প্রশ্নঃভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারন কী ছিল?এই আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা করো।
v
ভারত ছাড়ো আন্দোলনঃ
১৯৪২খ্রীষ্টাব্দের ভারত ছাড়ো বা আগষ্ট আন্দোলন জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।গান্ধীজি পরিচালিত সর্বভারতীয় গণ আন্দোলনগুলির মধ্যে এই আন্দোলন ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।এই আন্দোলন সংঘঠিত হওয়ার পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারন ছিল –
· ক্রিপস্ মিশনের ব্যার্থতাঃ
ক্রিপস্ মিশন ব্যার্থ হলে সারা ভারত ক্ষোভে ফেটে পরে।ভারতবাসী উপলব্ধি করে যে ইংরেজ সরকার কোনোভাবেই এবং কোনো অবস্থাতেই ভারতবাসির সঙ্গে সমঝোতায় এসে তাদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে রাজি নয়।তাই তারা বুঝতে পারে সংগ্রাম ছাড়া ইংরেজদের কাছ থেকে কিছু আদায় করা সম্ভব নয়।
· ভয়াবহ মূল্যবৃদ্ধিঃ
যুদ্ধকালীন করভার,খাদ্য ও নিত্যপ্রয়জনীয় দ্রব্যাদির তীব্র সংকট এবং ভয়াবহ মূল্যবৃদ্ধি ভারতবাসিকে প্রবল সংকটের মুখে ঠেলে দেয়।কাপড়,কেরোসিন,ঔষুধপত্র প্রভৃতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আকাশছোঁয়া হয়ে পড়ে।ফলে দেশের মানুষ ইংরেজ শাসনের অবসান কামনা করে।
· দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয়দের প্রতি অবহেলাঃ
দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় ব্রিটিশদের শাসনাধীনে ব্রহ্মদেশে এবং মালয়ে বহু ভারতীয় বসবাস করত।জাপানের হাতে ব্রিটিশ পরাজয়ের পর ব্রিটিশরা শ্বেতাঙ্গ অধিবাসীদের জাহাজে করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে গেলেও কৃস্নকায় ভারতীয়দের সম্পূর্ণ ভাগ্যের উপর ছেরে দেওয়া হয়। ইংরেজদের এই বিশ্বাসঘাতকতায় ভারতীয়রা রেগে যায়।
· সেনাদলের অত্যাচারঃ
যুদ্ধ উপলক্ষে ভারতে বিপুল সংখ্যক ইংরেজ , মার্কিন ও অস্ট্রেলিয় সৈন্যরা ভারতে উপস্থিত হয়। এই সমস্ত সৈন্যরা ভারতীয় নারীদের প্রতি অশলীন আচরণ করেন , ফলে ভারতবাসী ক্ষুদ্ধ হয়।
· জাপানি আক্রমনের সম্ভাবনাঃ
জাপানি আক্রমনের পরিপেক্ষিতে মানুষের মনে এ ধারণা জন্মায় যে ভারতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যের পতন অনিবার্য এবং এই অবস্থায় আর ------ হয়ে বসে থাকা উচিত নয়। তৎকালীন কংগ্রেস সেনাপতি মৌলানা আজাদ লিখেছেন যে , “জাপানি আক্রমনের সম্ভাবনা গান্ধিজিকে গণ সংগ্রামের দিকে ঠেলে দেয়”।
v
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের গুরুত্বঃ
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের গুরুত্ব গুলি হল –
v
প্রথমতঃ
এই আন্দোলন প্রমান করে যে জনমনে কংগ্রেসের প্রভাব ব্যাপক ও সর্বাধিক।
v
দ্বিতীয়তঃ
এই আন্দোলন দ্বারা প্রমানিত হয় যে স্বাধীনতার জন্য জনসাধারন প্রস্তুত এবং তা অর্জনের জন্য জনসাধারন সর্বপ্রকার অত্যাচার চরম লাঞ্ছনা এমনকি মৃত্যুবরনেও প্রস্তুত।
v
তৃতীয়তঃ
মুসলিমলিগ এই আন্দলনে যোগ না দিলেও সাম্প্রদায়িক সম্পৃত্তি ও হিন্দু-মুসলিম ঐক্য ছিল এই আন্দোলনের বিশাল সম্পদ। এই সময় কোনো সাম্প্রদায়িক বিরোধ বাধেনি।
v
চতুর্থতঃ
মুসলিম লিগের বিরোধিতার সত্ত্বেও উত্তর প্রদেশ , বিহার , চট্টগ্রাম , প্রভৃতি বিভিন্ন স্থানের বহু মুসলমান এই আন্দোলনের সক্রীও ভুমিকা গ্রহন করে।
v
পঞ্চমতঃ
প্রকৃত অর্থে এই আন্দোলন ছিল গণ বিপ্লব। জাতীয় আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে শ্রমিক-কৃষক সামিল হলেও আগস্ট আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহন ছিল ব্যপক।
পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু ১৮৫৭ খ্রীঃ মহাবিদ্রোহের সঙ্গে এই আন্দোলনের তুলনা করে বলেছেন – “নেতা নেই , সংগঠন নেই , উদ্যোগ-আয়োজন নেই , কোনো মন্ত্রালয় নেই , অথছ একটি অসহায় জাতি স্বতঃস্ফর্ত
ভাবে কর্ম প্রচেষ্টার আর কোন পন্থা না পেয়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠল – এই দৃশ্য প্রকৃত বিস্ময়ের ব্যপার।
জ্ঞ্যানজ্যোতি কোচিং সেন্টার
তোমাদের উজ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব আমরা, এটাই আমাদের প্রতিশ্রুতি
অনলাইনে কোচিং নিতে হলে এবং বিভিন্ন নোট নিতে হলে এই নাম্বারে কল করুন।