারী বিদ্বেষ ও অন্যায্যতার বিরুদ্ধে দক্ষ হাতে তারা জনমত তৈরি করুক।

ভারতে  গণমাধ্যম পেশায় নারীর উপস্থিতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ এখনও প্রান্তিক পর্যায়ে রয়েছে। পেশার বৈষম্য, অংশগ্রহণে বাধা, মানসিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রবণতা ও অবদমনের মাত্রা আগের চেয়ে হ্রাস পেলেও যথেষ্ট মাত্রায় কমেনি। ভারত সরকার নারী সমাজের স্বার্থে বেইজিং ঘোষণা, সিডওসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি ও আইন প্রণয়নসহ বেশ কয়েকটি ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং বাস্তবায়নের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যদিও এখন পর্যন্ত নারী সাংবাদিকদের নিয়োগপত্র না দেয়া, বিনা নোটিশে চাকরি চলে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে চলেছে।

নারী সাংবাদিকদের জন্য বর্তমান এবং আগামী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার একটি যথার্থ কর্মসহায়ক নারীবান্ধব কর্মপরিকল্পনা তৈরি হলে কর্মক্ষেত্রে তাদের অবস্থান সুদৃঢ়, ব্যাপক ও বিস্তৃত হবে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার রিপোর্টিংয়ের যে জাগরণ তা অভূতপূর্ব বলতেই হয়। এ ছাড়া সাহসী নানা ধরনের রিপোর্টিং নারী সাংবাদিকদের প্রতি একটি আস্থা সৃষ্টি করেছে। পুরুষতান্ত্রিক বা পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে বের হয়ে এসে গণমাধ্যমকে নারী সহায়ক করার উদ্দেশ্যে নারী উন্নয়ন, নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার

তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি

অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
bookstore